কঠোর বিধিনিষেধে শুটিং হাউজের মালিকদের কপালে ভাঁজ

কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

শুটিং হাউজে নাটকের শুটিং

আগে নাটক-সিনেমায় দেখা যেত নায়িকার বাবা চৌধুরী সাহেব নায়ককে হুমকি দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা নায়কের মাথার ওপর বিশাল ঝাড়বাতি। ড্রইংরুম থেকে বেড়রুমের দুই পাশ দিয়ে দুটি সিঁড়ি উঠে গেছে। একসময় মনে হতো চৌধুরী সাহেব বুঝি এসব বাড়িতেই থাকেন। এটাই চৌধুরী বাড়ি। কিন্তু পরে যখন দেখা যেত আরেক ছবিতে তালুকদার সাহেবের বাড়িও একই রকম, সেই একই সিঁড়ি, একই ঝাড়বাতি, একই ড্রইংরুম, দর্শকের খটকা লাগত। একসময় জানা গেল বাড়িগুলো চৌধুরী কিংবা তালুকদার সাহেবদের নয়। তারা ভাড়া নেন। শুটিং করেন। শুটিং শেষে তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে আসেন। সেই একই বাড়িতে নতুন চরিত্র, নতুন সংলাপ নিয়ে হাজির হন শিকদার সাহেব। 

এখন প্রায় সব শ্রেণীর দর্শক জেনে গেছে এগুলো বিশেষ ধরনের বাড়ি। যেখানে শুধু শুটিং হয়। পরিচালক-প্রযোজকরা ভাড়া নিয়ে শুটিং করেন, শুটিং শেষে চলে আসেন। বাড়িগুলোকে বলে শুটিং হাউজ ঢাকার উত্তরা, মগবাজার, মোহাম্মদপুর মিরপুর এলাকায় রয়েছে বেশকিছু শুটিং হাউজ। এছাড়া ঢাকার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি শুটিং হাউজ আছে। তবে উত্তরা, পুবাইল গাজীপুরে শুটিং হাউজের সংখ্যা বেশি।

চলমান শাটডাউনের শুরু থেকেই বন্ধ আছে নাটক-সিনেমার শুটিং। ঈদের আগে বিশেষ অনুমতি নিয়ে শুধু ঈদের অনুষ্ঠানগুলোর শুটিং হয়েছে। এখন সব ধরনের শুটিং বন্ধ আছে। অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, কেমন আছে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের সঙ্গে সঙ্গে সংলাপে মুখর হয়ে ওঠা শুটিং হাউজগুলো। কেমন আছে -সংশ্লিষ্ট মানুষেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশে -খানেক প্রফেশনাল শুটিং হাউজ আছে। হাউজপ্রতি মাসে লাখ টাকা লোকসান হলেও সব মিলিয়ে কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে খাতের বিনিয়োগকারীদের। দিন দিন নাটক-সিনেমার বাজেট কমার ফলে তারা যে ভাড়া বাড়িয়ে লোকসান পুষিয়ে নেবেন, সেই সুযোগও নেই। অবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন শুটিং হাউজ মালিকরা।

শুটিং হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আপনঘর শুটিং হাউজের স্বত্বাধিকারী খলিলুর রহমান বণিক বার্তাকে আক্ষেপ করে বলেন, আমি তিনটা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে শুটিং হাউজ দিয়েছি। তিনটা বিল্ডিংয়ের ভাড়া, জনবল ইউটিলিটি মিলিয়ে খরচ হয় মাসে লাখ টাকা। যদি নিয়মিত শুটিং হয়, তাহলে আমাদের লাভ হয় মাসে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। লকডাউনের শুরু থেকেই তো শুটিং হচ্ছে না। আমরা লাখ লাখ টাকা লস দিচ্ছি। টাকা কবে কীভাবে তুলব, আদৌ তুলতে পারব কিনা, সেই চিন্তায় এখন দিন যায়।

লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতেই কষ্ট হবে বলে জানান খলিলুর রহমান। পাশাপাশি তিনি প্রত্যাশা করছেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আবার হাউজগুলো মুখরিত হবে নাটক-সিমেনার সংলাপে। তবে শুটিং হাউজগুলোর বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক ক্যাটাগরির হওয়ায় তাদের আরো বেশি লসের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নোঙ্গর শুটিং হাউজের মালিক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, আমরা খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। লকডাউনে শুটিং হচ্ছে না। প্রতি মাসে বড় একটা অ্যামাউন্ট খরচ হয়। সেই খরচটা ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কোনো আয় হচ্ছে না। ঈদের এক মাসে লাখখানেক টাকা আয় হতো। আয় তো হয়ইনি বরং প্রতি মাসে দেড় লাখ থেকে লাখ ৭০ হাজার টাকা পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন টানতে পারব বুঝতে পারছি না। 

ঢাকার মগবাজারে মালেকা চৌধুরী শুটিং হাউজের মালিক আকাশ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আমি নতুন ব্যবসা শুরু করেছি। শুটিং হাউজ শুরুর পর ১০-১৫ দিন শুটিং করতে পেরেছি। এর পরই শুরু হয়েছে লকডাউন। যে মূলধন নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলাম, তার সবই প্রায় শেষ। শুটিং হোক আর না হোক, বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, কর্মচারীর বেতন দিতে হয়, ইউটিলিটি খরচ আছে। এছাড়া আমাদের নিজেরও ভরণ-পোষণের খরচ আছে। সব মিলিয়ে কী যে অবস্থায় আছি বলে বোঝাতে পারব না। লকডাউন শেষ করে দিল আমাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন