গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট

বিধিনিষেধেও সুপার মার্কেটে জনসমাগম বেড়েছে ৫৬%

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহের সংক্রমণ প্রতিরোধে এপ্রিল থেকে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। সর্বশেষ এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। জনসমাগম এড়ানোর লক্ষ্যে চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হলেও তা মানছে না মানুষ। গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টের তথ্যও বলছে, সুপার মার্কেটসহ অন্য বিপণি কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম আগের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।

বিনোদন কেন্দ্র, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিবহন কর্মস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের পদচারণা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। জনসমাগম সীমিত করতে না পারার কারণেই সংক্রমণের গতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করছেন তারা।

গত বছরের মার্চ থেকেই কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের অবস্থানগত তথ্য উন্মুক্ত করেছে গুগল। এতে নভেল  সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে পরে সুপার মার্কেট, খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র, ওষুধের দোকান বিনোদন কেন্দ্র, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিবহন, কর্মস্থল এবং আবাসিক এলাকায় মানুষের অবস্থানের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহের তথ্যকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ওই বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গুগল। এরপর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে গুগল প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে চলতি বছরের মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

গুগলের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় বছর বাংলাদেশে সুপার মার্কেট, খাদ্য গুদাম, বাজার, বিশেষায়িত খাবারের দোকান ফার্মেসিতে গত বছরের তুলনায় বছরের ১৩ জুন শেষে জনসমাগম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। গত মে মাসের মাঝামাঝি এসব স্থানে মানুষের চলাচল বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল।

রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, লাইব্রেরি সিনেমা হলের মতো খুচরা বিক্রয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ২৭ শতাংশ জনসমাগম বেড়েছে। স্থানগুলোতে গত মে মাস থেকেই জনসমাগম বাড়ছে।

পার্ক, সমুদ্রসৈকত জনসমাগমের জন্য নির্ধারিত উন্মুক্ত স্থানে গত বছরের তুলনায় বছর মানুষের চলাচল বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। বিশেষ করে বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসব স্থানে জনসমাগম বেড়ে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।

দেশের বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন লঞ্চ টার্মিনালসহ গণপরিবহনে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ের তুলনায় বছরের মে থেকে ১৩ জুন সময়ে জনসমাগম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এক্ষেত্রেও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মানুষের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের ১৩ জুন শেষে আগের বছরের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে ২১ শতাংশ। অবশ্য মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কর্মক্ষেত্রে আগের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছিল।

তবে কিছু মানুষ এখনো নভেল  সের আতঙ্কে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছিল না। ফলে মানুষ কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেছে। সে সময়ের তুলনায় বছরের মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সময়ে মানুষের মধ্যে ঘরে থাকার প্রবণতা বেড়েছে শতাংশ।

গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের মে মাসের মাঝামাঝি ঈদুল ফিতরের সময় সুপার মার্কেট, ওষুধের দোকান, বাজার, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, খুচরা বিক্রয় বিনোদন কেন্দ্র, উন্মুক্ত স্থান গণপরিবহনে জনসমাগম অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে সময়ে ছুটি থাকায় কর্মস্থলে মানুষের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। একইভাবে ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়িতে যাওয়ার কারণে সময়ে আবাসিক স্থানগুলোতে মানুষের চলাচল গত বছরের চেয়ে বেশি ছিল।

দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নভেল  সের সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। খুলনা, রংপুর রাজশাহী বিভাগের ভারতীয় সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ বাড়লে গত এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। বর্তমানে বিধিনিষেধ বহাল রয়েছে। তবে গত মাসের মাঝামাঝিতে ঈদকে কেন্দ্র করে বিধিনিষেধ শিথিলভাবে অনুসরণ করে মানুষ। বিধিনিষেধ অমান্য করে চলাফেরা স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বর্তমানে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে সহজেই ধারণা করা যায়, তৃতীয় ঢেউ আসতে বেশি দেরি নেই। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয় না, তাদেরও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু তারা পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। টিকা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

চলমান লকডাউন বা বিধিনিষেধ সম্পর্কে রোগতত্ত্ববিদ বলেন, লকডাউনের বিষয়টির সঙ্গে স্থানীয় নেতা, ইমাম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। তাদের মাধ্যমেই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চলমান বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালিত হলে সংক্রমণ পর্যায়ে পৌঁছত না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন