শ্রমিক কল্যাণ তহবিল

লভ্যাংশ জমা দেয়ার বিধান মানছেন না শিল্পপতিরা

তাগিদ দিয়ে ২২৫ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি

জেসমিন মলি

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাভে পরিচালিত হলে লভ্যাংশের শূন্য দশমিক শতাংশ টাকা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে বেশির ভাগ শিল্পপতিই বিধান মানছেন না। অবস্থায় লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অর্থ কল্যাণ তহবিলে জমার তাগিদ দিয়ে ২২৫ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। তাগিদপত্র দেয়ার পরও যদি লাভে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কল্যাণ তহবিলে অর্থ জমা না দেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

শ্রমিক কল্যাণ তহবিল নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম বন্ধ করতে গত বছর একটি সাব-কমিটি গঠন করে দেয় শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ওই সাব-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। ওই কমিটি শ্রম মন্ত্রণালয়, ফাউন্ডেশন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করে। সেই প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও উঠে এসেছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাব-কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করে শ্রম মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা না দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সংসদীয় সাব-কমিটির একটি সুপারিশ ছিল, লাভজনক সব প্রতিষ্ঠানকে লভ্যাংশের শূন্য দশমিক শতাংশ শ্রমিক প্রদানসংক্রান্ত বিধানের আওতায় আনার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান। সেক্ষেত্রে শতভাগ রফতানিমুখী সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত মোট অর্থের দশমিক শূন্য শতাংশ জমা প্রদানের কথা বলা হয়। সুপারিশের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিকে জানায়, বিষয়টিতে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এরই মধ্যে তিনটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যার সর্বশেষটি গত ২৪ আগস্ট পাঠানো হয়।

সাব-কমিটির আরেকটি সুপারিশ ছিল স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের যেসব প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফান্ড এবং কল্যাণ তহবিলের তালিকাভুক্ত, তাদের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের জন্য চিঠি দেয়া। সেই সুপারিশের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক এমপি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যই শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ ন্যায়ভিত্তিক সমহারে বণ্টনের জন্যও সংসদীয় কমিটির বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।

শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ১০০ টাকা লাভের বিপরীতে টাকা শ্রমিক কল্যাণে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা ছিল। টাকার ৮০ শতাংশ শ্রমিকদের সঙ্গে ভাগাভাগি এবং ২০ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার বিধান রাখা হয় ওই আইনে। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে ১০ শতাংশ সরকারের বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে এবং বাকি ১০ শতাংশ কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। এর ব্যত্যয় হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত শ্রম আইনে। এর পরও অনেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে অর্থ জমা দেয় না।

শ্রমিক প্রতিনিধিদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশে শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সহজভাবে নেন না। এক ধরনের অনীহা থেকেই সরকারি তহবিলে অর্থ জমা দেন না তারা। কারণে সাড়া পাচ্ছে না শ্রমিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে গঠিত তহবিলটি।

দেশের প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক তাদের পরিবারের কল্যাণ সাধন, অসুস্থ অক্ষম বা অসমর্থ শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে সাহায্য প্রদান, শ্রমিকদের জীবন বীমার জন্য যৌথ বীমা ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং শ্রমিকের পরিবারের মেধাবী সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি দেয় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল।

বর্তমানে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফাউন্ডেশনের ২০ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, ভাইস চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের সচিব। শ্রমিক মালিকপক্ষের পাঁচজন করে প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাতজন যুগ্ম সচিব বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের প্রধান উৎস হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার অংশ। এছাড়া তহবিলে সরকার অনুদান দেয়। ফাউন্ডেশনের তহবিলে অর্থ আসে বিনিয়োগ থেকে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন