আবাসিক হলের সুবিধাবঞ্চিত ববির ৮১ ভাগ শিক্ষার্থী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরিশাল

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৮১ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক হলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হলে থাকার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি আবাসিক হল রয়েছে। যার মধ্যে ছাত্রীদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বাকি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাড়া বাসা বা মেসে থাকেন। এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা যেমন অনিরাপত্তায় ভুগছেন, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন।

অনাবাসিক শিক্ষার্থী রাশেদ (ছদ্মনাম) বলেন, হলে সিট না পেয়ে মেসে উঠেছি। আগে মেসে সব মিলিয়ে হাজার টাকায় হয়ে যেত, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো দেড় হাজার থেকে হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জয় বলেন, হলে এক বিছানায় দুজন থাকা খুবই কষ্টকর। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। একজন গোসলে গেলে আরেকজনকে বসে থাকতে হয়। এভাবে লাইন  দিয়ে সবকিছু করতে হয়।

শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, ছারপোকার মতো লেপ্টে থাকতে হয়। পড়াশোনার সমস্যা হয়। চারটি টেবিলে আটজনকে পড়তে হয়। পালা করে ঘুমাতে হয়। একজন পড়ে আর একজনকে বসে থাকতে হয়। না হলে রিডিংরুমে যেতে হয়। কিন্তু রিডিংরুমেও সিটস্বল্পতায় বসার জায়গা পাওয়া যায় না।

এদিকে ছাত্রী হলেও রয়েছে একই সমস্যা। সবাইকে ডাবলিং করে থাকতে হয়। খাওয়া, গোসল, ঘুম সবকিছুই পালা করে করেন তারা। শেখ হাসিনা আবাসিক হলে থাকেন ৬১০ শিক্ষার্থী। ওই হলের শিক্ষার্থী মারিয়া (ছদ্মনামবলেন, এক রুমে আটজনকে থাকতে হয়। ছোট এক বেডে দুজনকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। রান্নার জায়গা শুধু দোতলায়। বারবার সেখানে গিয়ে রান্না করা কষ্টের কাজ। এদিকে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলেও ৬১০ শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ পাবেন বলে জানা গিয়েছে।

হলের খাবার নিয়ে অভিযোগ: হলের খাবার নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, দাম মান নিয়ে। খাবারের দাম অনেক বেশি কিন্তু মান খুবই খারাপ।  শেরে বাংলা আবাসিক হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাদের সবার অভিযোগ, হলের খাবারে গন্ধ থাকে। মাছ থেকে পচা গন্ধ বের হয়। নষ্ট তেল দিয়ে রান্না করা হয়। এসব খাবারের দামের তুলনায় মান খারাপ। একই টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ভোলা রোডের পাশে হোটেল থেকে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

এদিকে বঙ্গবন্ধু হলের খাবারের দাম আরো বেশি। সেখানেও তাদের খাবারের মান নিয়ে একই অভিযোগ। এসব খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পেটের পীড়ায় ভোগেন। শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হলের খাবারের মান খুবই নিম্ন। প্রায়ই হলের খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হন।

খাবারের মান নিয়ে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সঠিক না। কারণ আমি নিয়মিত দুপুরে হলে খেয়ে থাকি। কারণ আমি নিজের চোখে দেখতে চাই এটি আসলে মানসম্মত কিনা। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী খাবারে মান ঠিক আছে।

ববির প্রক্টর . মো. খোরশেদ আলম সিট শেয়ারিংয়ের বিষয়ে বলেনশুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই চারজনের সিটে আটজন থাকছে, তা নয়। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমনটি করে থাকেন। কারণ সিটের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। সিট সংকট আছে সত্য। আমাদের প্রথম ফেজে চারটি হল ছিল সেটি হয়েছে। তিনটি চালু রয়েছে আর একটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে যার সব প্রক্রিয়া শেষ। শিক্ষার্থীরা খুব শিগগিরই হলে উঠতে পারবে। এরপর আমাদের দ্বিতীয় ফেজ প্রক্রিয়াধীন। সেই ফেজে আমাদের নতুন হল থাকবে। তখন আশা করা যায় সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন