‘কমিটেড টু এক্সিলেন্স’ স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)। একটি বিভাগ নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভাগ রয়েছে নয়টি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায় অনেক পদে ৩১ বছরেরও বেশি সময় কাজ করছেন
যে লক্ষ্য নিয়ে ইউএপি
যাত্রা শুরু
করেছিল তার
কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? এ
অগ্রযাত্রায় কোন
বিষয়গুলো মুখ্য
ভূমিকা রেখেছে?
বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স
২৬ বছর
পেরিয়েছে। শুরুটা
একেবারেই ছোট্ট
পরিসরে। বাংলাদেশে
যে পরিমাণ
স্নাতক তৈরির
প্রয়োজন ছিল
তখন তা
অপ্রতুল ছিল।
উল্লেখযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীকে
বিকল্প পদ্ধতিতে
যেতে হতো।
মূলত এ
লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টি
গড়ে তোলা
হয়। পরে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
নিয়মাবলি অনুসরণ
করে মাত্র
দুটো বিভাগ
নিয়ে যাত্রা
শুরু হয়।
সমাজে ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ার এবং
বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন
শ্রেণী-পেশার
মানুষ দরকার।
সে বিষয়টি
মাথায় রেখেই
আমাদের বিভাগগুলো
গড়ে উঠেছে।
বর্তমানে নয়টি
বিভাগের মধ্যে
আটটি বিভাগ
থেকে ডিগ্রি
দেয়া হচ্ছে।
যার মধ্যে
আর্কিটেকচার, ইলেকট্রিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল,
ফার্মেসি, বিজনেস,
ল ও
ইংরেজি অন্যতম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে
আমরা সন্তুষ্ট।
কিন্তু এ
সন্তুষ্টির মাত্রা
আরো বাড়াতে
চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের
পরিসর বাড়াতে
চাই।
কর্মক্ষেত্রে এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা কেমন?
আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের
সুনাম দিন
দিন বাড়ছেই।
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য
দুটি মেগা
প্রজেক্ট হলো
পদ্ম সেতু
ও মেট্রোরেল।
আমাদের শিক্ষার্থীদের
বড় একটি
অংশ সেখানে
নিয়োজিত আছে।
যেহেতু তারা
বিদেশীদের সঙ্গে
কাজ করছে
সে হিসেবে
এটা বলা
যায়, শিক্ষার্থীদের
মান নিশ্চয়ই
ভালো। তার
পরও আমরা
আমাদের শিক্ষার্থীদের
কম্পিটিটিভ নেচার
দিয়ে গড়ে
তুলতে চাই।
যেন প্রতিযোগিতায়
তারা ভালো
করে। উদ্যোক্তা
তৈরির ক্ষেত্রেও
কাজ করছি।
সম্প্রতি আমরা
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের
সঙ্গে বসেছিলাম।
তাদের কাছে
জানতে চেয়েছিলাম,
‘আপনারা
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে
কেন আপনাদের
ছেলে-মেয়েদের
পাঠিয়েছেন। আপনারা
আমাদের থেকে
কী চান?’
তারা বলেছেন,
‘আমরা
জানতে পেরেছি,
আপনাদের এখানে
পড়াশোনার সঙ্গে
সঙ্গে আরো
কিছু বিষয়
যেমন কেয়ারিংটা
ভালো। অর্থাৎ
ছাত্র-শিক্ষক
সম্পর্ক ভালো
হয়। পড়াশোনা
বলতে শুধু
তো পড়াশোনা
না। বিভিন্ন
সহশিক্ষা কার্যক্রমে
এখানকার শিক্ষার্থীরা
শিক্ষকদের থেকে
উৎসাহ-উদ্দীপনা
পায়।’ এভাবেই
বিষয়গুলো আমরা
দেখছি। এখনকার
যুগে আমাদের
ছাত্র-ছাত্রীদের
গড়ে তুলতে
হবে দক্ষ
করে। তার
জন্য ক্যাম্পাসকেও
স্মার্ট করে
গড়ে তুলতে
হবে। সেদিকেও
আমাদের নজর
আছে। আমাদের
শিক্ষা নিয়ে
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের
থেকেও ফিডব্যাক
নেই। তারা
ইতিবাচক ফিডব্যাক
দিচ্ছে। তারা
অনেক সময়
পরামর্শ দিচ্ছে।
কিছু সংযোজন
বিয়োজন করতে
বলছে। এভাবে
প্রতিনিয়ত আমরা
আমাদের মানোন্নয়ন
করে চলছি।
শিক্ষার্থীরা কেন
উচ্চশিক্ষার জন্য
এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেবে?
স্কিল বেজড
শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতে এ
বিশ্ববিদ্যালয়ে কী
কী সুযোগ-সুবিধা আছে?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়
বেছে নেবে
কারণ আমরা
কোয়ালিটি শিক্ষা
নিশ্চিত করেছি।
ইউজিসির আইকিউএসি
নামে একটা
সেল আছে।
আমাদের বিভাগগুলোর
মূল্যায়নে আমরা
ভেরি গুড
পেয়েছি। আবার
আমাদের আটটি
বিভাগের মধ্যে
এরই মধ্যে
তিনটি অ্যাক্রেডিটেশন
পেয়েছে। এ
অ্যাক্রেডিটেশন অর্জন
হচ্ছে আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব।
এ সনদ
বলে দিচ্ছে
আমরা যুগোপযোগী
শিক্ষা নিশ্চিত
করতে পেরেছি।
প্রতি ৪
বছর কারিকুলাম
ইউজিসিতে জমা
দিতে হচ্ছে।
প্রতিবার একই
কারিকুলাম জমা
দেয়া যাবে
না। নতুন
যে কারিকুলাম
সেটা জমা
দিতে হবে।
এজন্য প্রতিবার
কারিকুলাম আপগ্রেড
করতে হবে
এবং সেটা
যুগোপযোগী হতে
হবে। আমরা
ইংরেজিতে জোর
দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের
মূল্যায়নে প্রযুক্তির
ব্যবহার নিশ্চিত
করছি। এরই
মধ্যে বেশকিছু
সফটওয়্যার আমরা
ডেভেলপ করছি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
পরীক্ষামূলকভাবে এ
সফটওয়্যারগুলো কার্যকর
হবে বলে
জানিয়েছে। আমরা
সে বিষয়গুলো
চালু করার
চিন্তায় আছি।
আমরা বাইরের
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
ও গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
কাজ করছি।
প্রত্যেক বছর
আমরা সামার
স্কুল করি।
সেখানে দেশী-বিদেশী
শিক্ষার্থীরা পড়ে।
গত মাসে
একটি জার্মান
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে
কথা বলেছি।
তারা জানিয়েছে
১৫ জন
জার্মান শিক্ষার্থী
এসে আমাদের
সঙ্গে ওয়ার্কশপ
করবে। আমাদের
শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক
মানসম্মত করতে
এ জায়গাগুলোয়
জোর দিচ্ছি।
আমরা বিভিন্ন
ব্যবসা ও
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
যোগাযোগ করে
তাদের সঙ্গে
কোলাবরেশন করার
চেষ্টা করছি।
এতে করে
আমাদের ছাত্ররা
পড়াশোনার বাইরেও
একটা নতুন
স্বাদ পাচ্ছে।
আরেকটা আছে
এনআরবি (নন-রেসিডেন্ট
বাংলাদেশ) গবেষক।
এদের একটা
অংশ আমাদের
এখানে তাদের
অভিজ্ঞতা নিয়ে
লেকচার দিয়ে
যাচ্ছে। যা-ই
হোক, এখনকার
সময় এগুলোই
দক্ষ মানবসম্পদ
তৈরিতে ভূমিকা
রাখবে।
বিভাগগুলোর মধ্যে
কোনগুলোর চাহিদা বেশি?
আমরা বলি
হাতের পাঁচ
আঙুল সমান
না। কিন্তু
সবগুলোরই প্রয়োজন
আছে। ইউজিসি
থেকে আমাদের
সবগুলো প্রোগ্রামকেই
ভেরি গুড
বলেছে। এটা
পড়াশোনার ধরন
অনুযায়ী ইউজিসি
এ মূল্যায়ন
দিয়েছে। সব
মিলিয়ে আমাদের
ফার্মেসি, সিভিল
ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন,
বিবিএ, সিএসই,
ইংরেজি বেশ
কয়েকটি এরই
মধ্যে ভালো
করেছে এবং
ক্রমান্বয়ে উন্নতির
দিকে আছে।
প্রথম সারিতে
আছে আমাদের
চারটি বিভাগ।
আর সবচেয়ে
বড় কথা
আমাদের প্রত্যেকটা
বিভাগের মাস্টার্স
প্রোগ্রাম আছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ ও বৃত্তি ব্যবস্থা কেমন?
আমাদের মোট
বাজেটের ২-৩%
গবেষণায় ব্যবহার
করি। রিসার্চ
ডেভেলপমেন্ট সেল
খোলা হয়েছে।
গবেষণার মান
বাড়াতে গত
বছর আইসিপিসি
করেছি। এর
উদ্দেশ্য প্রোগ্রামারদের
উৎসাহিত করা।
বাংলাদেশ কম্পিউটার
কাউন্সিল ও
আইসিটি ডিভিশনের
সহায়তায় আয়োজিত
এ প্রোগ্রামে
৭০টি দেশ
থেকে অংশগ্রহণকারীরা
এসেছিল। ১৩২টি
টিমের সবাই
কোনো না
কোনো সমস্যা
সমাধান করে
দেখিয়েছে। এটা
দেখে আইসিপিসি
থেকে গবেষণার
জন্য একটা
ফান্ড দিয়েছে,
যা প্রায়
৫০ হাজার
ডলার। এছাড়া
আমরা গবেষণার
জন্য বেশকিছু
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে
যৌথ প্রোগ্রাম
করেছি। যেখানে
রিসার্চ ফান্ড
পেয়েছি। আর
নতুন একটা
বিষয় হলো
আমরা এখন
অনেকগুলো ম্যাচিং
ফান্ডের ব্যবস্থা
করেছি। এটা
হলো কোনো
শিক্ষার্থীকে বিদেশী
বিশ্ববিদ্যালয় ৭৫%
দিল; আমরা
দিলাম ২৫%।
এভাবে কিন্তু
শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা
গ্রহণের সুযোগ
তৈরি হবে।
এছাড়া ইউজিসির
নির্দেশনা অনুযায়ী,
৬% ফুল
স্কলারশিপ দিতে
হবে। এর
মধ্যে ৩%
মুক্তিযোদ্ধা কোটা
এবং বাকি
৩% দরিদ্র
কোটায়। কিন্তু
আমরা ১০%
দিচ্ছি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে
কী কী
পরিকল্পনা রয়েছে?
আমাদের দুটি
পরিকল্পনা রয়েছে।
একটি শর্টটার্ম
আরেকটি লংটার্ম।
শর্টটার্ম বলতে
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে
আজ থেকে
১০ বছর
পর কোথায়
নিয়ে যেতে
হবে। সেটার
অংশ হিসেবে
আমরা ডিমান্ড
বেইজড বিভাগ
খোলার কথা
ভাবছি। লাইব্রেরিকে
রিসোর্সফুল করতে
চাচ্ছি। আরেকটা
বিষয়ে নজর
দিচ্ছি, ছাত্রদের
লিখতে হবে।
কিন্তু দেখা
যাচ্ছে ছাত্ররা
বিভিন্ন উৎস
থেকে লেখা
কপি করে
দিচ্ছে। সেটা
যেন না
পারে সে
জন্য আমরা
ব্যয়বহুল টার্নিটিন
সফটওয়্যার কিনেছি।
যেন একটা
লেখা জমা
দেয়ার আগেই
একজন শিক্ষার্থী
লেখাটি সংশোধন
করে নিতে
পারে। তৃতীয়
আরেকটি বিষয়
হলো আমরা
গবেষণা ও
গবেষণাগার উন্নয়নের
ওপর নজর
দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক
মানের ল্যাব
আছে আমাদের।
এগুলোই আমাদের
প্রাইম ফোকাস।
শিক্ষার্থীদের দাবির
পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্পেস বাড়ানোর
চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে কী
কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে
আপনি মনে
করেন?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টেকসই না হওয়া। একটা ব্যবস্থা নিলে তা বেশিদিন টেকে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারলে একটু আর্থিকভাবে সাশ্রয় হয়। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ব্যয়বহুল। তাই শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়। আরেকটা বিষয় হলো শিক্ষার গুণগত মান। ছাত্ররা এখন অনেক স্মার্ট। তাই তারা বাইরে যেতে চায়। এক্ষেত্রে গুণগত মানসম্মত শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছে। মূলত সারা বিশ্বেই বিদেশী শিক্ষার্থী বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য শিক্ষার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই।