বর্তমানে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে অবস্থান করছে। ফলে এসব অঞ্চলের ভোক্তারা ভোগ্যপণ্যের ব্যয় কমিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্রয়াদেশ কমিয়ে এনেছে। তবে তারা সোর্সিং কৌশল পরিবর্তন করেছেন। একসঙ্গে বড় ক্রয়াদেশ না দিয়ে ছোট ছোট স্লটে দিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির সভাপতি মো. ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে পশ্চিমা ক্রেতাদেশগুলোর ভোক্তারা পোশাকে ব্যয় কমিয়ে এনেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসব দেশে পোশাকের চাহিদাও কমে আসছে। এতে করে তারা মূল্যছাড়ে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছেন। কভিড-১৯ পরিস্থিতির পর পরই ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিল্পেও।’
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বাণিজ্যনীতির পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি থাকলে আমাদের বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। অন্যদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার ও ডিউ ডিলিজেন্স প্রটোকল (অর্থনৈতিক, আইনি ও আর্থিক পরিস্থিতি) গ্রহণ করছে। এ জায়গায় আমাদের ক্ষমতা তৈরিতে অনেক কাজ করতে হবে। অন্যদিকে এ বিষয়গুলো যেন ব্যবহারকারীদের মাঝে কোনো রকম অস্বস্তি তৈরি না করে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের জোরাল ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে। রফতানিতে পোশাক পণ্যের সংখ্যা কমেছে। তবে উচ্চমূল্যের পণ্যের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু রফতানিতে সংখ্যাগত ঋণাত্মক অবস্থান আমাদের ভাবাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এটি স্বাভাবিক করতে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের পাঁচ-ছয়টি পণ্যই ৮০ শতাংশ রফতানি হয়। এক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।’
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী সময়ে রফতানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর যেন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত এসব সুবিধা বহাল রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদের ছয় বছরের কথা বলেছেন, অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত। আমরা এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলমান রেখেছি।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা নানাভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ইংরেজি বর্ণে মেড ইন বাংলাদেশের পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালায় বাংলাদেশে তৈরি লিখে দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সব বাজারের ক্ষেত্রেই উৎপাদিত পোশাকের লেভেলে এটি লেখা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পোশাক খাতে প্রায় পাঁচ লাখ টনের মতো ঝুট তৈরি হয়। এর একটি অংশ বাংলাদেশ রফতানি করে। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। কিন্তু আমরা যদি এ পণ্যগুলোকে রিসাইক্লিং করে পণ্য উৎপাদন করি, তাহলে এখান থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। তাই আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সব প্রক্রিয়ায় পণ্য ও সেবাকে শুল্ক ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়। তাহলে এ খাতে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।’
কিউআর কোড লেবেলিং চালুর উদ্যোগের কথা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘পণ্যের স্বচ্ছতা ও নকল পণ্য ঠেকাতে কনভেনশনাল লেবেলিংয়ের পরিবর্তে কিউআর কোড পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এজন্য আমরা মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। এ ডিজিটাল লেবেলিংয়ের ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমবে ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমে আসবে।’