তিন দশকের স্বপ্নযাত্রায় নর্দান ইউনিভার্সিটি

ফিচার প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

২০০২ সালে যাত্রা করে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। দীর্ঘ ২১ বছর পার করে তিন দশকে পা রেখেছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানী ঢাকার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন আশকোনায় স্থাপিত হয়েছে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস। ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঢাকার আশপাশের জেলা গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ থেকে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে তৃতীয় টার্মিনালের বিপরীত পাশে অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটি। রুটে চলাচল করে ২০টিরও বেশি গণপরিবহন। দ্রুত যাতায়াতের জন্য কাছেই রয়েছে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস স্টেশন। ঢাকাসহ ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ নরসিংদী জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের আলাদা করে হোস্টেলে থাকার দরকার হবে না, ক্লাস শেষে দিনেই বাড়ি ফিরতে পারবেন তারা। চারপাশে সবুজে ঘেরা, রয়েছে খোলামেলা জায়গা খেলার মাঠ। মূল ভবন দক্ষিণমুখী হওয়ায় প্রতিনিয়ত দখিনা বাতাস প্রবহমান ক্যাম্পাসে। রাজধানীর বুকে লাল কৃষ্ণচূড়ার শামিয়ানা আর শুভ্র কাশফুলের আবরণ দেখা খুবই দুষ্কর! তবে বসন্ত হেমন্ত ঋতুতে এমন একটি চমৎকার দৃশ্য দেখা যায় নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে। নতুন ঢাকার মূল ভূখণ্ডে হলেও প্রকৃতির সব রূপ-রঙের বদল এখানে চোখে পড়ে প্রতি ঋতুতেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী। গত ২০ বছরে ৩০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে পাস করে সাফল্য দেখাচ্ছেন কর্মজীবনে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারীসহ ২০০ জনের অধিক শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া খণ্ডকালীন  শিক্ষক রয়েছেন ১০৬ জন, যারা অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিধারী অধ্যাপক।

যা পড়ানো হয়

বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন, বিজ্ঞান প্রকৌশল, মানবিক সমাজবিজ্ঞান, আইন এবং স্বাস্থবিজ্ঞান অনুষদ পাঁচটি অনুষদের নয়টি বিভাগের ১৯টি প্রোগ্রামে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশনালস বা সিডিআইপির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, গেম ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল মার্কেটিং প্রফেশনাল জাভা প্রশিক্ষণসহ ১০টি কোর্স করার সুযোগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র যেখানে রয়েছে অসংখ্য বই নথি। গবেষণা কেন্দ্র থেকে অনেক অজানা তথ্য শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করতে পারেন এবং ফেলোশিপের জন্য আবেদন করেন তারা।

সুযোগ-সুবিধা

এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের মাল্টিমিডিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রায় একশ স্মার্ট শ্রেণীকক্ষ। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য নানা রকম বইয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্টাডিরুম। নিচতলায় আছে প্রার্থনা কক্ষ, শারীরিক অনুশীলনের জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের জিমনেসিয়াম ইনডোর খেলার রুম। বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য আছে হাজার ২০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আইসি তৈরির জন্য রয়েছে ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন ল্যাব (ভিএলএসআই), শিক্ষার্থীদের জন্য আছে অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস বা এইমস ল্যাব। এছাড়া আছে সার্কিট ল্যাব, ফিজিক্যাল ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, ইন্টারনেট ল্যাব, প্রোগামিং ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, কমিউনিকেশন ল্যাব, ডিজিটাল ডিজাইন ল্যাব, মাইক্রোপ্রসেসর ল্যাব ইলেকট্রনিকস ল্যাবসহ ৩১টি সমৃদ্ধ ল্যাব।

অত্যাধুনিক লাইব্রেরি

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সমন্বিত বিশাল আয়তনের লাইব্রেরি। শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার সেবা দেয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছে। খোলা থাকে সপ্তাহে সাতদিন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। দৈনিক সংবাদপত্র, রিজার্ভ রেফারেন্স বই পড়ার জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। গ্রন্থাগারে ১৫টি বাংলা ৫টি ইংরেজি পত্রিকা রাখা হয়।

বর্তমানে ৮৬ হাজারের বেশি বই রয়েছে এবং জার্নাল-ম্যাগাজিন আছে প্রায় হাজার। এছাড়া গ্রন্থাগারে ব্যবহারকারীদের সহায়ক সেবা দেয়ার জন্য রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদন, বিশ্বকোষ, অভিধান, হ্যান্ডবুক, ম্যানুয়েল এনজিও প্রকাশনা।

গ্রন্থাগারে রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পরিবেশগত গবেষণা, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মনোবিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বই। এছাড়া গ্রন্থাগারে রয়েছে ইলেকট্রনিক সম্পদের (-রিসোর্স) বিশাল সম্ভার। যেখানে সব শিক্ষার্থী, অনুষদ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশ করতে পারেন। ব্যবহারকারীরা -বুক, -জার্নাল -ম্যাগাজিন পড়তে ডাউনলোড করতে পারেন। বর্তমানে গ্রন্থাগারে অধিকাংশ টেক্সট বুকের সফট কপি দেয়া আছে, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়তে পারবেন এবং ডাউনলোড করেও সংরক্ষণ করতে পারবেন। রয়েছে কয়েক হাজার -বুক -জার্নাল। ব্যবহারকারী নাম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যেকোনো স্থান থেকে রিমোট অ্যাকসেস ডিসকভারি সেবার মাধ্যমে -রিসোর্সে প্রবেশ করতে পারেন।

সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশে ক্লাব

শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ বাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ১৪টি ক্লাব ১০টি ফোরাম রয়েছে। এসব ক্লাব ফোরাম বছরজুড়েই আন্তর্জাতিক জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এছাড়া পিঠা উৎসব, বসন্তবরণ, চৈত্রসংক্রান্তি, শিক্ষা মেলা জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো বিশেষ জমকালো আয়োজনে পালিত হয় এখানে। উচ্চশিক্ষার পরিবেশ থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দর সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।

শিক্ষা বৃত্তি

নর্দান ইউনিভার্সিটিতে প্রতি বছর একাধিকবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দেয়া হয় শতভাগ পর্যন্ত শিক্ষা বৃত্তি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা, খেলোয়াড় ছাত্রীদের জন্য রয়েছে কোটায় বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা। প্রতি সেমিস্টারে প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় স্থানধারীদের প্রদান করা হয় স্কলারশিপ।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি

সুযোগ্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে নর্দান ইউনিভার্সিটি। যার ফলে বিসিএস ক্যাডার, জুডিশিয়াল সার্ভিস, আইনজীবী, ব্যাংকার, কেমিস্ট, এনজিও, বহুজাতিক কোম্পানি, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি, আইটি ফার্ম, সফটওয়্যার ফার্ম, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাসহ নানা পেশায় সম্মানজনক কর্মসংস্থান পাচ্ছে নর্দান ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটরা। ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষাথীরা সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা জজ কোর্টসহ দেশের বিভিন্ন কোর্টে অ্যাডভোকেট হয়েছে প্রায় ১২ হাজারের অধিক। বিচারক হিসেবে আছেন শতাধিক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের তরুণ সাহসী উদ্যোক্তা হিসেবেও কর্মজীবন শুরু করেছেন অনেকে। উল্লেখ্য, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নর্দান ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সেন্টার। এতে আগামী বছরে ২০ কোটি টাকার সিড ফান্ডিং ইনভেস্টমেন্ট করার জন্য একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। যেকোনো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন মেন্টরিং সাপোর্ট পাবেন।

আন্তর্জাতিক এমওইউ এবং রিলেশনস

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে রয়েছে এমওইউ স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন গ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট, এমফিল পিএইচডি করার সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ভারতে উচ্চশিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষার্থীরা চীনা সরকারের ১০০ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে চীনে পড়ালেখা করতে যান। এছাড়া কটলার ইমপ্যাক্ট ইনকরপোরেটেডের সঙ্গে রয়েছে অফিশিয়াল চুক্তি, এর ফলে আন্তর্জাতিক সামিটের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে পরিচিতি প্রভাব বিস্তার করছে বিশ্ববিদ্যালয়।

কর্মক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটদের ঈর্ষণীয় সফলতা

নর্দানের গ্র্যাজুয়েটরা দেশ-বিদেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। তারা কেয়ার, শেল, মবিল, ইউনিলিভার, এইচএসবিসি, আইডিবি, এডিবি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্ট, জজকোর্ট, বিদেশী দূতাবাস, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক, সেনা, নৌ বিমান বাহিনী, রাজস্ব বোর্ড, টেক্সটাইল, কম্পিউটার ফার্ম, সফটওয়্যার কোম্পানি, ফার্মাসিউটিক্যাল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনাম দক্ষতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন