বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিন। এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। গতকালের নিয়মিত ব্রিফিং শেষে তিনি বলেন, আজকের পর থেকে লাইভ এ অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তবে ব্রিফিং বন্ধ হলেও তথ্যপ্রবাহে কোনো অসুবিধা হবে না বলে উল্লেখ করে নাসিমা সুলতানা বলেন, যথারীতি প্রেস রিলিজ সবাইকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আপনারা সব তথ্যই জানতে পারবেন। তথ্য নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো হবে।
প্রতিদিনের এ বুলেটিনে করোনাবিষয়ক নিয়মিত তথ্য ছাড়াও নিয়ম করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা দেয়া হতো। তার পরও এখনই কেন বুলেটিন বন্ধ—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, মূলত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধিদপ্তরের বুলেটিন বন্ধ হচ্ছে। এত বড় সিদ্ধান্ত অধিদপ্তরের নেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কেউ গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে চাননি।
গত ৭ এপ্রিল থেকে করোনাবিষয়ক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন নেয়া বাদ দেয়া হয়। তারপর এটাকে হেলথ বুলেটিন নামকরণ করা হয়। ওইদিন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে অধিদপ্তরের তত্কালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, নিয়মিত ব্রিফিং হিসেবে প্রচার না করে তারা একে স্বাস্থ্য বুলেটিন হিসেবে প্রচার করবেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এরপর আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর আর হবে না।
এর আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নভেল করোনাভাইরাস ইস্যুতে প্রথম ব্রিফিং আয়োজন করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তখন করোনাবিষয়ক সব তথ্য দিতেন। সে সময় করোনাবিষয়ক ব্রিফিং দেশের মানুষের আগ্রহে পরিণত হয়।
মাঝে একদিন অসুস্থতার কারণে তিনি ব্রিফিংয়ে না এলে তত্কালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ সেদিন ব্রিফিং করতেন। এরপর মাঝেমধ্যে ব্রিফিংয়ে আসতেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা ও পরিচালক বেলাল হোসেন। তখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েন আইইডিসিআর পরিচালক। এরপর নিয়মিতভাবে এ অনুষ্ঠানে কভিড তথ্য নিয়ে হাজির হতেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তবে অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর কার পরামর্শ নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমার বোধগম্য হয় না। এখানে তথ্য দেয়া ছাড়াও সচেতনতামূলক কিছু পরামর্শ দেয়া হতো। দেশের জনগণ এমনকি আমরাও প্রতিদিনের আপডেট জানতে চোখ রাখতাম। এখন অনেকে বিষয়টা নিয়ে জানার আগ্রহ হারাবে। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
গত ৫ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পূর্বানুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথা বলতে নিষেধ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মুখপাত্র হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব করেন। নিয়মিত ব্রিফিং ছাড়া এসব বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে অনেক সময় সরকারকে বিব্রত হতে হয় বলে ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন আরো ৩৩ জন। এ নিয়ে করোনায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৭১ জন মারা গেলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন আরো ২ হাজার ৯৯৬ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত হলেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৩৫ জন ও এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৭২ জন সুস্থ হয়েছেন। গতকাল বেলা আড়াইটায় কভিড-১৯ সম্পর্কিত নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে সর্বশেষ এ তথ্য জানান অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৩১৭টি নমুনা সংগ্রহ ও ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বুলেটিনে তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। এখন পর্যন্ত পুরুষ ২ হাজার ৭৪৯ জন পুরুষ ও ৭২২ জন নারী মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এদিন ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রামে পাঁচ, রাজশাহীতে পাঁচ, খুলনায় তিন, ময়মনসিংহে এক ও রংপুরে চারজন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৩০ ও বাড়িতে তিনজন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, নিয়মিত ব্রিফিংয়ের পাশাপাশি তথ্যপ্রবাহ ঠিক রাখতে গত ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেল করে কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ জুন তাকে বদলি করার পর নতুন করে আর কাউকে এ সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।