কাতারে যেভাবে বিশ্বকাপ দেখছেন স্টেডিয়াম নির্মাণ কারিগররা

দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল, এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? বিশ্বমানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর কবিতা ‘কুলি মজুর’ আমাদের মনে সাম্যবাদের প্রত্যয় জাগায়। কাতার বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম নির্মাণের শ্রমিক ইস্যুতে জাতীয় কবির এ কবিতা আজ অত্যন্ত উজ্জল ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

মরুর বুকে ছাতি ফাটানো তীব্র রোদ উপেক্ষা করে, সহস্র জীবনের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ ফুটবল স্টেডিয়াম। সে স্টেডিয়ামকে আলোকিত করে বিশ্বকাপের মহাআসর এগিয়ে চলছে। তবে যারা এই অসাধ্য সাধন করেছেন তাদের খোঁজ কী কেউ রেখেছে? এখনো অভিযোগ আসছে এসব শ্রমিকরা তাদের পারিশ্রমিকও ঠিকমতো বুঝে পাননি।

এদিকে সাধ থাকলেও নিজেদের শ্রমে নির্মিত স্টেডিয়ামে উচ্চমূল্যে টিকেট কিনে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সুযোগ নেই এসব শ্রমিকদের। রাজধানী দোহার বিলাসবহুল হোটেল ও বিস্তীর্ণ জাঁকজমকপূর্ণ নতুন স্টেডিয়াম থেকে অনেক দূরে জায়ান্ট স্ক্রিনই তাদের শেষ ভরসা। খেলা চলাকালীন দেখা যায় দোহার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে সমবেত হাজার হাজার লোক। লোকসমাগমের জনপ্রিয় এ স্থানে রয়েছে বিভিন্ন খাবার ও পানীয়ের স্টল, ফুটবল পিচ আর ভলিবল কোর্ট। এখানে বড় স্ক্রিনে দেখানো হয় বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ।

বিশ্বকাপ আয়োজনে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার জন্য ২০১৫ সালে দোহার উপকণ্ঠে লেবার সিটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমজীবী এখানে বসবাস করেন। লেবার সিটির কাছেই রয়েছে এশিয়ান টাউন। কম খরচে কেনাকাটা ও অবসর কাটানোর সীমিত হলেও কিছু সুযোগসুবিধা পাওয়া যায় এশিয়ান টাউনে।


দোহার এ এলাকায় শ্রমিকের বসতি সারি সারি। বিশ্বকাপকে সম্ভব করে তুলতে সবচেয়ে বড় অবদান তাদেরই। কিন্তু, এ আসরের ভেন্যুতে অংশগ্রহণের সাধ্য নেই তাদের। দোহার প্রাণকেন্দ্রে যেখানে বিশ্বকাপ আয়োজন চলছে, সেখানে যেতে হলে লাগে ‘হায়া কার্ড’। ম্যাচের টিকিট থাকলে হায়া কার্ডের নিবন্ধন ও ইস্যু করা হয়। বলাইবাহুল্য, বিশ্বকাপ ম্যাচের টিকিট কেনাটা স্বল্প-মজুরির শ্রমিকের কাছে বড় অপব্যয়। তাই দোহার ঝলমলে আয়োজনও ঘুরে দেখা হয় না হায়া কার্ডহীন এ শ্রমিকদের। যারা চকচকে স্টেডিয়ামে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে না তাদের জন্য এশিয়ান টাউনের জায়ান্ট পর্দাগুলো টুর্নামেন্টের একটি মূল ঝলক হয়ে উঠেছে, যা ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে নতুন আকার দিয়েছে।

ভারতের বিহার থেকে আসা প্রবাসী শ্রমিক আনমোল সিং বলেন, স্টেডিয়ামে টিকেট কেটে খেলা দেখবো এমন সাধ্য কি আছে? মাসিক ৬০০ ডলার বেতন থেকে ১০৯ ডলার নিজের জন্য রেখে বাকিটা পরিবারকে পাঠাই। পরিবারকে সব দেয়ার জন্যই কাজ করি।

উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ দিয়ে কাতার স্পটলাইটে আসার ফলে দেশটির শ্রম নীতি সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটি কাফালা ব্যবস্থা (কাতারের কোনো এক নাগরিকের অধীনে থাকা) বাতিল করেছে এবং অন্যান্য পরিবর্তনের মধ্যে মাসে ১ হাজার কাতারি রিয়াল বা ২৭৫ ডলার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবু মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর বলেছিল এ পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিল না। কেননা এর ফলে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বিলম্বিত হতে পারে ও চাকরিতে নিয়োগের জন্য অত্যধিক ফি প্রদানে বাধ্য করা হতে পারে।

বার্তা সংস্থা এপি অবলম্বনে আল আমিন হাওলাদার

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন