ঝালকাঠির ভাসমান হাটে জমে উঠেছে পেয়ারা বেচাকেনা

অলোক সাহা, ঝালকাঠি

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলি খালে ভাসমান পেয়ারার হাট ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ঝালকাঠিতে বছর পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভরা মৌসুম হওয়ায় গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষীরা। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নেয়া যাচ্ছে পেয়ারা। বেচাকেনাও জমে উঠেছে। ফলে ভালো দাম পেয়ে খুশি এখানকার  চাষীরা।

ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি খালে বসে অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারার হাট। হাট দেখতে মৌসুমে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকরা জেলার পেয়ারা বাগান ভাসমান হাট দেখে মুগ্ধ।

ঝালকাঠি কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় বছর ৬২৯ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছয় হাজার টন।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা, নবগ্রাম গাভা রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে ৯৫ ভাগ পেয়ারার চাষ হয়। এর মধ্যে কীর্ত্তিপাশার ভীমরুলি, খেজুরা, ডুমরিয়া, মীরাকাঠি, খোদ্দবড়হার, নবগ্রামের শতদশকাঠি, জগশীদপুর শাখাগাছি গ্রামের প্রায় শতভাগ পরিবার পেয়ারা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা পেয়ারা চাষ করে আসছেন। বাগান থেকে পেয়ারা পেড়ে এনে নৌকায় করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। পাইকাররা ট্রাকযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন।

ভীমরুলি খালে পেয়ারার সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট বসে। প্রতিদিন সকালে ছোট ছোট নৌকায় করে পেয়ারা বিক্রির জন্য হাটে আসেন চাষীরা। শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পেয়ারার মৌসুম। সময় প্রতিদিনই এখানে পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার কেনাবেচা বেশি হয়। বর্তমানে মণপ্রতি পেয়ারার পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। এক মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা বিক্রি হয় ভাসমান হাটে।

ভাসমান হাট দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। এমনকি বিদেশী পর্যটকরাও পেয়ারা বাগান ভাসমান হাট দেখে মুগ্ধ হন। পেয়ারা মৌসুমে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে ঝালকাঠির ভীমরুলি খালের ভাসমান হাটে। এখানে পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া, লেবুসহ অন্যান্য ফল শাক-সবজিও বিক্রি হয়।

পর্যটককে বিনোদন দিতে বেসরকারি উদ্যোগে এখানের পেয়ারা বাগানের মধ্যে পার্ক গড়ে উঠেছে শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।

তবে পর্যটকদের অভিযোগ, এখানে পর্যাপ্ত টয়লেট, বিশ্রামাগার, গোসল করার জায়গা, খাওয়ার এবং থাকার ভালো কোনো হোটেল নেই। যে কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

পেয়ারা চাষী অমিত রায় বলেন, বছর পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। ছিটপড়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়নি পেয়ারা। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যচ্ছে। বিগত বছরের চেয়ে বছর চাষীরা বেশি লাভবান হবেন।

পেয়ারা চাষী সুজন হালদার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অঞ্চলের চাষীদের ভাগ্য খুলেছে।

পেয়ারার পাইকার জামাল হোসেন বলেন, আমরা এখান থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। খেতে সু-স্বাধু হওয়ায় বাজারে এখানকার পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ভীমরুলি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ভবেন হালদার বলেন, পেয়ারা অঞ্চলের মানুষের আবেগ। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অঞ্চলের মানুষ পেয়ারা চাষ করে আসছে। এখানে প্রায় শত ভাগ পরিবার পেয়ারা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নড়াইল থেকে আসা পর্যটক সুমন হোসেন বলেন, পেয়ারা বাগান ভাসমান হাট দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তবে এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। পর্যটকদের খাওয়া থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হলে খুব ভালো হবে। আমরা ব্যাপারে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই মনিরুল ইসলাম বলেন, এখানে আসা প্রতিজন পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করি।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এখানকার পেয়ারা খেতে সুস্বাদু পুষ্টিমানে ভরপুর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বছর কৃষককে বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাই ফলন ভালো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, পেয়ারা চাষীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য কৃষি বিভাগকে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কৃষি বিভাগ কাজ করেছে। এছাড়া এখানে আগত পর্যটকের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারিভাবে এখানে কোন কিছু করার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন