পদত্যাগের ঘোষণা শিনজো আবের

বণিক বার্তা ডেস্ক

স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। গতকাল এক দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে নিজের পদত্যাগের ঘোষণার পাশাপাশি মেয়াদ পূরণ করতে না পারায় দেশের জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। আবে বলেন, তিনি চান না যে তার অসুস্থতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হোক।

২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে টানা দায়িত্ব পালন করে তিনিই এখন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী জাপানি প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল আবের। এর এক বছর আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন বলেও জানানো হয়েছে। আবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি অনেক ভেবে দেখলাম, আমার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে না।

রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফলাফল তৈরি করতে পারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ সাত বছর আট মাস দায়িত্ব পালনকালে আমি এই ফল পেতে আমার সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন অসুস্থতার কারণে তা ঠিকভাবে করতে পারছি না। আমার চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।

৬৫ বছর বয়সী আবে শৈশব থেকেই আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে ভুগছেন। তবে সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরেই আবের শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন রকম খবর দেশটির গণমাধ্যমে আসছে। খবরে বলা হচ্ছে, গত এক সপ্তাহে দুবার হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। এমনকি দেশটির একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ফ্ল্যাশের খবরে দাবি করা হয়, গত জুন অফিস করার সময় রক্তবমি করেছিলেন আবে। তবে ধরনের সংবাদের ব্যাপারে সরকার কিংবা আবের পক্ষ থেকে বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে।

রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত শিনজো আবে আগ্রাসী অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আনয়নের কারণে তার গৃহীত নীতিগুলো আবেনোমিকস  নামেও পরিচিত। জাপানের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণে তার সুনাম রয়েছে।

এর আগে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৭ সালে একই কারণে পদত্যাগ করেছিলেন আবে। সে সময় ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৫২ বছর বয়সে তিনি জাপানের সবচেয়ে কম বয়সী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম নেয়াদের মধ্যে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি আবের পদত্যাগে আরো কিছু বিষয় আলোচিত হচ্ছে। মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আবে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনাও রয়েছে দেশটিতে। বিবিসির খবরে বলা হয়, জাপানের নাগরিকদের অনেকেই মনে করেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে আবে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছিল না।

পদ ছাড়লেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি আবে। তবে ঘোষণার আগেই জাপানের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা আবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তমোমি ইনাদার বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, উত্তরসূরি না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন আবে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নির্বাচনে উত্তরসূরি খোঁজা হবে। শিনজো আবে পদত্যাগ করলে এলডিপি পার্টিতে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে, যেখানে তার বিকল্প একজনকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে। এরপর সংসদীয় ভোটাভুটির মাধ্যমে নবনির্বাচিত পার্টি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে।

এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবের সহকারী জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো হয়তো ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আবের পদত্যাগের ঘোষণার ফলে তার দল এলডিপিতে নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই শুরু হতে পারে।

শিনজো আবে ১৯৫৪ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আবের জন্মের তিন বছর পরই তার নানা নবুসিকি কিশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার বাবা দাদারও জাপানের রাজনীতি অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ আধিপত্য ছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক করা আবে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায়ও গিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালে দেশে ফিরে জাপানের বিখ্যাত কোবে স্টিলে চাকরির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিন বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি তত্কালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যনির্বাহী সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯১ সালের তার বাবার মৃত্যুর পর ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো এলডিপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পর্যায়ক্রমে ২০০৬ সালে দলীয় সভাপতির দায়িত্ব পান। সে বছরই তিনি প্রথমবারের মতো জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন তিনি। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে এলডিপি জয়ী হওয়ার পর ফের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন আবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন