অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) উপাচার্য পদে। সাম্প্রতিক এনএসইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্য হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমসহ দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ সুজন
মাত্র তিন
দশকেই নর্থ
সাউথ ইউনিভার্সিটি তার চেয়ে
দ্বিগুণ-তিন
গুণ বয়সী
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলেছে। এক্ষেত্রে কোন
বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে বলে
মনে করেন...
যথাযথ পরিকল্পনা
গ্রহণ, কৌশল
নির্ধারণ ও
তার সফল
বাস্তবায়নের কারণেই
নর্থ সাউথ
বিশ্ববিদ্যালয় আজ
শীর্ষে অবস্থান
করছে। আমাদের
বেশকিছু স্বকীয়
নীতি রয়েছে।
এনএসইউতে প্রভাষক
পদেও বিদেশী
মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের
মাস্টার্স ডিগ্রি
ছাড়া কাউকে
নিয়োগ দেয়া
হয় না।
পিএইচডি ছাড়া
সহকারী অধ্যাপক
ও তদূর্ধ্ব
পদগুলোয় শিক্ষক
পদে নিয়োগের
সুযোগ নেই।
ভর্তি পরীক্ষার
মেধা তালিকার
বাইরে একজন
শিক্ষার্থীকেও ভর্তি
নেয়া হয়
না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীই
হলো একটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম
স্টেকহোল্ডার। উভয়ের
ইনটেকের ক্ষেত্রেই
একটি আদর্শ
মানদণ্ড অনুসরণ
করা হচ্ছে।
আমি মনে
করি, নর্থ
সাউথের সফলতার
ক্ষেত্রে এ
দুটি নীতি
অনেক বেশি
অবদান রেখেছে।
গত তিন
দশকে এনএসইউ থেকে কয়েক
হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হয়েছে। কর্মবাজারে তারা
কেমন করছে?
নর্থ সাউথে
প্রতিষ্ঠার পর
থেকে এ
পর্যন্ত প্রায়
৪০ হাজারের
কাছাকাছি গ্র্যাজুয়েট
তৈরি হয়েছে।
তাদের সিংহভাগই
দেশীয় ও
বৈশ্বিক কর্মবাজারে
সফলতা ও
সুনামের সঙ্গে
কাজ করছে।
ইউরোপ, আমেরিকা,
অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের
শিক্ষার্থীরা নিয়মিত
চাকরির সুযোগ
পাচ্ছে এবং
সেখানে আমাদের
অ্যালামনাই চার্টারও
রয়েছে। এনএসইউতে
কারিকুলাম ও
সিলেবাস প্রণয়নের
সময় চাকরির
বাজারের বিষয়গুলো
অগ্রাধিকার দেয়া
হয়। এছাড়া
নিয়মিত শিক্ষকদের
বাইরে খাতভিত্তিক
প্রফেশনালদের দিয়ে
বিভিন্ন কোর্স
পড়ানো হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের
পড়ালেখা অবস্থায়
ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে
হাতে-কলমে
কাজের সুযোগ
দেয়া হয়।
সবমিলে আমাদের
শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রির
জন্য প্রস্তুত
হয়েই বের
হয়। সরাসরি
কর্মসংস্থানভিত্তিক কিছু
উদ্যোগও রয়েছে।
যেমন আমাদের
জাপান সরকারের
সঙ্গে চুক্তি
রয়েছে। তাদের
প্রতি বছর
১৬০ জন
প্রকৌশলী সরবরাহ
করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষের পাঠদানের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের
সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত
হওয়াটা জরুরি। এক্ষেত্রে আপনারা কী ধরনের
উদ্যোগ নিয়েছেন?
বর্তমানে নর্থ
সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
২২টি ক্লাব
রয়েছে। এর
মধ্যে ছয়টি
এক্সট্রা কারিকুলার
যেমন নাচ,
গান ইত্যাদি
আর বাকিগুলো
কো-কারিকুলার।
ফার্মাসিস্ট ক্লাব
ও ইয়ং
ইকোনমিক ক্লাবের
মতো কিছু
প্লাটফর্ম রয়েছে,
যেগুলো সরাসরি
ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে
কাজ করে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
নিয়মিত যোগাযোগ
থাকার বিষয়টি
তাদের জানার
পরিধি, আত্মবিশ্বাস,
দৃষ্টিভঙ্গিকে অনেক
প্রসারিত করে।
সর্বোপরি আমাদের
ক্লাবগুলো খুবই
সক্রিয় এবং
এগুলো ইন্ডাস্ট্রি
ও শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে সংযোগ
স্থাপনের ক্ষেত্রে
সেতুবন্ধ হিসেবে
কাজ করে।
নর্থ সাউথ
বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বড়লোকদের’ প্রতিষ্ঠান বলা
হয়ে থাকে।
বাস্তব চিত্র
কি এমনই?
না। এটা
একটি ভুল
ধারণা। আমাদের
উন্নত অবকাঠামোর
কারণে অনেকে
মনে করতে
পারেন, এখানে
পড়াতে হয়তো
অনেক বেশি
অর্থ ব্যয়
হয়। যদিও
আমাদের এখানে
রিকশাওয়ালা, গাড়িচালকের
মতো নিম্ন
আয়ের মানুষের
ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা
করছে। আমরা
ভর্তি করি
যোগ্যতা দেখে।
কার বাবার
কত টাকা
তা জিজ্ঞাসা
করে নয়।
ভর্তি পরীক্ষায়
সর্বোচ্চ স্থান
পাওয়া ১০০
জনকে প্রত্যেক
সেমিস্টারে ওয়েভার
দেয়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
হলে কোনো
টাকা লাগবে
না, সম্পূর্ণ
ফ্রি। এখন
২৫০ জনের
মতো মুক্তিযোদ্ধা
সন্তান শিক্ষার্থী।
এছাড়া প্রতি
বছর ২০
কোটি টাকার
মতো শিক্ষা
বৃত্তি দিই।
কভিডের সময়
নিয়মিত বৃত্তির
বাইরে শিক্ষার্থীদের
৯০ কোটি
টাকা মওফুক
করে দেয়া
হয়েছে। আমাদের
এখানে টাকা-পয়সার
জন্য লেখাপড়া
বন্ধ হয়েছে
এমন উদাহরণ
নেই। বাবা
মারা গেছে,
চাকরি হারিয়েছে,
ফ্যামিলিতে ডিভোর্স
হয়েছে ইত্যাদি
যেকোনো সমস্যায়
তারা আমাদের
কাছে আসে,
আমরা একটা
সমাধান বের
করি। অনেকে
আছে কয়েক
সেমিস্টার টাকা
দিতে পারেনি।
গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট
করতে পারছে
না, এমন
অনেককেই বোর্ড
মাফ করে
দিয়েছে। বোর্ড
এ ব্যাপারে
খুবই উদার।
আপনাদের এখানে
বিদেশী অনেক
শিক্ষক পড়াচ্ছেন। দেশের বাইরে
থেকে কেমন
শিক্ষার্থী পাচ্ছেন?
শিক্ষা ও
গবেষণার উন্নত
সুবিধা, মানসম্মত
শিক্ষক ও
বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে
ভালো অবস্থানের
কারণে বিদেশীদের
কাছে নর্থ
সাউথের ভাবমূর্তি
বেশ ভালো।
এজন্য বিদেশ
থেকে অনেকেই
আাামদের এখানে
পড়তে আসতে
চায়। যদিও
ডরমিটরি সুবিধা
না থাকায়
আমরা অনেককে
আসার সুযোগ
করে দিতে
পারছি না।
তবে ডরমিটরি
না থাকা
সত্ত্বেও নেপাল,
ভুটান, নাইজেরিয়া
ও সোমালিয়া
থেকে শিক্ষার্থীরা
নিজেদের ব্যবস্থায়
পড়তে আসে।
তার পরও
দু-তিনশ
বিদেশী শিক্ষার্থী
এখন পড়ছে।
নর্থ সাউথের
নতুন ক্যাম্পাসে
ডরমিটরি গড়ে
তোলার পরিকল্পনা
রয়েছে। আশা
করছি, তখন
আমরা অনেক
বেশি সংখ্যক
বিদেশী শিক্ষার্থীকে
ভর্তির সুযোগ
করে দিতে
পারব। বিদেশী
ছাড়াও দেশের
বিভিন্ন অঞ্চল
থেকে আসা
শিক্ষার্থী বিশেষ
করে ছাত্রীদের
জন্য নিরাপদ
আবাসন সুবিধা
নিশ্চিত করতে
ডরমিটরি নির্মাণের
পরিকল্পনা রয়েছে।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণা। এক্ষেত্রে আপনাদের নীতিগত অবস্থান কী?
আমি মনে
করি, গবেষণা
ছাড়া কোনো
বিশ্ববিদ্যালয় হতে
পারে না।
শুরুর দিকে
নর্থ সাউথ
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায়
খুব বেশি
মনোযোগ দিতে
পারেনি, এটা
সত্য। তবে
গত কয়েক
বছরে এ
অবস্থায় আমূল
পরিবর্তন আনা
হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
বিভিন্নভাবে গবেষণা
বৃত্তি ও
প্রণোদনা দেয়া
হচ্ছে। এমনকি
এখন আর
এনএসইউর গবেষণা
বরাদ্দ নিজেদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ নেই।
নর্থ সাউথের
গবেষণা বরাদ্দ
সবার জন্য
উন্মুক্ত। একটিই
শর্ত, শুধু
আমাদের একজন
শিক্ষক বা
গবেষককে গবেষণা
দলে রাখতে
হবে। এখন
প্রতি বছর
গড়ে সাড়ে
ছয়শর বেশি
গবেষণা হচ্ছে।
আমার বিশ্বাস,
এমফিল ও
পিএইচডি ডিগ্রি
পরিচালনার অনুমোদন
পেলে এ
সংখ্যা বহুগুণ
বৃদ্ধি পাবে।
এজন্য আমি
মনে করি,
গড়পড়তায় সব
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে
একই কাতারে
না ফেলে
যোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে
পিএইচডি প্রোগ্রাম
পরিচালনের অনুমোদন
দেয়ার সময়
এসেছে।
গত তিন
দশকে আপনাদের অর্জন অনেক।
আগামী এক
দশক পর
এনএসইউকে কোথায়
দেখতে চান?
আমার ধারণা,
যদি একই
মাত্রায় এগিয়ে
যায় তাহলে
আগামী ১০
বছরে এশিয়ায়
সেরা ৫০
বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়
স্থান পাবে
এনএসইউ। আর
কিউএস র্যাংকিংয়ে
আমরা উপমহাদেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে
ফেলতে পারব।
তবে সেক্ষেত্রে
আমাদের বর্তমান
কৌশলটাকে ধরে
রাখতে হবে।
অনুলিখন: আনিসুর রহমান