সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কখনো বাড়ছে আবার কখনো কমছে। এ অবস্থায় জেলার শাহজাদপুর, সদর, চৌহালী উপজেলায় যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অব্যাহত ভাঙনে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী, পাকুড়তলাসহ পাশের গ্রামগুলোর দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা ক্রমে বাড়ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে চৌহালী ও সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী এলাকায়।
এদিকে যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে যমুনা তীরবর্তী অসংখ্য মানুষ। চোখের সামনে একের পর এক ঘরবাড়ি, জমিজমাসহ বিভিন্ন স্থাপনা যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরও ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।
শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী এলাকার বৃদ্ধ ইয়াছিন প্রামাণিক (৮০) ও রহম আলী মোল্লা (৭২) ২ সেপ্টেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে যমুনার তীরে অনশন করেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর পাউবোর কর্মকর্তারা গিয়ে বাঁধ নিমাণের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন তারা।
ইয়াছিন প্রামাণিক ও রহম আলী মোল্লা বলেন, সাত-আটবার আমাদের বাড়ি নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। জমিজমা সব ভাঙনে গেছে। এখন সামান্য ভিটা আছে। আবারো শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভিটাটুকু গেলে আর যাব কোথায়। কিন্তু তিন-চার বছর ধরে শুনছি বাঁধ নির্মাণ হবে কিন্তু আজও তা হলো না। সরকার এ জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করে দিলে ভাঙন রোধ হতো।
জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ী এলাকার নুরু ফকির জানান, এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাট প্রাচীল পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করায় চোখের সামনে একের পর এক জমিজমা-ঘরবাড়ি সব যমুনার পেটে যাচ্ছে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ী, পাকুড়তলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনের কারণে নদীর অদূরে রয়েছে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ও দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, আগস্টের শেষের দিক থেকেই দক্ষিণ চৌহালীর বাঘুটিয়া ও খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে ওই দুটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্ষার শুরুতে যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাসপুখুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর বিনানুই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়। যমুনার পানি দফায় দফায় হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে খাসপুখুরিয়া ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর বিনানুই হাটাইল, চর নাকালিয়া, ভূতেরমোড়, খাসপুখুরিয়া, মেটুয়ানী এলাকার পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে কয়েকশ বিঘা ফসলি জমিও বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।
চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাহার সিদ্দীকি বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে চৌহালী উপজেলায় নদীভাঙন চলছে। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। চলতি মাসে আবারো শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। পাউবোসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অনশনকারীদের সঙ্গে আমরা সমব্যথী। কাজীপুরের পাটাগ্রাম এবং এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে শাহজাদপুরের কৈজুড়ী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা অনেকটা অরক্ষিত রয়েছে। এ দুটি স্থানে ভাঙন রয়েছে। ভাঙন রোধে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
চৌহালী উপজেলার দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে এখন ওই এলাকায় জিওটেক্স বালির বস্তা ফেলার কাজ চলছে। এছাড়া ওই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেয়া আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।