টিকিটের উচ্চমূল্য

ছুটি শেষে কাজে ফিরতে বিপাকে প্রবাসী কর্মীরা

মনজুরুল ইসলাম

ছুটি কাটাতে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ইয়াসিন আলী। বাজেট ক্যারিয়ার এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে সে সময় রিটার্ন টিকিট নিয়ে দেশে আসেন তিনি। তবে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এয়ার অ্যারাবিয়ার ঢাকার ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রবাসে ফিরতে নতুন করে টিকিট কাটতে হচ্ছে ইয়াসিন আলীকে। আর বিপত্তি বেধেছে এখানেই। ঢাকা-দুবাই রুটে ২০ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিট এখন তার কাছে চাওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার টাকার বেশি।

একই ধরনের সংকটে পড়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কাওসার সরকারও। গতকাল তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ছুটিতে এসে আটকা পড়েছি। কোম্পানি থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যেই চাকরিতে যোগ দিতে হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট কাটার চেষ্টা করছি। কিন্তু এত দাম দিয়ে কীভাবে টিকিট কাটব? তিনি বলেন, টিকিট কাটার পর আবার করোনা নেগেটিভ সনদ নিতে হবে। এতেও প্রায় হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এরপর যদি করোনা পজিটিভ হয়, তখন টিকিট বাতিল করতে হবে। সব মিলিয়ে আতঙ্কে আছি।

ছুটি কাটাতে এসে আটকা পড়া প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিকই এখন একই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওয়ানওয়ে টিকিট কিনতেই বিদেশগামীদের গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ অর্থ। এর পরও ভিসা চাকরি বাঁচাতে গিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কাটতে বিমানের সেলস সেন্টারগুলোতে ভিড় করছেন প্রবাসী শ্রমিকরা।

প্রবাসী শ্রমিকদের অভিযোগ, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়ায় এমনিতেই তারা দীর্ঘদিন থেকে বেকার। ধার-দেনা করে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। এখন বিদেশে যেতে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কাটতে ঋণ করতে হচ্ছে। ফ্লাইট কম থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও সবাইকে এক রকম জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।

প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বণিক বার্তাকে বলেন, যেসব প্রবাসী কর্মী ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন অর্থাৎ যাদের আকামার মেয়াদ আছে বর্তমানে তারাই কেবল বিদেশে ফিরতে পারছেন। তা- কিন্তু সব দেশে নয়। তবে দীর্ঘদিন দেশে থাকায় তাদের হাতেও বেশি অর্থ নেই। অবস্থায় অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কেটে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা পরীক্ষার খরচ বিমানবন্দরে নতুন করে আরোপিত ফি। বায়রার পক্ষ থেকে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য আলাদা লেবার ফেয়ার নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে আগস্ট থেকে বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশের ভেতরে বা বিদেশে গেলে যাত্রী নিরাপত্তা বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। গত ২২ জুলাই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে জারি করা -সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী নিরাপত্তা সেবার মান বৃদ্ধি এবং বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সব বহির্গামী যাত্রীদের এই ফি দিতে হবে। দেশী বিদেশী সব এয়ারলাইনসকে পাঠানো ওই আদেশে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে যাত্রীদের প্রতিবার ভ্রমণে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি দিতে হবে ১০০ টাকা এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি দিতে হবে ৭০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি দিতে হবে ডলার এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি দিতে হবে ডলার। সার্কভুক্ত ছাড়া অন্য দেশের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি দিতে হবে ১০ ডলার এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি দিতে হবে ১০ ডলার।

এছাড়া সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী যেসব দেশ যাত্রীদের কভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সেসব দেশে যেতে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। বিদেশ গমনে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিতে যাত্রীদের ১৬টি নির্ধারিত পিসিআর ল্যাব থেকে নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। বিদেশযাত্রীদের কভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ প্রাপ্তির জন্য ল্যাবে গিয়ে নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে সাড়ে হাজার টাকা বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহে সাড়ে হাজার টাকা ফি দিতে হচ্ছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশী ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। তাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার আরব আমিরাত থেকে ৩৮ হাজার। মালয়েশিয়া থেকে ১৯ হাজার ফিরে এসেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন