মানুষজন যাচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে

বিকল্প পদ্ধতিতে কার্যকারিতা হারাচ্ছে লকডাউন

আল ফাতাহ মামুন

দেশব্যাপী এপ্রিল থেকে চলছে লকডাউন, আজ আগামীকালও থাকবে চলাচলসহ সব কিছুর ওপর বিধিনিষেধ। বুধবার থেকে আবার শুরু হবে সাতদিনের কঠোর লকডাউন অবশ্য করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না কোথাও।

জীবন-জীবিকার চাকা মন্থর করে লকডাউন দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য করোনা সংক্রমণ ঠেকানো এবং সীমিত চলাফেরার মাধ্যমে নিরাপদ এলাকা যেন ঝুঁকিতে না পড়ে। চলতি নিষেধাজ্ঞা এবং বিগত লকডাউন পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও আন্তঃজেলা ভ্রমণ বন্ধ থাকেনি না। এক্ষেত্রে লকডাউনের কড়াকড়ি এড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় ব্যবহার করে থাকেন যাত্রীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে কার্যকারিতা হারাচ্ছে লকডাউন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তত্পর হওয়ার কথা বলেছেন পরিবহন নেতারা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে ভোরে দূরপাল্লার কিছু বাস ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পেলে তল্লাশি চৌকি বাড়ানো হয়। বিশেষ পুলিশ টহল বসানোর পর কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

সরেজমিন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালজুড়ে থমথমে নীরবতা। তবে কিছুক্ষণ পরপর এক-দুজন যাত্রী প্রবেশ করছেন টার্মিনালে। টার্মিনালের সামনে ব্যাগ হাতে যাত্রী দেখলেই চার-পাঁচজন পরিবহন শ্রমিক এগিয়ে আসেন। জানতে চান কোথায় যাবেন? বাড্ডা থেকে আসা এক দম্পতি জানালেন, তারা নোয়াখালী যাবেন। একজন পরিবহন শ্রমিক ইশারায় তাদের টার্মিনালের পেছন দিকে যেতে বললেন। সদরঘাট থেকে এসেছেন ফয়জুল্লাহ। চাঁদপুর যাওয়ার জন্য কোনো লঞ্চ পাননি তিনি। সায়েদাবাদ গেলে একটা ব্যবস্থা হবেই শুনে তিনি এসেছেন। অন্য একজন পরিবহন শ্রমিক তার সঙ্গে কথা বলে তাকেও টার্মিনালের পেছনে নিয়ে যান।

টার্মিনালের পেছনে এসে দেখা যায় সারি সারি ব্যক্তিগত গাড়ি। গাড়ির চালকরা অপেক্ষা করছেন দূরের যাত্রীর জন্য। হাইস গাড়ির একজন চালক এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। তিনি বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে এসেছি। খালি যাওয়ার চেয়ে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে গেলে জ্বালানি খরচটা উঠবে। বিভিন্ন জেলার গাড়ি আছে এখানে। যাত্রীও পাওয়া যায় বেশ।

ঢাকা-কুমিল্লা রোডের তিশা বাসের চালক সোহেল জানালেন অবাক হওয়ার মতো তথ্য। লকডাউনের সময় দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও রাজধানী থেকে দূরপাল্লার যাতায়াতের জন্য ব্যবহূত হয় ব্যক্তিগত গাড়ি। দুটো অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ইশারা করে দেখালেন, এগুলো রোগী বহন করার জন্য নয়, অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের যাত্রীর জন্য!

মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, জরুরি কাজে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য এসেছি। খবর পেয়েছি অল্পস্বল্প বাস চলে। এসে দেখি বাস বন্ধ। কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০ টাকার ভাড়া এখন ৬০০ টাকা দিয়ে যেতে হবে। বলেই একটি যাত্রীবাহী ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে বসলেন।

প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুুলিশ কমিশনার  ইফতেখায়রুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, লকডাউনের সময় জরুরি কারণের ব্যক্তিগত গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের অনুমতি রয়েছে। তবে এসব গাড়ি গণপরিবহনের মতো ব্যবহারের প্রবণতাও সময় বেড়ে যায়। লকডাউনের সময় আমরা অতিরিক্ত চেকপোস্ট স্থাপন করি এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে ব্যক্তিগত গাড়ি এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেও তল্লাশি করি। প্রতিটি গাড়ি চেক করা সম্ভব নয়। সুযোগটাই ব্যবহার করে অনেকে। ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন