একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ড. ফরাসউদ্দিন

বারবার ঋণ পুনঃতফসিলে ব্যাংক খাতে অর্থের টান পড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : স্টার

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, ‘বারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের কারণে ব্যাংক খাতে অর্থের টান পড়েছে। এজন্য টাকা ছাপিয়ে বা ট্রেজারি বন্ড দিতে হচ্ছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। যখন শক্তিমান কেউ সরকারকে বোঝাতে পারবে, মূল্যস্ফীতি কমানোর উপায় খেলাপি ঋণ আদায় করা। এখন কে বোঝাবে, এটা বিষয়। সরকার সেটা শুনলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, ব্যাংক একীভূতকরণ, টাকা ও ডলারের সংকট, বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। নিজের অভিমত তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠানে ইআরএফে সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। 

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে তফসিলি ব্যাংকের কাজ হলো তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদি বাণিজ্য অর্থায়ন করা। ১৯৯১-৯২ সালে একটি মুরব্বি দাতা সংস্থার পরামর্শে সরকার ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন শুরু করায়। এটা ভালো পরামর্শ ছিল না। এজন্য ব্যাংক খাতে সমস্যা শুরু হয়। খেলাপি ঋণ শুরু হয় ওই সময় থেকে। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যাংক খাতের পরিধি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আমানতের পরিমাণ ও ঋণ বিতরণও দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জনবল ও ক্ষমতা বাড়েনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমালোচনায় একটা ফ্যাশন দেখা যায়, সবাই বলে এত ব্যাংক ধারণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। ব্যাংকের সংখ্যা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা শাখার সংখ্যা। বাংলাদেশে ব্যাংকের একটি শাখা ১৫ হাজার লোককে সেবা দেয়। ভারত ও শ্রীলংকা ব্যাংকের একটি শাখা ১২ হাজার জনকে সেবা দিয়ে থাকে। এমন ব্যাংক শাখা আরো হতে পারে। কিন্তু আমানত যদি ৬০ ভাগ হয় মতিঝিলে আর বাকি অংশ গ্রাম থেকে আসে। আর ঋণের ৬০ ভাগ চলে যায় চট্টগ্রাম, মতিঝিল ও নারায়ণগঞ্জে। তাহলে এটা সমস্যা। এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত।’

দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়েও কথা বলেন সাবেক এ গভর্নর। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে বছরে ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। সরকার নিশ্চুপ, রহস্যজনকভাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) এ নিয়ে কিছু বলে না। ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী এক সূত্রে গাঁথা। তারা যখন দেখবে শাসককুলের চক্ষু লাল হয়ে গেছে, তখনই তারা টাকা ফেরত দেয়া শুরু করবে। তার আগে নয়। যখন ঋণ খেলাপিওয়ালা বেশি বড় হয়ে যায়, তখন ১ হাজার টাকা কৃষি ঋণের কারণে কেউ জেলে যায়, আর ১০ হাজার কোটি টাকা শিল্প ঋণের খেলাপি গ্রাহক সরকারের পাশে বসে। এখন যে যত বেশি শক্তিমান, সে তত বড় খেলাপি। তার সুদ মওকুফও হয় তত বেশি। ২০০৩ সালে সুদ মওকুফ শুরু হয়। আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে সুদ মওকুফ সুবিধা এখনই বন্ধ করে দিতাম।’ 

ব্যাংক একীভূতকরণ বিষয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত করা সব দেশেই হয়। জোর করে ব্যাংক একীভূত করা যাবে না। দুই পক্ষের সম্মতিতে এটা করতে হবে। কিন্তু খারাপ ব্যাংক ভালো করার এটাই একমাত্র উপায় না। এর বিকল্প আছে। এখন যাদের ভালো ব্যাংক বলা হচ্ছে, এমন চারটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকই একসময় তদারকি করে ভালো করেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন