গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে কোলাবোরেশন বাড়াতে হবে

অধ্যাপক . মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ফার্মেসি বিভাগের প্রধান। ইউএপি থেকে স্নাতক স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে পিএইচডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের ফার্মেসি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সাইফ সুজন

শুরুতে ফার্মেসি শিক্ষার প্রাথমিক দিকগুলো নিয়ে কিছু বলুন।

ফার্মেসি আমাদের দেশসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় অধ্যয়নের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয়। ফার্মেসি শিক্ষার যাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলেও বর্তমানে দেশের সরকারি বেসরকারি বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি পড়ানো হচ্ছে। যারা উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে এবং যাদের উচ্চতর গণিত, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি বায়োলজি থাকে তারাই ফার্মেসি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া তাদের কেমিস্ট্রি বায়োলজি বিষয়ে ন্যূনতম জিপিএ থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ফার্মেসির সিলেবাসে ভিন্নতা থাকলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। দেশে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসির ব্যাচেলর ডিগ্রিটি চার বছরের, তবে কোথাও কোথাও সেটি পাঁচ বছরের রয়েছে।

ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক?

দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের অনার্স ডিগ্রি করানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে  এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। যেখানে চার বছরের ডিগ্রি, তাদের এক মাসের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। তবে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় বছরের কোর্সে এক বছর হাসপাতালে বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

দেশের ফার্মেসি শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে কিছু বলুন।

ফার্মেসি শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে কিছু মানদণ্ড দেয়া রয়েছে। একটি বিভাগে কতজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কতজন শিক্ষক থাকবে, কী পরিমাণে ল্যাব সুবিধা থাকতে হবে, কী ধরনের যন্ত্রপাতি থাকতে হবে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু শর্তাবলি রয়েছে। সেগুলো পূরণ সাপেক্ষেই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন মেলে। তাই ফার্মেসি শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের মানই তুলনামূলকভাবে ভালো। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে এখনো বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রেও দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল কেম্পানিগুলোর সঙ্গে কোলাবোরেশন বাড়াতে পারলে গুণগত শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা অনেক বেশি সহজতর হবে।

ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলুন।

ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটরা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু দেশে নয়, প্রচুর পরিমাণে ফার্মাসিস্ট দেশের বাইরেও কাজ করছেন। শিক্ষকতা, রিসার্চ অর্গানাইজেশন এবং হসপিটালগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে ফার্মাসিস্টের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সামরিক বাহিনী, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায়ও তারা কাজ করছেন।

দেশে চাহিদার তুলনায় ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট তৈরির হার যথেষ্ট?

প্রতি বছর আমাদের দেশে চার হাজারের মতো ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছে। এটা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির জন্য যথেষ্ট। তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নিলে সংখ্যা এখনও অপ্রতুল। এছাড়া প্রতি বছর দুই শতাধিক গ্র্যাজুয়েট দেশের বাইরে যাচ্ছে। অনেকে সরকারি চাকরিতে চলে যাচ্ছেন।

কর্মক্ষেত্রের শুরুতে ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটদের আয়ের হার কেমন থাকে?

যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যাচ্ছেন, তারা ৩০-৪০ হাজার টাকায় শুরু করতে পারছেন। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় প্রতিষ্ঠানভেদে ৪০-৮০ হাজার পর্যন্ত বেতন দিয়ে শুরু করতে পারছেন। ইন্ডাস্ট্রিতেও ৩০-৪০ হাজার দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ পাচ্ছেন। রিসার্চ অর্গানাইজেশনগুলোও ভালো বেতন দিচ্ছে।

সবশেষে ইউএপির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে বলুন।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া-প্যাসিফিকে ১৯৯৮ সালে ফার্মেসি খোলা হয়। রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরাই প্রথম ফার্মেসি শুরু করি। অনার্স ছাড়াও আমরা দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি দিচ্ছি। বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানিতে ৫০-৬০ শতাংশ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরাই দখল করে আছেন। বিবিএসই, ফার্মেসি কাউন্সিল এবং মডেল ফার্মাসিস্ট হিসেবেও আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করছেন। এছাড়া প্রতি বছর আমাদের গ্র্যাজুয়েটতের বড় একটি অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। ইউএপিতে গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ উন্নত পরিবেশ থাকায় সেখানে বেশ ভালো ভালো মানের গবেষণা হচ্ছে। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা গবেষণা নিবন্ধ পত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশের হারও বেশ সন্তোষজনক।

 

অনুলিখন: তানভীরুল ইসলাম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন