রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত আলোচনা সভায় নাগরিক সমাজের নেতারা এসব কথা বলেন। তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের দায় পুরোটাই মিয়ানমারের। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংকট, অথচ কোনো দায় না থাকার পরও এ সংকটের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ দায়ভার বিশ্ববাসীকে নিতে হবে।
কর্মরত প্রায় ৫০টি স্থানীয় ও জাতীয় সংস্থার নেটওয়ার্ক সিসিএনএফ আয়োজিত সভাটি সঞ্চালনা করেন ফোরামের কো-চেয়ার ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং পালসের প্রধান নির্বাহী আবু মোর্শেদ চৌধুরী। এতে বক্তব্য দেন নারীপক্ষের শিরীন হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের ব্যারিস্টার মানজুর হাসান, ডিজাস্টার ফোরামের গওহার নঈম ওয়ারা, ইপসার মো. আরিফুর রহমান, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার শিউলি শর্মা, সুশীলনের মো. মজিবুর রহমান, একলাবের সঙ্গীতা ঘোষ এবং সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার ও নেটওয়ার্কটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আবু মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত জাতিসংঘের কয়েকটি রেজল্যুশন ছাড়া তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনিশ্চয়তা ও হতাশা কাজ করছে। একই ধরনের হতাশা আছে স্থানীয়দের মধ্যেও। প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রথাগত কূটনীতির পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক কূটনীতি বা ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসির প্রতি জোর দিতে হবে।
জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার শিউলী শর্মা রোহিঙ্গা শিবিরে নারী নেতৃত্ব তৈরির ওপর জোর দেন। বক্তব্যে বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রায় ৫০ ভাগই শিশু-যুব সমাজ। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে ক্যাম্পের ভেতর বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখতে হবে, কারিগরি ও জীবন দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
সুশীলনের মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বাসস্থান তৈরি করতে গিয়ে প্রায় ছয় হাজার একর পাহাড় এবং দুই হাজার একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত প্রায় আড়াই হাজার পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।
মো. আরিফুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে গোয়েন্দা তত্পরতা বাড়াতে হবে যাতে কোনো গোষ্ঠী ধর্মীয় মৌলবাদী দল তৈরি করতে না পারে।
গওহার নঈম ওয়ারা আলোচনায় বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি যাচাই করে দেখতে হবে। সভায় ব্যারিস্টার মানজুর হাসান বলেন, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের বড় ব্যর্থতা আছে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ আসিয়ানও।