মক্কায় একটি ট্যাক্সি বুকিং অফিস চালান সাজ্জাদ মালিক। এ বছর সৌদি আরব সীমিত আকারে হজ পালনের বিধিনিষেধ আরোপের কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি। নিজের দুরবস্থা তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে—‘আমাদের কাজ নেই, বেতন নেই, কিচ্ছু নেই’।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর সীমিত আকারে হজ আয়োজন করেছে সৌদি আরব। ফলে এবার বাইরের কোনো দেশ থেকে কেউ হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যেতে পারেননি। তবে সৌদি নাগরিক ও সেদেশে বসবাসকারী বিদেশীরা হজ পালন করতে পারবেন। যদিও এক্ষেত্রে ?তাদেরও নানা বিধিনিষেধ মানতে হচ্ছে।
এ বছর হজের অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে। অথচ প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ পালন করেন। যাদের ২০ লাখের বেশিই বিদেশ থেকে আসা।
হজকে ঘিরে সারা বিশ্বের হাজারো মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। পাকিস্তান থেকে জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরবে পাড়ি জমানো সাজ্জাদ মালিক তাদেরই একজন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত হজের আগের এ দুই বা তিন মাসে আমি ও আমার ট্যাক্সিচালকরা যে পরিমাণ অর্থ আয় করি, তা দিয়ে আমাদের সারা বছর চলে যায়। কিন্তু এবার কোনো আয় হলো না।’
এ পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে কোনো সাহায্য পাননি জানিয়ে সাজ্জাদ আরো বলেন, ‘কেউ কোনো সাহায্য করেনি। আমার তা-ও কিছু সঞ্চয় আছে, যা দিয়ে আমরা চলছি। কিন্তু আমার ৫০ জনের বেশি স্টাফ আছে। তাদের সবার অবস্থাই নাজুক।’
হজ পালন শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় আচারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এ কারণে হজের সময় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পশু আমদানি করে সৌদি সরকার। এছাড়া হজযাত্রীদের প্রতিদিনের খাবারের জন্যও প্রচুর মাংস আমদানি করতে হয়।
হজের মৌসুমে সৌদিতে পশু ও মাংস রফতানিকারক দেশগুলোর একটি কেনিয়া। দেশটির প্রাণিসম্পদ উৎপাদনকারী সংস্থার সদস্য প্যাট্রিক কিমানি বলেন, ‘কেনিয়ায় প্রচুর খামার রয়েছে। খামারিরা সেসব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে হজের সময় প্রচুর পশু বিক্রি হয়। কিন্তু এবার তা হয়নি। খামারিরা সেসব পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। অতিরিক্ত জোগানের কারণে স্থানীয় বাজারেও দাম পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
বিশ্বে মুসলমান ?অধ্যুষিত বেশির ভাগ দেশে ?অনেক ট্রাভেল এজেন্সি শুধু হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ পরিচালনা করেই টিকে রয়েছে। এবার তাদের ব্যবসা একেবারে শূন্যে নেমে এসেছে। কারণ এবার বিদেশ থেকে কাউকে হজ করার অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব।
গত বছর পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব গিয়েছিলেন। করাচির বাসিন্দা শাহজাদ তাজ গত বছরও তার কোম্পানির মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে অনেক হজযাত্রীকে মক্কায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা এমন পরিস্থিতির জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।’
সীমিত আকারে হজ হওয়ায় এবার মক্কা ও মদিনা শহর শত শত কোটি ডলারের আর্থিক লোকসানে পড়েছে। রিয়াদভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘আল-রাজি ক্যাপিটালের প্রধান গবেষক মাজেন আল সুদাইরি বলেন, ‘হজ আয়োজন করতে সৌদি আরব সরকারের যে অর্থ ব্যয় হয়, এ বছর তার অনেকটাই বেঁচে যাবে। কিন্তু হজ ঘিরে মক্কা ও মদিনায় যে ব্যবসা হয়, এবার তা হবে না। এ ক্ষতির পরিমাণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।’