টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে

. আসাদ ইসলাম অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির পরিচালক। তিনি একই সঙ্গে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) আব্দুল লতিফ জামিল প্রোভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের ফ্যাকাল্টি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) অ্যাডজাঙ্কট ফেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্নের পর কানাডার সাচকেচুয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিধারা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা হয় অর্থনীতিবিদের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতিটা কী?

উন্নয়ন একটা জটিল প্রক্রিয়া। স্বল্প সময়ে এটি বিবরণ দেয়া কঠিন। তবে এখানে অনেক সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো উন্নয়নের বিভিন্ন স্তর পার করে আজ এখানে এসেছে। এসব স্তর সফলভাবে অতিক্রম করার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামাজিক প্রজ্ঞার সমন্বয় দরকার, তার সবই তারা করেছে। আমাদেরও তাই করতে হবে। নইলে উন্নয়নের একটা ধাপে এসে আমরা আটকে যাব। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নানা ধরনের পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে, তেমনি রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন।

অনেকে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিমাণগত বা বস্তুগত দিকে নজর দিচ্ছে বেশি, গুণগত দিক অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। আপনি কি বিষয়ে একমত?

মানবসম্পদের উন্নয়নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। এখন যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে পরিমাপ করি, কিন্তু মানবসম্পদে পিছিয়ে থাকি তাহলে আমরা যাত্রার মাঝপথে গিয়ে আটকে যাব। শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে উন্নয়নের সবকিছু পরিমাপ করা যাবে না। তবে এটা ঠিক, মানবপুঁজি উন্নয়নের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দরকার। তবে এখন আমাদের পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে বেশি। কারণ পরিমাণের প্রতি আমরা এত বেশি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছি যে আমাদের আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনমানের বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আমাদের এখন সেদিকে নজর দিতে হবে বেশি।

আপনি অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

আমি শিক্ষা করোনাকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেছি এবং করছি। করোনাকালে খাতের অনেক অসংগতি ধরা পড়ছে, যা আগে ততটা স্পষ্ট ছিল না। প্রায় এক যুগ ধরে আমি বাংলাদেশের শিক্ষা খাত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি। একটা বিষয় আমাদের সবার কাছে পরিষ্কার, আর তা হলো শিক্ষা খাতের সব স্তর বেশ নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি। শিক্ষার পরিমাণগত গুণগত উভয় ঘাটতিই দৃশ্যমান। আমি মাঠপর্যায়ে কাজ করি। তাতে দেখি যে একটা গ্রুপ আছেন, বিশেষ করে শিক্ষক বা শিক্ষা অফিসাররা জিপিএ কতজন পেয়েছে বা পাসের হার কত ইত্যাদি বিষয় নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, তাদের কাছে শিক্ষার উন্নয়নের প্রধান সূচক এগুলো। কিন্তু এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা প্রাথমিক মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশি কাজ করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, লার্নিং আউটকাম খুব নাজুক। এক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য আমাদের করণীয় কী, সেদিকে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। শিক্ষায় গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, কত ছেলেমেয়ে পাস করেছে সেটি মুখ্য বিষয় নয়।

করোনায় লার্নিং লস বেড়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে করণীয় কী হতে পারে?

বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে নানা জরিপ করেছি। সেখানে কিছু শিশুকে নিয়ে করোনার আগে, করোনার মাঝখানে এবং স্কুল খোলার ঠিক আগে কাজ করেছি। আমরা পরিষ্কারভাবে দেখেছি, শিশুদের লার্নিং আউটকামের বড় ধরনের অবনমন ঘটেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে গবেষণামূলক প্রকল্প হিসেবে আমরা শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রিমোট লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। করোনার সময় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ছিলেন। সেলফোনের মাধ্যমে স্কুলের শিশুদের শিখন সহায়তার জন্য তাদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বেছে নিয়েছি। এটাকে টিউটরিং বলা যায়। ফোনের মাধ্যমে বেশিক্ষণ টিউটরিং সম্ভব নয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা করেছি শিশুদের সহজে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে সাহায্য করা যায়। প্রতি সপ্তাহে ফোন করে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে শিশুদের জন্য কী করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। তাতে দেখেছি, কমিউনিটি ভলান্টিয়ারিংয়ের মতো কিছু পদক্ষেপ নিলে লার্নিং লসের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে আনা সম্ভব। তবে সম্পূর্ণ কাভার করা সম্ভব নয়। যাদের আমরা ইন্টারভেনশনের আওতায় এনেছি তাদেরও লার্নিং লস হয়েছে, কিন্তু যারা আমাদের ইন্টারভেনশনের আওতায় ছিল না তাদের তুলনায় তারা অনেক ভালো অবস্থায় আছে। তাদের ক্ষতিটা কম হয়েছে।

করোনার আগেই আমাদের ছেলেমেয়েদের লার্নিং গ্যাপ ছিল। গ্রাম শহরের তুলনা করলে, কিংবা আমাদের শিশুদের দেশীয় শিক্ষার মাত্রার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাত্রার তুলনা করলে অনেক দিক থেকে আমরা পিছিয়ে। করোনায় আমরা আরো পিছিয়ে গেছি। আমরা দেখেছি, স্কুল খোলার পর বিপুলসংখ্যক ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে। তারা স্কুলেই আসছে না। আর যারা আসছে তারা ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারছে না। কারণ যে শিশুটা পঞ্চম শ্রেণীতে ছিল, সে এখন সপ্তম শ্রেণীতে উঠে গেছে। তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণীর বিষয়গুলো জানে না। ফলে সপ্তম শ্রেণীতে এসে আর ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারছে না। জায়গাগুলোয় আমাদের নজর দিতে হবে, যাতে করোনা-পরবর্তী আগের জায়গায় দ্রুত পৌঁছাতে পারি। অন্তত করোনার কারণে শিশুদের যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা দ্রুত পুষিয়ে নিতে পারে। তার জন্য সরকার এখন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেটা অপ্রতুল। এক্ষেত্রে কিছুটা আত্মতৃপ্তি কাজ করেছে যে, করোনার সময়ে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট ছিল। আসলে তা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। যেসব শিশুর ইন্টারনেট প্রবেশগম্যতা ছিল না তারা তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। এমনকি যাদের বাসায় টিভি ছিল এবং টিভির মাধ্যমে যে ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম সরকার চালিয়েছিল, তা বাচ্চাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। ফলে ৪০ শতাংশ পরিবারের কাছে সেবাটি পৌঁছালেও তার প্রকৃত সুফলভোগী অনেক কম।

বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে উন্নয়নের পরের ধাপে বাংলাদেশের যাওয়াটা কতটা মসৃণ হবে?

আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা হলো দক্ষ মানবসম্পদের অভাব। আমাদের শুধু সিলেবাস পরিবর্তন করলে হবে না। যারা পড়াচ্ছেন তাদেরও পরিবর্তন করতে হবে। আমি একটা ভালো স্কুলে গিয়েছিলাম। দেখছি আইসিটি শিক্ষকও ঠিকমতো পড়াতে পারছেন না। ভালো শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে বেসিক বিষয়গুলো দেখাতে বললাম, তারা সেটিও পারেনি। আমরা যে ডিজিটাল লার্নিং ডিজিটাল এডুকেশনের কথা বলছি সেটি প্রদানে শহরের ভালো ভালো স্কুলের শিক্ষকরাও প্রস্তুত সুসজ্জিত নন। আর গ্রামের অবস্থা আরো ভয়াবহ। কিছু স্কুলে দেখলাম, তাদের ল্যাপটপ কয়েক বছর ধরে নষ্ট। মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। কিংবা যে পরিমাণ পয়সা দেয়া হয়, তা স্কুল পর্যন্তই পৌঁছে না, তার আগেই শেষ হয়ে যায়।

আরেকটা গ্রুপ আছে যারা কম্পিউটার কী বিষয়, সেটি খুলেও দেখেনি। ধরনের অবস্থা থেকে উত্তরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষকদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। প্রশিক্ষণ বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, বর্তমানে যারা শিক্ষক আছেন তাদের ট্রেনিং দিতে হবে তা নয়, শুরুটা করতে হবে অন্যভাবে। শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যে ধরনের মানুষের শিক্ষকতা পেশায় আসা উচিত দক্ষতা থাকা উচিত, সে ধরনের দক্ষ লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। বিদ্যমান শিক্ষকদের দিয়ে হবে না। তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিলেও বেশির ভাগ শিক্ষকই ব্যর্থ হবেন। কারণ তাদের প্রেষণা নেই। ট্রাডিশনাল পদ্ধতির বাইরে বের হওয়ার জন্য তারা কোনো চিন্তাভাবনাও করেন না। কারণে আমাদের প্রথমে মনোযোগ দিতে হবে মানসম্পন্ন নতুন শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে।

আরেকটা কথা বলা দরকার। অবকাঠামোগত দিক থেকে আমরা তেমন পিছিয়ে নেই, যত পিছিয়ে আমরা মানবসম্পদের উন্নয়ন বা শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। কাজেই শুধু সিলেবাস পরিবর্তন করলে হবে না। সিলেবাসটা ঠিকভাবে যাতে পড়াতে পারে, তারও একটা প্রক্রিয়া থাকতে হবে। যারা পড়াবে তাদের আগে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি জোর করে শিক্ষার্থীদেরে ওপর সিলেবাস চাপিয়ে দিই, শিক্ষকরা যদি সেটি যথাযথভাবে ডেলিভারি দিতে না পারে তাহলে সিলেবাস পরিবর্তন করে লাভ হবে না।

করোনার কারণে বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। শিক্ষণ প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আমরা সনাতনী ধারাতেই আছি। এক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের করণীয় কী?

আমাদের আরো উদ্ভাবনী হতে হবে। আমাদের সাশ্রয়ী প্রযুক্তিগত (লো-কস্ট টেকনোলজি-বেজড সলিউশন) কিছু সমাধান দাঁড় করাতে হবে। আগেই আমাদের একটা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেছি। আরেকটা পাইলট প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি যেটি বাংলাদেশে নেপালে শুরু করছি। এটিকে আমরা বলছি, ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স। অর্থাৎ আমরা ভালো ভালো শিক্ষক দিয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠ রেকর্ড করেছি। সেই রেকর্ডিংটা একটা সার্ভারে রেখে দিচ্ছি। শিক্ষক বা অভিভাবকরা যেকোনো সময় ইচ্ছা করলে একটা টোল ফ্রি নাম্বারে ফোন করে ওই রেকর্ডিংটা শুনতে পারবেন। এর সুবিধা হলো, ভালো শিক্ষকের পড়ানো শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে বুঝতে পারবে। করোনার সময়ে শিশুদের মৌলিক যে বিষয়গুলো জানা দরকার ছিল, সেগুলোর ওপর নজর দিয়েই ওই রেকর্ডিংটা করা হয়েছে। কোনো শিশু যখন বিদ্যালয়ে মৌলিক বিষয়গুলো বুঝছে না, তখন বাসায় ফিরে সে টোল ফ্রি নাম্বারে ফোন করে রেকর্ডিং শুনে ওইসব বিষয় সহজেই জানতে পারবে। এটা ইন্টারঅ্যাক্টিভ বলছি কারণে, এখানে কিছুটা সংলাপ স্টাইলে পড়ানো হচ্ছে। কারণে কিছুটা মনে হবে, আমি শ্রেণীকক্ষে বসে আছি। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষণ গ্যাপটা পূরণ করতে পারবে। এটা ক্লাসের বিকল্প নয়; বরং পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় এটা মোবাইলভিত্তিক করেছি। ফোন করলে কোনো টাকা-পয়সাও দিতে হবে না। কাজেই শিক্ষণ গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে এটা একটা উপায় হতে পারে।

কনটেক্সট বিবেচনায় আরো অনেক উপায় আছে। যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আছে তাদের জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সলিউশন গ্রহণ করা যেতে পারে। আবার যাদের নেই, তাদের কীভাবে ইন্টারনেটের বাইরে গিয়ে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারি, তার সমাধান বের করতে হবে। তবে এটি অবশ্যই স্বল্প ব্যয়ের সমাধান হতে হবে, যাতে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সুযোগগুলো নিতে পারে। এর জন্য আমাদের সনাতনী পদ্ধতির বাইরে আসতে হবে। আমরা এটা নিজেরা করার চেষ্টা করছি যাতে এটি শুধু স্কুলভিত্তিক না হয়। স্কুলের শিক্ষকরা যা করছে তারা সেটি করুক। শিক্ষকরা যেন না ভাবে যে শিশুরা বাইরে লেখাপড়া শিখছে, তাহলে তাদের আর কিছু করার নেই। আমরা চেষ্টা করছি, মা-বাবার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং স্কুলের বাইরের পদ্ধতিগুলো শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার। এটা করতে পারলে স্কুলশিক্ষকদের চাপও কমবে, একই সঙ্গে শিক্ষকদের গুণগত মানও বাড়বে। কিছুদিন পরে তারা নিজেরাই ডিজিটাল পদ্ধতিগুলো শেখানোর জন্য সুসজ্জিত হবে।

শিক্ষণ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?

করোনার সময়ে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার উদ্দেশ্য ভালো ছিল। কিন্তু মুশকিল হলো যাদের উদ্দেশে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তারা তেমন সুফল পায়নি। যাদের ইন্টারনেট বা টিভি আছে তারা হয়তো কিছুটা সুফল পেয়েছে। করোনার সময়ে তাদের অন্যান্য প্রাইভেট টিউটরিংয়েরও ব্যবস্থা ছিল। তবে দেখা গেছে শিক্ষণ গ্যাপ কমেনি। সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠী খুব একটা সুফল পায়নি। কিছু গত্বাঁধা কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে বেশি ছিল যারা তাদের জন্য পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট ছিল না।

সরকার সিলেবাস পরিবর্তন করছে, পরীক্ষায় পরিবর্তন আনছে। এটাকে কি আপনি সমর্থন করেন?

পরিবর্তনের জন্য এটি সঠিক সময় নয়। সিলেবাস পরিবর্তন বা পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করার এখন সঠিক সময় নয়। এখন আমাদের নজর দেয়া দরকার লার্নিংয়ে। আমি দেখছি, শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা শুধু পরীক্ষা নেয়ায় বর্তমানে জোর দিচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা নেয়াটা মুখ্য উদ্দেশ্য হতে পারে না। উদ্দেশ্য হলো ছেলেমেয়েদের শেখানো। পরীক্ষা নিয়ে তাদের যাচাই করার কিছু নেই। আমরা সবাই জানি আসলে কী ঘটেছে। যারা স্কুলে যায়নি, যাদের বাসায় লেখাপড়া শেখার মতো অবস্থা নেই, তারা অনেক পিছিয়ে গেছে। আসল ফোকাস হওয়া উচিত ছিল তাদের শেখানো। আগামী এক-দুই বছর পরীক্ষা না নিলেও চলে। আমাদের উচিত শিশুদের শেখানো। তারা যাতে স্কুলে আসতে অনুপ্রাণিত হয়, সেই চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি তাদের পরীক্ষা দিয়ে ভড়কে দিই তাহলে আর স্কুলে আসবে না। কারণ তারা জানে তারা তেমন কিছু শেখেনি। পরীক্ষায় তারা ফেল করবে। তার চেয়ে বরং পরীক্ষা না দিতে চাইবে। জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা যদি মনে করেন সিলেবাস পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, সেটি অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু এখন দেশের শিক্ষা জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন নতুন কোনো কিছু চালু না করে বরং মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের শেখানো উচিত। যেহেতু জরুরি সময়, সেহেতু এখন পরিবর্তন আনলে আরো জটিলতা তৈরি হবে, শিক্ষকদের মধ্যেও নানা ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হবে। থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান পদ্ধতি অনুসরণ করে লার্নিংয়ে জোর দিতে হবে, যাতে তারা দ্রুত শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারে।

আপনি অনেক দিন ধরে দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও কাজ করছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

করোনার সময়ে আমরা কিছু হেলথ মেসেজিং নিয়ে কাজ করেছি। একেবারে করোনার শুরুতে মানুষকে সতর্ক করার জন্য হাত ধোয়া, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য টেক্সট মেসেজ বা ফোনকলের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তাতে দেখেছি, মানুষের মধ্যে ঠিকমতো বার্তা পৌঁছে দেয়া গেলে তারা সেটা ঠিকভাবে আমলে নেয়। প্রশ্ন হলো, আমরা বার্তাটা সঠিকভাবে দিচ্ছি কিনা? শুরুতে মাস্কের ব্যাপারে বার্তা সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়নি। এমনকি প্রথম দিকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যে আয়োজন করা হলো তাতে একটা ভুল বার্তা গেল, ভ্যাকসিন অন্য রকম একটা বিষয় এবং এটা দেয়া মানে অনেক সাহসের পরিচয়। এটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল না।

আরেকটা হলো, যখন আমাদের নিকট আত্মীয়রা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেন, তখন বুঝেছি আমাদের হাসপাতালগুলোর অবস্থা কী। আমরা অনেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাসায় প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে হাসপাতালে যেতে না হয়। করোনার সময় সীমান্ত বন্ধ থাকায় পয়সা-কড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেকে অন্য দেশে যেতে পারেননি। করোনার কারণে অনেকে অসুস্থ হয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন। এসব জায়গায় আমাদের ভাবার সময় এসেছে। পরিমাণগত বিষয় চিন্তা না করে আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় যেসব মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার, সেটি নিয়ে ভাবা উচিত। সেটি না করলে আমরা বেশিদূর এগোতে পারব না। আমরা যদি শুধু দোষ দিই স্বাস্থ্য সরঞ্জাম নেই, এটি আসলে ঠিক নয়; তার চেয়ে বড় বিষয় হলো মেডিকেল কলেজগুলোয় যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তারপর আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারব।

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢাকা বা বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু জেলা পর্যায়ে বা মফস্বল পর্যায়ে অবকাঠামো আছে, কিন্তু চিকিৎসক বা সরঞ্জাম নেই। এক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আনা দরকার?

আমাদের জেলা পর্যায়ে বেশ কিছু প্রাইভেট ফ্যাসিলিটিজ গড়ে উঠেছে। দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেখানে প্র্যাকটিস করেন। এখানে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সুযোগ আছে। এটা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। রোগীরা যেহেতু পাবলিকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না, সেহেতু তারা প্রাইভেটে চলে যাচ্ছেন। একটা ইন্টারঅ্যাকশন কিন্তু অলিখিতভাবে হয়ে গেছে। সরকারের যে ক্যাপাসিটি আছে তা দিয়ে বিপুল মানুষের সেবা দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রাইভেট-পাবলিক যে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো আছে সেগুলো কীভাবে সমন্বয় করে সেবা দিতে পারে তার উপায় বের করতে হবে। সত্য যে প্রাইভেটে আউট অব পকেট ব্যয় অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে সরকার একটা দাম বেঁধে দিতে পারে। এটা অবশ্য স্বল্পমেয়াদের জন্য। দীর্ঘমেয়াদের জন্য একটা সমাধান বের করতে হবে।

গত দুই দশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও তা আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। সমস্যা কোথায়?

এখানে বড় সমস্যা দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি। আমাদের দক্ষতার অভাব ব্যাপক। দেশে যথোপযুক্ত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটছে না। যে কারণে যেসব খাতে অনেক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সেখানেও দক্ষতার ঘাটতি লক্ষণীয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ লোক নিয়ে আসছে। যথাযথ দক্ষতা অর্জন হচ্ছে না এবং যে ধরনের কর্মমুখী শিক্ষা দরকার সেটিরও উন্নয়ন হচ্ছে না। বিএ, এমএ পাস করে সবার কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান পাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষায় জোর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে না পারলে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দেখবে মানুষের দক্ষতা দিয়ে তাদের উৎপাদনশীলতা আর বাড়ানো যাচ্ছে না, তখন তারা বেশি ফোকাস দেবে প্রযুক্তিতে। তখন প্রযুক্তির ওপর আরো নির্ভরশীলতা বাড়বে। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের এমনিতেই বাড়বে। তখন আরো দ্রুত বেড়ে যাবে।

আমরা দেখছি, উচ্চহারে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এখানে একটা গ্যাপ রয়েছে। গ্যাপটি কোথায় সেটি খুঁজে বের করতে হবে। বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের উপায় প্রশিক্ষণ মানবসম্পদ উন্নয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত না করলে সমস্যার রাতারাতি সমাধান হবে না। আশঙ্কা হয় কিছুদিন পরে হয়তো আমাদের প্রবৃদ্ধিও থেমে যাবে। অবকাঠামোনির্ভর প্রবৃদ্ধি দিয়ে খুব বেশিদূর এগোনো যাবে না। যেখানে-সেখানে রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, ব্রিজ নির্মাণ করলেই টেকসই প্রবৃদ্ধি হবে না। প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করার জন্য আমাদের প্রয়োজন অব্যাহত রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন। সেই জায়গাগুলোয় আমাদের নজর দিতে হবে। সেজন্য যে ধরনের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার অনেক স্কিল ডেভেলপমেন্ট  প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। সেগুলো কেন ফলপ্রসূ হচ্ছে না?

একটি বিষয় হলো যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলোয় যথেষ্ট দুর্বলতা রয়ে গেছে। আরেকটি বিষয়, ওইসব প্রতিষ্ঠানের যে ধরনের স্বাধীনতা দরকার এবং যে ধরনের লোকজন দিয়ে চালানো দরকার, সেই ধরনের লোকজনের ঘাটতি রয়েছে। সব মিলিয়ে সেগুলো তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

আমাদের প্রতিযোগী দেশের একটা হলো ভিয়েতনাম। তাদের চেয়ে আমাদের অগ্রগতি ধীর বলে অনেকে বলেন। কেন পিছিয়ে থাকছি আমরা?

প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য যে ধরনের স্কিল দরকার, সেদিক থেকে আমরা ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে। তাদের প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো মানের। বেসিক এডুকেশনের দিক থেকে ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে এগিয়ে। জায়গায় তারা স্কিল ডেভেলপ করেছে। তাছাড়া কর্মপরিবেশের দিক থেকেও আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে। এখন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে শুধু নিম্ন ব্যয়ের শ্রম দিয়ে হবে না, আমাদের একটা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের হাই ভ্যালু পণ্য উৎপাদনে যেতে হবে। সেদিকে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। দুর্বল মানবসম্পদের কারণে আমরা দক্ষতাভিত্তিক প্রযুক্তিতে যেতে পারছি না, যা ভিয়েতনাম পারছে।

হাই স্কিল বেজড টেকনোলজিতে গেলে কি মুনাফা কমে আসবে?

আমি সেটি মনে করি না যে মুনাফা কমবে। বরং এখানে কর্মসংস্থানের ওপর একটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে একটা অংশ চাকরি হারাবে। আবার সম্ভাবনা আছে, অনেক নতুন চাকরিও তৈরি হবে। সেভাবে আমাদের মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।

বিভিন্ন দেশে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায়ও বহিঃস্থ অভিঘাতের কারণে অর্থনৈতিক ধস নামছে, যেহেতু তারা দুর্বল ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষেত্রে আমাদের কি সতর্ক হওয়া উচিত?

অবশ্যই, যেকোনো বহিঃস্থ অভিঘাতের জন্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। এর জন্য স্বল্পমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, সেগুলো আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত। আমি ম্যাক্রো-ইকোনমিস্ট নই। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের রফতানিমুখী প্রবৃদ্ধি তৈরি পোশাক কিংবা রেমিট্যান্সে কোনো কারণে বড় ধরনের অভিঘাতের মুখোমুখি হলে বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে আমরা সংকটের মধ্যে পড়ব। শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ থেকে সৃষ্ট। পরিশোধ করতে পারবে কিনা সেটি বিবেচনা না করেই দেশটি বিপুল অর্থ ঋণ করেছে। করোনার ঠিক আগেই তাদের কর রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। কারণ তারা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কর কমিয়েছিল। যার কারণে কর রাজস্ব আহরণ তাত্পর্যজনকভাবে কমে গিয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনার সময়ে কারা কৃষিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। ফলে ফলন বিপর্যয় হয়। তদুপরি করোনা মহামারীতে পর্যটন খাতে ধস নেমেছিল। ডেট সার্ভিসিং করার জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দরকার তাদের সেটা ছিল না। এটা তাদের লং টার্ম মিসক্যালকুলেশনের ফল।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা ভালো। উপরন্তু সামষ্টিক অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলো শক্তিশালী। তবুও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু অর্থনৈতিক শক দেখেছি। ধরনের শক আগামী দিনে আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কাজেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

আবারো বলছি, দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বশীলতার জন্য আমাদের নজর দিতে হবে মানবসম্পদের ওপর। তারপর নজর দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের ওপর। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব প্রতিষ্ঠান সব পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপরে স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সুপ্রশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে গবেষক তৈরিতে দৃষ্টি দিতে হবে। রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে।

আমাদের দুটো দিকে জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দিতে হবে আর তা হলো শিক্ষা স্বাস্থ্য। শুধু বেশি অর্থ বরাদ্দ দিলেই হবে না, গুণগত মান উন্নয়ন করতে হবে। কোয়ালিটি এক্সপেন্ডিচার এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাতের বরাদ্দ কোথায় হচ্ছে, সেগুলোর ব্যবহার কেমন হচ্ছে সেদিকে নজর দিতে হবে। লার্নিং লস অ্যাড্রেস করার জন্য সরকার বাড়তি কী করছে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য খাতের দুর্দশা আমাদের কাছে পরিষ্কার  হয়ে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে ফাংশনিং করতে হবে। এগুলো দিয়ে অন্তত প্রাইমারি হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করতে হবে।

এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই বলছেন পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় মানবসম্পদের অবস্থা খারাপ। আমরা একদিকে বলছি উন্নত দেশ হব, কিন্তু কিছু ইনডিকেটর উল্টো দিকে যাচ্ছে। আমাদের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যে দাবি করতে পারি এটা বিশ্বমানের। না শিক্ষা, না স্বাস্থ্য কোনো খাতেই নেই। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান বাড়াতে হবে। জায়গায় এত অবনতি হয়েছে যে আমার শঙ্কা হয়, আমরা হয়তো এক জায়গায় থেমে যাব। তখন তেমন কিছু করার থাকবে না।

 

শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন