করোনাকালে সবুজ অর্থায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে এইচএসবিসি ও ইসলামী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলার বিষয়টি অন্যান্য খাতের মতো আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এখন তারা জোর দিচ্ছেন গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নের ওপর। পরিবেশবান্ধব সবুজ অর্থায়নে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। যদিও চলমান মহামারী পরিস্থিতিতে সবুজ অর্থায়নের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। অন্যদিকে সবুজ অর্থায়ন যতটুকু হচ্ছে, তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এইচএসবিসি ইসলামী ব্যাংক। এছাড়াও সময়ে অন্য যেসব ব্যাংক সবুজ অর্থায়নে এগিয়ে রয়েছে সেগুলো হলো মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), এক্সিম ব্যাংক আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

২০১১ সাল থেকেই দেশের ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা জারিও করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে -সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, বিতরণকৃত মোট মেয়াদি ঋণের ন্যূনতম শতাংশ সবুজ অর্থায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মোট সবুজ অর্থায়নের পরিমাণ ছিল হাজার ৩২০ কোটি টাকা। বিনিয়োগকৃত অর্থের মধ্যে হাজার ৮১ কোটি টাকা এসেছে মাত্র ১১টি ব্যাংক থেকে।

সময়ে সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে দেশে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ব্যাংক হলো বিদেশী খাতের এইচএসবিসি। ব্যাংকটি গ্রিন ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ করেছে ৫২১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গ্রিন ফাইন্যান্সে ৪৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ১৮৮ কোটি টাকার সবুজ অর্থায়নের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্যই গ্রিন ফাইন্যান্স বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, শিল্পায়ন নগরায়ণের প্রভাবে গোটা বিশ্বই পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর ফলে যে দুর্যোগ ধেয়ে আসছে, তা মোকাবেলার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমাদের দেশের নেই। এজন্য আগে থেকেই কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে পরিবেশের দূষণ কমাতে হবে। গ্রিন ফাইন্যান্সের যে নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে আরো কম সুদে খাতে ঋণ দিতে পারলে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হতো।

গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, পানি কাগজের খরচ কমানোর উপযোগী প্রতিষ্ঠান কারখানাগুলোকে ধরা হয় সবুজ শিল্প হিসেবে। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবুজ অর্থায়নের বিষয়ে নীতিমালা জারি করলেও সম্প্রতি সেটি সংশোধন করে নতুন করে জারি করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, তরল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপনা নির্মাণ, গ্রিন কৃষি এসএমইসহ বিভিন্ন খাতের ৬৮টি ব্যাংকিং প্রডাক্টে বিনিয়োগকে সবুজ অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীর তাণ্ডব শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। মহামারী পরিস্থিতিতে সংকুচিত হয়ে পড়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। এর ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিকভাবেই ঋণ বিতরণ কমেছে গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নেও। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকগুলো সবুজ অর্থায়ন করেছে হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এরপর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকগুলোর সবুজ অর্থায়ন কমেছে। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকগুলোর গ্রিন ফাইন্যান্সের পরিমাণ নেমে আসে হাজার ৫০২ কোটি টাকায়। এরপর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের সবকটি ব্যাংক মিলে সবুজ অর্থায়ন করেছে হাজার ৩২০ কোটি টাকা। অতীতের সব বিনিয়োগ যুক্ত করে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের শুরু থেকে মোট গ্রিন ফাইন্যান্স বা সবুজ অর্থায়নের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

গ্রিন ফাইন্যান্সকে উৎসাহিত করতে তিনটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন বা উদ্যোগের জন্য গঠন করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত তারল্য দিয়ে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড নামেও একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রিন ফাইন্যান্সকে উৎসাহিত করতে নানামুখী কর্মসূচি নিয়েছে। আমরা বিষয়ে যে নীতিমালা দিয়েছি, তা বিশ্বের কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। পরিবেশ বাঁচাতেই আমাদের সবুজ অর্থায়ন বাড়াতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন