তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিএসইসি

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্টক লভ্যাংশ জমা দেয়ার নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে (সিএমএসএফ) অদাবীকৃত বা অনিষ্পত্তীকৃত কিংবা বরাদ্দ করা হয়নি এমন স্টক লভ্যাংশ অথবা বোনাস শেয়ার বা অদাবীকৃত রাইট শেয়ার জমা দিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে স্টক লভ্যাংশ বা শেয়ার জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে -সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জারি করা -সংক্রান্ত নির্দেশনা পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল বিধিমালার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, অদাবীকৃত বা অনিষ্পত্তীকৃত কিংবা বরাদ্দ করা হয়নি এমন স্টক লভ্যাংশ অথবা বোনাস শেয়ার বা অদাবীকৃত রাইট শেয়ার ঘোষণা, অনুমোদন কিংবা রেকর্ড ডেটের পর তিন বছর সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে এসব শেয়ার পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের বিও হিসাবে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে জমা দেয়ার আগে অবশ্যই ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি লভ্যাংশ বিতরণ প্রতিবেদন এবং এসব শেয়ারধারীর বিস্তারিত তথ্য কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে জমা দিতে হবে। শেয়ার হস্তান্তরের আগে শেয়ারধারীদের ৩০ দিনের আগাম নোটিস  দিতে হবে। নোটিসের সময়সীমা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর কার্যক্রম শেষ করতে হবে। তবে শেয়ার হস্তান্তর কার্যক্রম আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

বিএসইসির চিঠির অনুলিপি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানিসহ তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী, সব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল আইসিবিকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের বিও হিসাব খোলা তালিকাভুক্ত কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার জমা করার বিষয়টি তদারক করা এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিশনের কাছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জমা দেয়া তথ্যানুসারে, স্টক নগদ লভ্যাংশ মিলিয়ে পর্যন্ত পুঞ্জীভূত অপরিশোধিত লভ্যাংশের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকায়। এর মধ্যে স্টক লভ্যাংশ ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি নগদ লভ্যাংশ ৯৫৬ কোটি টাকা। মোট অপরিশোধিত লভ্যাংশের মধ্যে ১০ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকাই রয়েছে শীর্ষ ১০ কোম্পানির কাছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অপরিশোধিত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবিসি) কাছে। এর মধ্যে হাজার ৪০৩ কোটি টাকা স্টক লভ্যাংশ।

এছাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানির কাছে ৯২৩ কোটি ৬৮ লাখ, আইসিবির ২২২ কোটি ৯১ লাখ, ইসলামী ব্যাংকের ২৪৯ কোটি ৩৭ লাখ, উত্তরা ব্যাংকের ১৯৬ কোটি ৪৫ লাখ, ন্যাশনাল টিউবসের ১৯০ কোটি ১৩ লাখ, রাষ্ট্রায়ত্ত এটলাস বাংলাদেশের ১৫০ কোটি ৩৮ লাখ, ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের ১৪২ কোটি ৪৮ লাখ ব্যাংক এশিয়ার কাছে ৯৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার অপরিশোধিত স্টক লভ্যাংশ রয়েছে।

এদিকে এরই মধ্যে কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে অপরিশোধিত নগদ লভ্যাংশের অর্থ জমা দেয়নি তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসইবিএসইসির কাছে বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন পাওয়ার পর লভ্যাংশ জমা না দেয়া এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক . শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমে আমরা নগদ লভ্যাংশ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এবার স্টক লভ্যাংশ জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্টক কিংবা নগদ যা- হোক অপরিশোধিত লভ্যাংশের অর্থ নির্দেশনা অনুসারে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে জমা দিতেই হবে। এক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশনা পরিপালনে ব্যত্যয় হলে সিকিউরিটিজ আইনানুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন