ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রলীগ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে গত কয়েক দিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন সূত্রমতে, সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ২০-২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে শুধু ছাত্রদলেরই অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করেছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আক্তার হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি জানান, তাদের ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাতজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া তিনজন আইসিইউতে আছেন।

এর আগে গত রোববার একটি বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তুমি সম্বোধন করে বক্তব্য রাখেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন সন্ধ্যায় ঢাবির টিএসসি এলাকায় কয়েকজন নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরদিন মঙ্গলবারও একই ঘটনা ঘটে। পরপর দুদিনের সংঘর্ষের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় ছাত্রদল। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে রড, হকিস্টিক, চাপাতি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে মিছিল বের করে ছাত্রদল। এতে সংগঠনটির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের কাছাকাছি আসতেই ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসার খবর পেয়ে আগে থেকেই লাঠিসোঁটা দেশীয় অস্ত্র হাতে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতেই দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পিছু হটে ছাত্রদল। ছত্রভঙ্গ হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব হাইকোর্টের ভেতরে আশ্রয় নেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের পেছনে ধাওয়া করে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। সময় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে এলোপাতাড়ি কোপায় হামলাকারীরা। তাদের বাঁচাতে দুজন আইনজীবী এগিয়ে গেলে তারাও হামলার শিকার হন। পরে তাত্ক্ষণিক মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস।

পরে হামলা ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তারা বলেন, ছাত্রদল তার পুরনো ইতিহাসের মতো ফের ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। যেভাবে তারা অতীতে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এখনো তারা সেটাই করছে। এরই অংশ হিসেবে মিছিলের নামে মহড়া দিচ্ছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে শান্তিপূর্ণ রাখতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছে। তাদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, খুন হত্যা হতে দিতে পারি না। বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মেধাবীর প্রাণ ঝরেনি। কারণ কোনো সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতের মতো সন্ত্রাসীদের হাতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাণ ঝরুক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা চায় না।

মঙ্গলবারের ঘটনায় ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক . একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টে যারা তত্পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রক্টরিয়াল টিম তত্পর। আমরা দুই পক্ষকেই দেখেছি লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে আসতে। তাই ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবি ভিডিও ফুটেজ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন