কভিড-১৯ থামাতে পারে এমন ইমিউন প্রতিক্রিয়ার সন্ধানে

ক্রিস বারানিক

যখন এই গ্রীষ্মে কভিড-১৯ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সেই অবস্থাটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডাক্তার নুয়ালা মেয়েরের বিশ্বাস হচ্ছিল না। তিনি বলেন, তখন অনেক রোগী জটিল অসুস্থতা নিয়ে একই সময়ে হাসপাতালে আসতে থাকে। তবে এমন ছিল না যে এই রোগীরা কেবল একটি কারণে অসুস্থ ছিল, বরং তারা বিভিন্ন রোগে অসুস্থ ছিল। কারো কার্ডিয়াক সমস্যা ছিল, কারো পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছিল। এরপর নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্তরাও ছিল। কারো অর্গান ফেইলিওর হয়েছে। রকম বহু সমস্যায় আক্রান্তরা এসেছিল।

যখন মেয়ের তার কলিগরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শরীর কীভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে তা লিপিবদ্ধ করছিলেন, তখন তারা বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলেন। কারো কারো মঝে টি বি-সেল বেশ উচ্চমাত্রায় সক্রিয় ছিল, কিন্তু অন্যদের মাঝে ছিল না।

সার্স-কোভ- প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর ভূমিকা বোঝার জন্য সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলোর দিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কীভাবে ভ্যাকসিন দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি কাজ করবে তার বোঝার জন্য, টি বি-সেল কীভাবে বেশির ভাগ সংক্রমণের চ্যালেঞ্জ উন্মোচন করে তা বুঝতে হবে।

এই লক্ষ্যে মেয়ের তার কলিগরা ইমিউন প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার জন্য ১২৫ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে ১৫ জুলাই।

গবেষকরা দেখেছেন যে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে খুবই ভারসাম্যহীন ইমিউন সেল সক্রিয় ছিল এবং এই ভারসাম্যহীনতা একাধিক উপায়ে প্রকাশিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ কিছু ক্ষেত্রে অনেক সিডি৪ + টি-সেল উৎপাদিত হয়, যা অন্য ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা করে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে। কিন্তু খুবই অল্প সিডি৮ + ঘাতক টি-সেল আছে, যা শরীরের সংক্রমিত টি-সেলকে ধ্বংস করতে পারে। এদিকে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে বি-সেল তৈরি হয়, যা অ্যান্টিবডিকে মথিত করে। কিন্তু টি-সেলের প্রধান দুটি ধরনের সঙ্গে মিল নেই। এই কোষগুলোর একসঙ্গে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ইমিউনোলজিস্ট মাইকেল বেটস। কারণ এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ কিছু টি-সেল বি-সেলকে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সহায়তা করে। এটা একটা যৌথ প্রচেষ্টা। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু রোগীর মাঝে টি বি-সেলের উদ্বেগজনকভাবে ঘাটতি রয়েছে।

বেটস বলেন, মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীরা উল্লেখযোগ্যভাবে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পাশাপাশি ঠিক কোন কারণে অনেক রোগী মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তা স্পষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাছাড়া বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিকভাবে জানেন না যে মৃদু বা লক্ষণ নেই এমন রোগীদের টি বি-সেল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়।

ইমিউনোলজিস্ট আকিকো আইওয়াসাকি বলেন, যখন অ্যান্টিবডি নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছিল, তখন সময়ের সঙ্গে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা কীভাবে ফিরে আসে তা শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সে সঙ্গে টি-সেল বি-সেলের প্রতিক্রিয়া জানাও জরুরি।

এমন লক্ষণ রয়েছে যে কয়েক বছর ধরে অ্যান্টিবডি নিউট্রোলাইজিং করার মাধ্যমে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি অর্জন করতে পারে না। বরং টি বি-সেল সম্ভবত এটা প্রদান করবে। জুনের নেচার মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডি নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ওই সব ব্যক্তি সংক্রমিত হলে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে, তবে জন্য তারা টি বি-সেলকে ধন্যবাদ জানাতে পারে।

কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনে টি-সেলের ভূমিকা

ইমিউনোলজিস্ট শিনা ক্রুইকশাংক বলেন, ব্যাপার হলো অ্যান্টিবডির স্তর হ্রাস পাওয়া মানে এমন নয় যে স্মৃতিতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কারণে যখন ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা একাধিক গ্রুপ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক ফল ঘোষণা করেছিল তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে টি বি-সেলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। সেই ফলাফলগুলোর মাঝে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি দল ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে শিম্পাঞ্জির অ্যাডনোভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে।

দ্য ল্যানসেটে গ্রুপের ফল প্রকাশিত হয়েছে ২০ জুলাই, যেখানে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী স্বাস্থ্যবান মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন তেমন কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এটি আকাঙ্ক্ষিত ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা অ্যান্টিবডি এবং টি বি-সেলকে যুক্ত করে।

এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন যে আদর্শ প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে। কিন্তু ভ্যাকসিন গবেষকরা যে বিষয়টি খুঁজছেন তা হলো টি বি-সেল প্রতিক্রিয়া, যা উল্লেখযোগ্য সময়ে জন্য কিছু মাত্রায় ইমিউনিটি বজায় রাখতে পারে।

দ্য সায়েন্টিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন