![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_304220_1.jpg?t=1722052618)
আন্তর্জাতিক বাজারে একদিনের ব্যবধানে ব্যারেলপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৬ ডলার কমেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনতে চাপ দেয়ায় পণ্যটির এমন নিম্নমুখিতা তৈরি হয়। খবর রয়টার্স।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রীষ্ম মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির ব্যবহার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে পরিবহন ও শিল্প খাতে জ্বালানির চাহিদা এমন আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেশটির শীর্ষ জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে চাপ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
তথ্য বলছে, গতকাল নিউইয়ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ৫ ডলার ৯৮ সেন্ট বা ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেল লেনদেন হয়েছে ১০৩ ডলার ৫৪ সেন্টে।
অন্যদিকে, আইসিই ফিউচারস ইউরোপে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৫ ডলার ৬৭ সেন্ট বা ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ১০৮ ডলার ৯৮ সেন্টে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ। গ্যাসোলিনের আকাশছোঁয়া দাম ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটি হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাইডেন সম্প্রতি প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিনের ওপর আরোপিত ১৮ ডলার ৪০ সেন্ট ফেডারেল ট্যাক্স প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে সম্প্রতি রেকর্ড মুনাফা লাভ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানিকে দাম কমিয়ে আনতে অব্যাহত চাপ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ সাতটি শীর্ষ কোম্পানির সঙ্গে বাইডেনের একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এ পদক্ষেপ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খুব বেশি কার্যকর হবে না বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।
এদিকে মূল্যস্ফীতির উদ্বেগ সত্ত্বেও জ্বালানি চাহিদা করোনা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না সরবরাহ। বাজার ভয়াবহ সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। ফলে দাম কমে যাওয়ার এ প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যেকোনো সময় দাম আবার বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেনজি সম্প্রতি জানায়, আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের ওপরে অবস্থান করবে। চলতি বছর গড় দাম থাকবে ১১০ ডলারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিশোধন খাত যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ মাত্রায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে ডিজেলকে। তবে চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ এখনো অপর্যাপ্ত। কারণ বিশ্ব অর্থনীতিগুলোয় করোনা মহামারীউত্তর সময়ে খুব দ্রুত প্রসার ঘটছে।
উডম্যাকের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা অনুভূত হয়েছে গ্যাসোলিন ও ডিজেল খাতে। এসব পণ্যের সরবরাহে দৈনিক আট লাখ ব্যারেলেরও বেশি ঘাটতি রয়েছে। জ্বালানির আকাশচুম্বী দামের কারণে গৃহস্থালিগুলো দৈনন্দিন ব্যয়ের বাজেট কমাতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ ব্যয়ও আকাশচুম্বী।
উডম্যাকের প্রত্যাশা, চলতি বছরের আগামী তিন প্রান্তিকে প্রায় দৈনিক ২৫ লাখ ব্যারেলের নতুন পরিশোধন সক্ষমতা তৈরি হবে। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের জিজান পরিশোধন কেন্দ্র। এটির পরিশোধন সক্ষমতা দৈনিক চার লাখ ব্যারেল। নাইজেরিয়ার ড্যানগোট পরিশোধন কেন্দ্র, যার সক্ষমতা দৈনিক সাড়ে ছয় লাখ ব্যারেল। দৈনিক ৬ লাখ ১৫ হাজার ব্যারেলের সক্ষমতা নিয়ে তৈরি হবে কুয়েতের আল জৌর পরিশোধন কেন্দ্র। এছাড়া নতুন বেশ কয়েকটি পরিশোধনকেন্দ্র চালু করবে চীন।