ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক

অনুমোদনহীন যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে চলছে অনুমোদনহীন যানবাহন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এখন অবৈধ যানের কারণে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, নসিমন-করিমন। মহাসড়কে অবৈধ এসব ছোট যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নির্দেশনা মানছেন না কেউ। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। নিয়ে বাস ট্রাকচালকদের নানা অভিযোগ থাকলেও এসব যান চলাচল বন্ধে কঠোর কোনো অবস্থানে যাচ্ছে না পুলিশ। তাদের দাবি তারা বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনার পাশাপাশি বড় দুর্ঘটনার কারণ ঘটানোর আশঙ্কা তৈরি করছে এসব যানবাহনের অবাধ চলাচল।

বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকায় কথা হয় বাসচালক মহসিন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রার কারণে মহাসড়কে গাড়ি চালানোই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটছে। তার অভিযোগ, চালকদের ৯০ শতাংশেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। তার পরও এসব যানবাহনের মহাসড়কে চলার অনুমতি নাই। অবৈধভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলাচল করছে এসব গাড়ি।

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কজুড়েই চলছে নিষিদ্ধ ছোট যান। যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। এজন্য প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকায় সড়কের নির্দেশনাও মানছে না তারা। এসব ছোট যানের জন্য বড় পরিবহনও প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ প্রশাসন অভিযানের নামে এসব যান চলাচল বন্ধ না করে টাকা খাওয়ার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, নসিমন-করিমন এসব আটকের পর টাকার বিনিময়ে ফের ছেড়ে দিচ্ছে। যার কারণে তাদের কাছে কোনো গাাড় আটক রয়েছে তেমন নজিরও নেই।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পরিবহন চালক কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ যদি একটু সৎ হতো তাহলে মহাসড়ক দিয়া রিকশাও চলতে পারত না। দ্রুত গতির গাড়ির সামনে যদি হঠাৎ একটা কম গতির গাড়ি এসে পড়ে তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও দ্রুতগতির যান চালকের তখন কিছু করার থাকে না। 

বাসচালক শমসের আলী বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাড়ি চালাই ২০ বছরের বেশি সময়। আগে যে স্পিডে গাড়ি চালাইছি, সেই স্পিডে এখন আর গাড়ি চালাতে পারি না। অলিগলি দিয়া হুটহাট ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা মহাসড়কে উইঠা যায়। আর হুট করে সামনে চলে আসে। তারপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কেউ নেবে না। থ্রি হুইলারগুলা হলো, মরণ ফাঁদ। সাধারণ যাত্রীরাও বোঝে না এসব যানবাহনে চলাচল জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।

চালক শমসের অভিযোগ করে আরো বলেন, পুলিশ সব বিষয় জানে, কিন্তু তারা কিছু কয় না। পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব যানবাহন রাস্তায় চলে। আবার পুলিশ থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রাগুলো রিকুজিশন নিয়ে বিভিন্ন সময় কাজে লাগায়। কারণে এরা পুলিশের কাছ থেকে বিশেষ ছাড়ও পায়। তারা যদি মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে, তাইলে থ্রি হুইলারগুলো মহাসড়কে ওঠা বন্ধ করতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মহাসড়কে গাড়ি চালাতে কোনো সমস্যা হয় না বলে জানিয়েছেন একাধিক থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা চালক। জসীম নামে এক মাহিন্দ্রা চালক বলেন, মহাসড়ক দিয়েই তো প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে যাই। কেউ কোনো বাধা দেয় না। এছাড়া প্রতিদিন টাকা দেই, ওই ভাগ পুলিশেও নেয়। এজন্যই পুলিশ ধরে না। একই কথা বলেছেন মাহিন্দ্রা চালক সুমন, রাজু সুরেশ।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস চলাচলের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলারগুলো একটি সমস্যা। ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করে, যেসব কারণে কন্ট্রোল না থাকায় প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস চালাতে খুব অসুবিধায় পড়তে হয়। এসব বিষয় পুলিশকে জানানো হয়েছে, তারাও অবগত। দিন দিন মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে থ্রি হুইলারের কারণে বড় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

ব্যাপারে গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি শেখ বেলাল হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি স্থানীয়দের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। কারো সহযোাগতা পাচ্ছি না। সবার সহযোগিতা পেলে মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল করতে দেয়া হয় না। আর তাছাড়া থ্রি হুইলার থেকে পুলিশের বাড়তি সুবিধা নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। যদি তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে যে পুলিশ সদস্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন