‘১০ বছরের একাডেমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি’

অধ্যাপক . এএফএম মফিজুল ইসলাম  সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে শিক্ষকতা করেছেন। সম্প্রতি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তা সঙ্গে 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়, নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সবাই কথা বলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবদান রাখতে পারছে কিনা অনেক সময় আমি নিজেও প্রশ্নের সম্মুখীন হই। এখন তার জবাবে আমি বলি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে আসছে, র‍্যাংকিং প্রমাণ করে কে কতটুকু কাজ করছে। আগে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে থাকত, এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আগে মনে করা হতো বেসরকারিতে কেউ পড়বে না, অবস্থা এখন খানিকটা বদলেছে। এর মূল কারণ দুটি। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা যে সাবজেক্ট পড়তে চায় তা তারা খুঁজে পায়। দ্বিতীয়ত, আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা দিতে আমাদের কী করা উচিত, আমরা সেই সিদ্ধান্ত তাত্ক্ষণিক নিতে পারি। আমাদের বোর্ড এক্ষেত্রে বেশ উদার। যেকোনো বিষয়ে তাদের কাছে গেলে তারা তা করে। এখন আন্তজাতিক জার্নাল পেতে ২০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। আমাদের বোর্ড বলে যতটুকু চাহিদা দরকার তা আমাদের জানান। প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিকতা প্রয়োজন। এখন গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছে। এটা তো একদিনে গড়ে ওঠে না, সময়ের প্রয়োজন হয়।

শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় কী করেন?

আমাদের লেখাপড়ার সবচেয়ে বড় অনুঘটক, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন কিছু করতে দিই না। যার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক ছাত্রের জন্য উপদেষ্টা রয়েছে। কোনো জায়গায় কোনো ছাত্রছাত্রী কোনো রকম অঘটন ঘটালে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করার সিস্টেম করা হয়েছে।

যারা গ্রাম থেকে আসে বা কোথাও কিছু চেনে না, তারা যদি কখনো ভাবে কার কাছে যাব, তাদের জন্য আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। অর্থাৎ কোনো কিছু পেতে গেলে কার কাছে যেতে হবে নিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে হয় না। আমাদের সেশন জট নেই, ক্লাস না হলে তার জন্য মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা করি আমরা। শিক্ষক বাইরে যেতে চাইলে তাদের জন্যও আগাম ক্লাসের ব্যবস্থা আছে। কাজেই সব বিবেচনা করলে দেখা যায়, অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা অনেক এগিয়ে।

উপাচার্য হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিন বছরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?

প্রথম কাজটি হাতে নিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগ থেকে জার্নাল বের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চেয়েছি, আমাদের সব শিক্ষক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকবে, শিক্ষার্থীরা তাতে সহযোগিতা করবে। আমরা তা পেরেছি। আমাদের রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত ফান্ড আছে। গবেষণার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছি আমরা।

সিমাগো র‍্যাংকিংয়ে তো দেশের মধ্যে আমরা প্রথম হয়েছিলাম। এটা গত বছরের রিপোর্ট। আমাদের ফার্মেসি বিভাগের প্রত্যেকে নিয়মিত গবেষণার সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয়ত, টিম ওয়ার্কে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা টিম গঠন করে দিয়েছি। এখন কাজগুলো এমনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি। ওবিই সিস্টেম কারিকুলাম প্রণয়ন করেছি, দেশী-বিদেশী এক্সপার্টদের দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সরকার যেটা চাচ্ছে তা আমরা সুন্দরভাবে করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অর্জন কী?

শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পায়, এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এছাড়া হেকেপ প্রজেক্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশ্বব্যাংক, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এসেছিল। তারা ক্যাটাগোরাইজ করে বিভিন্ন বিভাগকে এক্সিল্যান্ট ভেরি গুড গ্রেড দিয়েছিল। অন্যদের বিবেচনাকে আমরা অর্জন হিসেবে ধরতে চাই।

আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন? তারা কর্মজীবনে কেমন করছেন?

আমাদের ফার্মেসি, বিবিএ, টেক্সটাইল বিভাগের কেউ বেকার আছে এমনটা শুনিনি। শুধু সমস্যা সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগ নিয়ে। সম্প্রতি একটা ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট যাত্রা শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনা নয়, চাকরি জীবনেও যাতে নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে, আমরা সে চেষ্টা করছি।

শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলার কার্যক্রমের জন্য কী করেছেন?

এটা বিভিন্নভাবে আলোচনা করা যায়। ক্লাবের হিসাব দিয়ে যদি বলি, শিক্ষার্থীদের ১৯টি ক্লাব আছে। প্রত্যেক ক্লাবের জন্য রুম বরাদ্দ আছে। ক্লাবের অ্যাক্টিভিটি তাদের কনফিডেন্স লিডারশিপ কোয়ালিটি তৈরি করে। এভাবে র‍্যাংকিংসহ অন্যান্য দিকেও আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে একটু আলাদা। কোনো ইউনিভার্সিটিতে মেয়েদের হোস্টেল নেই। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় মেয়েদের হোস্টেল তৈরি করেছি। তারা যাতে অল্প খরচে সুবিধা পায়।

গণমাধ্যমে আমরা দেখি, অনেক সময় অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীবান্ধব না। আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কেমন?

আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয়, শিক্ষকদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কোনো শিক্ষক ক্লাসে না গেলে তার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের কোনো স্টুডেন্ট পড়া না বুঝলে সে শিক্ষকদের কাছ থেকে আলাদাভাবেও বুঝে নিতে পারবে। শিক্ষকরা কো-অপারেটিভ না হলে সে অ্যাডভাইজরকে জানাতে পারবে। সেখানে সন্তুষ্ট না হলে যাবে রেজিস্টারের কাছে। রেজিস্টার তারপর আমাকে জানাবে। আমি যোগদান করার পরই বলেছিলাম, আমাদের প্রথম কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা। শিক্ষার্থীরা যা চায় তা আমাদের করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সেবা করাই আমাদের প্রথম কাজ। যেটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই করছে। আমরা যা ভালো সবকিছুই গ্রহণ করছি।

শিক্ষার্থীরা কোন ডিপার্টমেন্টগুলো বেশি পছন্দ করছে এবং কেন?

ফার্মেসি, সিএসই, টেক্সটাইলে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাচ্ছে। ফার্মেসির গবেষণা কার্যক্রম বেশি, ছাত্রদেরও গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতে হয়। সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার মঞ্জুর ওয়ার্ল্ড ফেমাস। প্রোগ্রামিংয়ে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একজন।

গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিশেষায়িত কী ব্যবস্থা আছে?

ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং নামে একটি ইনস্টিটিউট আছে, যেটি এখন খুবই ভালো কাজ করছে। এটি প্রথম প্রয়োজনগুলো সমীক্ষা করে। শিক্ষকরা এখন অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় তারা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অধিকতর প্রশিক্ষণ নিতে চান। প্রতিটি বিভাগকে দক্ষতানির্ভর করে জার্নাল বের করার তাগাদা দেয়া হয়। বর্তমানে প্লেজিয়ারিজম ধারার সফটওয়্যার থাকায় শিক্ষকরা ব্যাপক শ্রম দিয়ে জার্নাল বের করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এখন আমরা একটি অবস্থানে চলে এসেছি। আমরা একটি দশ বছরব্যাপী একাডেমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেই পরিকল্পনায় কোন বিভাগ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, আধুনিক লাইব্রেরির ব্যবস্থাকরণ এবং আধুনিক ল্যাব ব্যবস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু ক্লাসে পাঠদান শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট নয়, তাদের নিজেদের প্রচুর খাটতে হবে এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির সহায়তা নিতে হবে। উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন শীর্ষক একটি ডিসিপ্লিন আমরা হাতে নেব। এতে শিক্ষার্থীরা যেন নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারে অথবা চাকরি দিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন