খাল খননের মাটি ফেলা হচ্ছে ফসলি জমিতে

জয়পুরহাটে ৩০০ বিঘার বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে খাল খননকৃত মাটি ফেলা হচ্ছে কৃষকের বোরো ধানের জমিতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খালসংলগ্ন ৩০০ বিঘা জমির ধান। কৃষকদের আপত্তি সত্ত্বেও মাটি ফেলা অব্যাহত রাখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার।

এতে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু পুরানাপৈল ইউনিয়নের ধারকী-হেলকুণ্ডা মৌজার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে হেলকুণ্ডা খাল। শত বছরের পুরাতন খালটি পুনর্খনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে থেকে সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ খালের পুনর্খনন কাজ শুরু হয়। এতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৯০ লাখ টাকা। খাল খননের দায়িত্ব পায় যশোরের মিশন পাড়ার পুরাতন কসবা মেসার্স নুর হোসেন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খনন কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মুক্তার হোসেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, খালটির প্রস্থ মাত্র ১০ ফুট। অথচ ঠিকাদার কৃষকদের ৪৫ ফুট জমি দখলে নিয়ে তাতে খননকৃত মাটি ফেলছে। বোরো ধানের আবাদ করা এসব জমিতে মাটি ফেলায় নষ্ট হচ্ছে আধা পাকা ধান। ক্ষেত্র বিশেষে কাটা পড়ছে অনেক জমির মাটি।

কৃষকদের অভিযোগ, খনন প্রক্রিয়ায় খালের উভয় পাশের প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান মাটি চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার হেলকুণ্ডা, হানাইল কাদিপুর মৌজার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত খননকাজ বন্ধ রাখারও দাবি জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিষয়ে গত সোমবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়, বোরো ধানের ক্ষেতেই খননকৃত মাটি ফেলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে ভয়ভীতি মামলার হুমকি দেয়া হয়। ফলে অনেকেই কাচা ধান কেটে মাটি ভরাটের জায়গা করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকদের দাবি, এক মাস পর খাল খনন করলে তাদের বোরো ধানের ক্ষতি হতো না।

হেলকুণ্ডা গ্রামের কৃষক আবু মাসুম বলেন, অনেক টাকা খরচ করে আমরা বোরা ধানের আবাদ করেছি। জমিতে ধান প্রায় পেকে গেছে। এক মাস পর ধান কেটে ঘরে তোলার কথা। কিন্তু মাঠের ভেতর দিয়ে ভিকু মেশিনে খাল খননের কাজ করায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মাটি ফেলায় চাপা পড়েছে অনেক জমির ধান।

হানাইল গ্রামের কৃষক মোশাররফ বলেন, আগে জানলে আমরা খালপাড়ের জমিতে ধান লাগাতাম না। এখন আধা পাকা ধান কেটে খালের মাটি ভরাটের জায়গা করে দিতে হচ্ছে। ধান না কাটলে ঠিকাদার ধানক্ষেতের ওপরই মটি ভরাট করছেন।

ব্যাপারে ঠিকাদারের প্রতিনিধি মুক্তার হোসেন বলেন, আমরা কৃষকের জমিতে নয়, খাল খনন করছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়। সময় কম থাকায় বিলম্ব করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত সময়ে খাল খননকাজ শেষ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারের নীতিমালা মেনে গত ফেব্রুয়ারি থেকে হেলকুণ্ডা খাল পুনর্খননের কাজ করে যাচ্ছি। এখনো কোনো কৃষকের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প থেকে সেটি বাদ দেয়া হয়েছে।

বিষয়ে জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, কৃষকের ধানের ক্ষতি করে খাল খনন করা যাবে না। অভিযোগ পাওয়ার পর মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে ঠিকাদার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন