রক্তপাত ছাড়াই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে তালেবানরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সড়কে উচ্ছ্বসিত তালেবান যোদ্ধারা ছবি: এপি

আশরাফ গনি নাকি মোল্লা আব্দুল গনিক্ষমতার লড়াইয়ে কে টিকবেন প্রশ্নে মাসখানেক আগেও হয়তো প্রথম গনির দিকেই পাল্লা ভারী ছিল। কিন্তু তালেবানদের অবিশ্বাস্য উত্থান অগ্রগতি আর সরকারি বাহিনীর কাপুুরুষোচিত আত্মসমর্পণ আশরাফ গনিকে ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে দিয়েছে। চারপাশ থেকে রাজধানী কাবুলকে ঘিরে ফেলার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে চাপ দেয় তালেবানরা। নিরুপায় প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। হামলার শুরুর দিকে তালেবানরা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়লেও পরে বিনাযুদ্ধেই দখল করে নিতে থাকে বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানী। আগস্ট জারাঞ্জ দিয়ে শুরু; এরপর অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় মাত্র ১০ দিনে কাবুলে পৌঁছায় তালেবান সশস্ত্র যোদ্ধারা।

এর আগে মার্কিন গোয়েন্দারা অনুমান করেছিলেন কাবুলের নিয়ন্ত্রণ পেতে তালেবানদের হয়তো মাস তিনেক সময় লাগতে পারে। তাদের সে ধারণার চেয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে আফগানিস্তানের সব বড় শহরের দখল নিশ্চিত করে তালেবান যোদ্ধারা। মাজার শরিফের পর যুদ্ধ ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদের দখল তালেবানদের হাতে চলে যায়। জালালাবাদের পাশে পাকিস্তানের সঙ্গে যাতায়াতের সড়কটির অবস্থান। রোববার সকালে রাজধানী কাবুলেও ঢুকে পড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।

একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, কাবুলে তালেবানদের তেমন কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি। এরপর তালেবানদের শীর্ষ নেতারা বলেন, তারা জোর করে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান না। সে সঙ্গে যোদ্ধাদের সহিংসতা এড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টুইট বার্তায় তালেবানদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো সাধারণ নাগরিক কাবুল থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেবে না তালেবান। তবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত নয় তারা। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর কোনো প্রতিশোধ নেয়া হবে না উল্লেখ করে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন।

পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তালেবান প্রতিনিধিরা। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি কার কাছে ক্ষমতা ছাড়বেন তা নিয়ে চলে দরকষাকষি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদলে আলোচনা চলার কথা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সাত্তার মির্জাকওয়াল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা প্রস্তুত। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে পারেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমেদ জালালি। তবে তাকে সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে নেয়নি তালেবানরা। কাতারের রাজধানী দোহায় দুপক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে রোববারও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে আলোচনা হয়েছে।

তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহিন রোববার বিবিসিকে জানান, তাদের কাবুলে আসতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। নারী অধিকার রক্ষা এবং গণমাধ্যম কূটনীতিবিদদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বলেন, আশ্বস্ত করছি কাবুলের বাসিন্দাদের জানমাল নিরাপদে থাকবে। তাদের মূল বাহিনীকে শহরে না ঢুকে কাবুলের দোরগোড়ায় থাকতে বলা হয়েছে।

রোববারও কাবুল বিমানবন্দরে বিপুল ভিড় দেখা গেছে। দেশ ছাড়তে আগ্রহী এসব বিপুল মানুষের চাপে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে সবগুলো সড়কে যানজট তৈরি হয়। অনেকে দীর্ঘ পথ হেঁটেই পৌঁছান বিমানবন্দরে। বিবিসি জানিয়েছে, দেশ ছাড়তে ঘণ্টা হেঁটেও কেউ কেউ বিমানবন্দরে পৌঁছান।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই নারী, সংখ্যালঘু মানবাধিকার কর্মীদের রক্ষায় স্থানীয় আন্তর্জাতিক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ন্যাটো কাবুলে কূটনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অফিশিয়াল সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, বিমানবন্দর সচল রাখতে সহায়তা করবে ন্যাটো।

এদিকে আফগান পরিস্থিতির জন্য অনেকে দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তালেবানদের অগ্রযাত্রা ইস্যুতে অবশেষে মুখ খুলেছেন তিনি। এক বিবৃতিতে বাইডেন ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলেছেন, মার্কিন সেনা উপস্থিতি এক বছর কিংবা পাঁচ বছর হলেও কোনো পার্থক্য হবে না যদি আফগান সেনারা নিজ দেশের দায়িত্ব না নেয়। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার উপায় নেই জানিয়ে তিনি এর দায় আগের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপান। তিনি তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ খুব ক্ষিপ্র অবিশ্বাস্য বলেও মন্তব্য করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন