চীনে উৎসবকেন্দ্রিক ভোগ ব্যয় নিয়ে শঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কভিডজনিত বিধিনিষেধ ছাড়া ছুটির মৌসুম উদযাপন করতে যাচ্ছে চীনারা। দেশটির ব্যবসায়ীরা দেশজুড়ে বড়দিনের উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে চাইছেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক কভিড সংক্রমণ উৎসবকেন্দ্রিক ভোগ ব্যয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাশ বিক্রি থেকে থিমযুক্ত ইভেন্ট পর্যন্ত চীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার চেষ্টা করছে।  রেস্তোরাঁ বারগুলো দম্পতি বড় পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ বড়দিনের মেনুর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। গ্রাহকদেরকে দোকানে ফেরাতে বিভিন্ন চমকপ্রদ খাবারের প্রচার চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো বড়দিন উপলক্ষে মূল্যছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।

সাংহাইয়ের একটি রেস্তোরাঁ মালিক জু জেংগ্রং বলেন, পুরো শহরজুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এটি রেস্তোরাঁয় এসে মানুষজনকে খাবার খেতে বাধা দিচ্ছে। অবস্থায় ক্যাটারিং ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। তবে আমরা এখনো আশা করি, কিছু তরুণ ভোক্তা বড়দিন উদযাপন করবে।

চীনের প্রযুক্তিকেন্দ্র শেনজেনের ফুতিয়ানে রেস্তোরাঁ চেইন ওভেয়ার্সের সামনে ৫০টি ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ছুটির আমেজ তৈরি করা হয়েছে। রেস্তোরাঁটির একজন রিসেপশনিস্ট গুও বলেন, রেস্তোরাঁটি প্রতি রাতে এবং বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় পূর্ণ থাকত। কিন্তু আজকাল প্রায় খালি পড়ে থাকে। এবারের বড়দিনের উৎসবে কী হবে তা বলা কঠিন। কারণ অনেক মানুষ করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়ির বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের ব্যবসায়ীরাও ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। দূতাবাস এলাকার কাছাকাছি লিয়াংমাকাওয়ের একটি ইতালীয় রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের বড়দিনে কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বুকিংয়ের সংখ্যা কম। একইভাবে অন্যান্য রেস্তোরাঁও সক্ষমতা অনুযায়ী অর্ধেক বুকিং পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

এর আগে ডিসেম্বর চীন হঠাৎ করে জিরো কভিড নীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি প্রায় তিন বছর ধরে চালিয়ে আসা গণপরীক্ষার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়। অবস্থায় নতুন শনাক্ত চিহ্নিত করার পদক্ষেপও থমকে গেছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনা সংক্রমিত হয়ে মাত্র হাজার ২৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে সরকার। তবে কিছু অনুমান বলছে, বর্তমানে দেশটিতে দ্রুত কভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমিত হতে পারে।

খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপণন ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করা সাংহাই ইয়াচেং কালচারের প্রধান নির্বাহী সেন সাও বলেন, আগামী দুই বা তিন মাসে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতিকারক হবে। তবে রেস্তোরাঁ মালিকরা যদি মহামারীকালীন অনুশীলনগুলো প্রয়োগ করতে পারে তবে ক্ষতি কিছুটা কমবে। যারা বাড়িতে বড়দিনের উৎসব করতে চান তাদের দরজায় টার্কি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে পারে। সংস্থাগুলো চাইলে এমন নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।

বেইজিংয়ের ক্রিসমাস ট্রি বিক্রেতা ওয়াং জু   নিজেই ক্রেতাদের কাছে গাছ পৌঁছে দেন। সর্বশেষ প্রাদুর্ভাবের কারণে বছর তার বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ গ্রাহক এখন আমার পাঠানো ছবিগুলো থেকে ক্রিসমাস ট্রি বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু দোকানে বসে বিক্রির মজাটা আসলে পাচ্ছি না।

ভোক্তারা বাড়ির বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দিলেও চীনের বড় শহরগুলো লাইভ মিউজিকের সঙ্গে বড়দিন উদযাপন করছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সংগীত ভেনু ক্লাবগুলো পুনরায় অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে। অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় কভিডপূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আশাবাদ জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন