ঈদে ছোট পর্দার বাজার ২৫০ কোটি টাকা!

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

ঈদের খুশির সঙ্গে বাড়তি আনন্দ যোগ করতে বিনোদনজগতের প্রচেষ্টার কমতি নেই। সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি দেয়া হয়। টেলিভিশনে প্রচার হয় সেরা সেরা নাটক। ঈদ ঘিরে তৈরি হয় আরো নানা পদের অনুষ্ঠান। প্রায় সব টেলিভিশন ঈদকে কেন্দ্র করে সাতদিনের বিশেষ আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। ঈদ নাটক সেই আনন্দের বড় অংশজুড়ে থাকে। এছাড়া ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, গানের অনুষ্ঠান, মজার সব অনুষ্ঠান থাকে তাদের অনুষ্ঠানসূচিতে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওটিটি ওয়েব প্লাটফর্ম। টেলিভিশনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারাও নিত্যনতুন কনটেন্ট নিয়ে আসছে ঈদ উপলক্ষে। এই যে টেলিভিশনগুলো সাতদিন ধরে বর্ণিল আয়োজনে সাজে, এর জন্য তাদের খরচ করতে হয় অঢেল টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই টাকা তুলেও নেন আয়োজকরা। প্রশ্ন আসতে পারে, ঈদ ঘিরে বিনোদনজগতের আয়োজনের বাজার কত বড়? ঈদ আয়োজনের বাজারের বিস্তৃতি নিয়ে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন হলেও প্রায় কাছাকাছি একটা ধারণা পাওয়া যায়। 

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সাবেক সভাপতির অভিনেতা-প্রযোজক ইরেশ যাকের বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ বাজার প্রায় ২০০-২৫০ কোটি টাকার। প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন হলেও একেবারেই দুষ্প্রাপ্য নয়। বিগত কয়েক বছর টেলিভিশনসংশ্লিষ্ট সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে এবং প্রযোজনা করতে গিয়ে যে হিসাব পেয়েছি ঈদ ঘিরে টেলিভিশন প্রোগ্রামের বাজার ২০০-২৫০ কোটি টাকার মতো। দুই বছর করোনার কারণে বাজার সংকুচিত হলেও গত ঈদুল ফিতরে বাজার পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে যায়। ঈদুল আজহায় আরো বেশি কাজ হয়েছে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বিপণন কর্মকর্তা জানান, শুধু টেলিভিশন প্রডাকশনের ঈদের বাজার ২০০-২৫০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ওটিটি ওয়েব প্লাটফর্ম যোগ করলে তা ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার মতো হবে। ঈদের সাতদিনের জন্য নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ সব মিলিয়ে তার চ্যানেলের প্রডাকশন বাজেট কোটি টাকারও বেশি।

তিনি একটি খসড়া হিসাব দিয়ে বলেন, ‘দেশে টেলিভিশন চ্যানেল আছে প্রায় ৪০টা। এর মধ্যে আট-দশটা চ্যানেল সংবাদকেন্দ্রিক। ফলে ঈদ ঘিরে তাদের খুব বেশি খরচ করতে হয় না। বাকি ৩০টার মতো প্রোগ্রাম বেজড চ্যানেল আছে। বিশেষ নাটক, বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, টেলিফিল্ম, সিনেমাসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি চ্যানেলের প্রডাকশন বাজেট রাখতে হয় -১০ কোটির মতো।

বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টিভির হেড অব মার্কেটিং মো. মোজাম্মেল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বছরের দুই ঈদ ঘিরে সব চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। দর্শকদের চোখ থাকে মূলত ঈদের নাটকের দিকে। এছাড়া বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যও আলাদা দর্শক থাকে। এবার আমরা দুটো ফিচার ফিল্ম মুক্তি দিচ্ছি টেলিভিশনে, যার একটি আইকন ম্যান। অন্যটি সাহসিকা-২। দুটো প্রডাকশনের বাজেটই ৬৫ লাখ টাকা। এছাড়া ৬৫টি নাটক প্রচার হবে দীপ্ত টিভিতে। নাটকগুলোর বাজেট প্রায় দেড় কোটি টাকা। সাতটি সিনেমার টিভি প্রিমিয়ার হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আছে। সব মিলিয়ে আমাদের বড় একটি বাজেট রাখতে হয় ঈদে।’ 

টেলিভিশন নাটকের বাজেট বেড়ে গেছে জানিয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মাঝে টিভি নাটকের বাজেট কমে গিয়েছিল, যার ফলে নাটকের মানও খারাপ হয়েছিল। এখন আবার টিভি নাটকের বাজেট বেড়েছে। তার পরও খুব বেশিসংখ্যক নাটক মান ধরে রাখতে পারছে না। এর বড় কারণ দেশের বড় বড় তারকা শিল্পী নাটক করা কমিয়ে দিয়েছেন। যেমন তাহসান, আফরান নিশোর মতো তারকারা খুব বেশি নাটক করছেন না। ফলে অন্য যেসব বড় তারকা নাটক করছেন তাদের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বৃদ্ধির ফলে তারা পারিশ্রমিক এত বেশি বাড়িয়েছেন যে নাটকের ৭০-৭৫ শতাংশ বাজেট চলে যায় তাদের সম্মানী দিতেই। নাটকের অন্যান্য দিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পান না প্রযোজক-পরিচালকরা।

এনটিভির প্রযোজক চৌধুরী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থাগুলো টেলিভিশন প্রডাকশনের পেছনে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। তারা ওটিটি ওয়েব প্লাটফর্মে ঝুঁকছে বেশি। না হলে ঈদে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের বাজার আরো বড় হতো।

২৫০ কোটি টাকার বাজারে অনেক শ্রেণী-পেশার মানুষ সম্পৃক্ত জানিয়ে ইরেশ জাকের বলেন, ‘টিভিতে যাদের দেখা যায় শুধু তারাই ২৫০ কোটি টাকার বাজারের আওতাভুক্ত বিষয়টা এমন নয়। অভিনেতা বা অভিনেত্রী ছাড়াও প্রযোজক, পরিচালক, লেখক, লাইট টেকনিশিয়ান, ভিডিও এডিটর, সেট ডিজাইনারসহ বহু মানুষ এসবের সঙ্গে জড়িত। তারকাদের পাশাপাশি তারাও বাজারের বড় অংশীদার।’  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন