শান্তর নেতৃত্বে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৫ জনের স্কোয়াডটা আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কাছে পাঠাতে হয়েছে। তবে সুযোগ ছিল সংযোজন-বিয়োজনের। তাতে একটি পরিবর্তন এনে গতকাল আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ। দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবির নির্বাচক প্যানেলের প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বিশ্বকাপ স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করেন। এ স্কোয়াডের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তার ডেপুটি করা হয়েছে জ্যেষ্ঠ পেস বোলার তাসকিন আহমেদকে।

বিশ্বকাপগামী স্কোয়াডে একটি পরিবর্তন নিয়েই মূলত আলোচনা-শোরগোল। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ১৫ উইকেট শিকার করে ফরচুন বরিশালকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কারিগর পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন প্রায় দেড় বছর পর জাতীয় দলে ফেরেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে। এ সিরিজে তিনি ৮ উইকেট শিকার করেন চার ম্যাচ খেলে। রান বেশি খরচ করলেও সবাই ধারণা করছিলেন, বিশ্বকাপগামী বিমানে উঠবেন সাইফউদ্দিনও। কিন্তু নির্বাচকরা চমকই দেখালেন। লিপু জানালেন, সাইফউদ্দিনের জায়গায় তারা বিশ্বকাপের দলে রেখেছেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে। 

বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর সাইফউদ্দিনের বাদ পড়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যে দলটা আমরা দিয়েছিলাম গত ৩০ এপ্রিল, সেটা একটা প্রেক্ষাপটে দেয়া হয়েছিল। প্রথমত, যারা ফিট আছে তাদের প্রাধান্য দেয়া। আরেকটা হলো আমাদের কিছু চোটগ্রস্ত ক্রিকেটার আছে এবং কিছু পরখ করে দেখার ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে সাইফউদ্দিনের ব্যাপারটা, তিনি কীভাবে ফেরত আসেন। তার পারফরম্যান্স একটু বিশ্লেষণ করার দরকার ছিল। সেই আলোকে আমরা আস্থার জায়গা থেকে সাইফউদ্দিনকে রেখেছিলাম। তাকে পর্যবেক্ষণের পর আমাদের মনে হয়েছে, প্রত্যাশার যে জায়গাটা, আস্থার যে জায়গাটা, ঠিক সেই আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় কিছুটা এগিয়ে তানজিম সাকিব। সেই আলোকেই সাইফউদ্দিন দলে জায়গা করতে পারেনি। তবে সে খুব কাছাকাছি ছিল।’

জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুই ম্যাচে মাত্র এক উইকেট নিয়েও বিশ্বকাপের দলে তানজিম। মূলত খেলার প্রতি তানজিমের একাগ্রতা ও নিবেদন নজর কেড়েছে নির্বাচকদের। লিপু বলেছেন, ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে ম্যাচের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দলে দাবি মেটাতে না পারার কারণেই শেষ পর্যন্ত তানজিমের কাছে জায়গা হারিয়েছেন সাইফউদ্দিন। তানজিমকে আমরা শ্রীলংকা সিরিজেও দেখেছি। তার একাগ্রতা, মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেয়ার প্রচেষ্টা এসব তাকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। ফিল্ডিংয়েও সে খুব ভালো। আমরা যে কারণে একটু মুখিয়ে ছিলাম, সাইফউদ্দিনের দিকে, তিনি ব্যাটিং করার তেমন সুযোগ পাননি।’

ডেথ ওভারে দুজনের বোলিংয়ের তুলনা করে লিপু বলেন, ‘তার ডেথ ওভারে ইয়র্কার করার যে সামর্থ্যটা ছিল, সেটা অনেক কম পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে আরো অনেক উন্নতি করতে হবে। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সে যেমন করেছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা তারতম্য লক্ষ্য করেছি। না হলে সে আমাদের ভাবনায় ছিল। বিপিএলের আলোকে চিন্তা করেই আমরা দল গুছিয়েছিলাম। আমরা সেই দল থেকে খুব বেশি বিচ্যুত হইনি। সাইফউদ্দিনই একমাত্র যে আমাদের ৩০ তারিখের দল থেকে বিশ্বকাপে যেতে পারছে না।’

সাদা বলে বেশ কিছুদিন ধরে ফর্মহীনতায় লিটন দাস। শ্রীলংকার বিপক্ষে সম্প্রতি হোম সিরিজে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে তো তিনি বাদই পড়েন। জিম্বাবুয়ে সিরিজেও রান পাননি। তাই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল লিটন দাসের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও। 

এর ব্যাখ্যা প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘লিটন দাসকে আমরা যে ম্যাচটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি, ওটা সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ ছিল (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি)। আমাদের একটা সিদ্ধান্তে যেতে হয়েছিল একটি বিশেষ ম্যাচের জন্য। এক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায় যেটা ছিল, লিটনের পরিবর্তে ভাবতে গেলে উইকেটকিপিং সামর্থ্যও সেখানে এসেছে। কারণ, দুজন কিপার নিয়ে যেতেই হবে। কনকাশনের ব্যাপার আপনারা সবাই জানেন। শুধু ওপেনিংয়ের বিকল্প বললে হয়তো অন্য নাম আসত। কিন্তু ফর্মের ঘাটতির পরও লিটনের ওপর আমরা আস্থা রেখেছি। তাকে নিয়ে কিন্তু কাজ করা হচ্ছে। কোচিং স্টাফ এই ক’দিন নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে লিটনের ব্যাটিং নিয়ে।’

বিশ্বকাপের দলে সবচেয়ে বেশি আলোতে থাকবেন সাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৪৫) ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ (৪৭) উইকেট শিকারি বোলার তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান তোলার দিক থেকেও তিনি আছেন আট নম্বরে। অসংখ্য মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এ সুপারস্টার আরেকটি বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের আশা-ভরসার কেন্দ্রে থাকবেন। 

বাংলাদেশ স্কোয়াডে খুব একটা চমক নেই। টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে শান্ত, লিটন, সৌম্য ও তানজিদ এবং মিডল অর্ডারে থাকছেন সাকিব, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী, মাহমুদউল্লাহ। অলরাউন্ডার হিসেবে স্কোয়াডে আছেন সাকিব ও রিশাদ হোসেন। বোলিংয়ে তাসকিনের সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান। সাকিবের পাশাপাশি স্পিনার হিসেবে থাকছেন তানভীর ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন আর মাহমুদউল্লাহ। 

ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে দলে আছেন বামহাতি ব্যাটার আফিফ হোসেন ও পেস বোলার হাসান মাহমুদ। মূল স্কোয়াডের কেউ ইনজুরিতে পড়লে তাদের মধ্যে কেউ সুযোগ পেতে পারেন। তবে বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৭ জনই খেলার সুযোগ পাবেন। 

‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের গ্রুপসঙ্গী শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। ৮ জুন সকালে ডালাসে সিংহলিজদের মুখোমুখি হবে শান্ত ও তার সহযোদ্ধারা। 

লংকানদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ জেতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক লিপু বলেন, ‘প্রত্যাশা তো নিশ্চয়ই থাকে। আমরা প্রতিটা ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। তবে বাস্তবতার নিরিখে বলব, মোমেন্টাম পাওয়ার জন্য প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচে দুটি দলই জিততে চাইবে এবং দুটি দলই চাপে থাকবে। আমরা যদি ম্যাচটি জিততে পারি, তবে পরের তিন ম্যাচ থেকে দুটি জেতার অনেক সম্ভাবনা থাকবে।’

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড 

নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, তানভীর ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব। ট্রাভেলিং রিজার্ভ: আফিফ হোসেন, হাসান মাহমুদ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন