ইএসসির আলাপন

জোর দিতে হবে গুণগত কর্মসংস্থান নিশ্চিতে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে গতকাল ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার: বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলাপনের অষ্টম পর্বে অংশগ্রহণকারী অতিথিরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কেবল কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে লক্ষ্য না করে গুণগত কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, শ্রমবাজার তথা জনসম্পদের সঙ্গে সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই গুণগত কর্মসংস্থান দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) আয়োজিত বাংলাদেশে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার: বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে সম্ভাবনা শীর্ষক আলাপনের অষ্টম পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। আলাপনে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের গণমাধ্যম সহযোগী ছিল বণিক বার্তা।

. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে আরো কার্যকরী করতে না পারলে নতুন ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার করেও দেশ লাভবান হতে পারবে না। ভারত চীনে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারলে দেশেও তার প্রভাবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির হার বাড়বে। তরুণ সমাজের মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া অনেক সম্ভাবনাময় হতে পারে। তাই তরুণদের জন্য মূলধন অর্জন সহজীকরণ করতে হবে।

কভিড-১৯ মহামারীসহ যেকোনো অর্থনৈতিক ধাক্কাতেই বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সবার আগে চাকরি হারান উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের শ্রমনির্ভর অর্থনীতি যেকোনো মন্দার সময় ঝুঁকিতে পড়ে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর পাশাপাশি দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।

ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক . সেলিম রায়হানের সভাপতিত্বে আলাপনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি বিভাগের আরেক অধ্যাপক . সায়মা হক বিদিশা, লাইট ক্যাসেল পার্টনার্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিজন ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রোগ্রাম অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল অভি হোসেন।

বক্তারা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বিভিন্ন খাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দেশটির শ্রমবাজার। কভিডের একাধিক ঢেউয়ে মহামারীতে দেশব্যাপী পারিবারিক আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার তথা দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আবার কভিডের ঠিক পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আগত অর্থনৈতিক মন্দা দেশব্যাপী শ্রমবাজারের অবস্থা আরো করুণ করে দিয়েছে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মোহাম্মদ নাজমুল অভি হোসেন বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও এলডিসির সুবিধাগুলো আরো দু-তিন বছর পাওয়া যায় কিনা সেটা নিয়েও আলোচনার সুযোগ আছে। অনানুষ্ঠানিকে অর্থনীতি দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত বাংলাদেশের শ্রমবাজার সামলাতে তিনটি নির্দেশক রয়েছে। এগুলো হলো জনসংখ্যার সাপেক্ষে কর্মসংস্থানের অনুপাত, যুবকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে না থাকার অনুপাত।

অধ্যাপক . সায়মা হক বিদিশা বলেন, সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো পাশাপাশি আগে থেকে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিকতার আওতায় আনা, মানসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, মুদ্রাস্ফীতি সহ্যসীমার মধ্যে রাখতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক . সেলিম রায়হান বলেন, শ্রমবাজারের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য-জিডিপির অনুপাত গত ১০ বছরে ৪০ শতাংশ থেকে ১০-১২ শতাংশে নেমে এসেছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের হার কম থাকা এবং অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির ভাগ এখনো ৮৫ শতাংশের ওপরে থাকা উদ্বেগজনক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন