মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতারকৃত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম (পাপুল) সে দেশের নাগরিক হলে সংসদে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া সংসদ সদস্য পাপুলের প্রসঙ্গ তোলেন। পাপুল বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে কুয়েত যাননি উল্লেখ করে কুয়েতে তার নাগরিকত্ব আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি দাবি জানান হারুন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে সংসদ সদস্যের কথা বলা হচ্ছে তিনি কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আমাদের নমিনেশন চেয়েছিলেন। আমি কিন্তু দিইনি। পরে তিনি স্বতন্ত্র ইলেকশন করেছেন। ওই সিটটি আমরা জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান নমিনেশন পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নির্বাচন না করায় তখন ওই লোক (পাপুল) জিতে আসেন। আবার তার স্ত্রীও যেভাবে হোক সংরক্ষিত আসনের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি কুয়েতের নাগরিক কিনা, সে বিষয়ে আমরা কুয়েতে কথা বলছি। সেটা দেখব। সেটা যদি হয় তাহলে তার ওই সিট হয়তো খালি করতে হবে। কারণ যেটা আইনে আছে সেটা হবে। তার বিরুদ্ধে আমরা দেশেও তদন্ত করছি।
উল্লেখ্য, মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতে গ্রেফতার হন এমপি পাপুল। এরপর গত ২৪ জুন তাকে ২১ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম প্রশ্নে হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এখানে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। অনিয়মগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। অপরাধীদের এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছি। মাননীয় সংসদ সদস্য এই তথ্যটা আগেভাগে জানাতে পারলে আমরা খুশি হতাম। এই তথ্যটা অন্য কেউ কিন্তু জানায়নি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকেই এটা খুঁজে বের করেছি। ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখানে র্যাব গিয়েছে। এসব খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
করোনাকালে ত্রাণসহায়তার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পঞ্চাশ লাখ পরিবারকে আমরা যে সহায়তা দিচ্ছি তাদের তালিকা বানানো হচ্ছে। সেই তালিকা তিন দফা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের আইডি কার্ড, ভোটার লিস্টে নামসহ সবকিছু মিলিয়ে তথ্য নেয়া হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করে যথাযথ ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌঁছে দিচ্ছি। টাকা পাঠানো হয় তার মোবাইল ফোন বা ব্যাংক হিসাব নম্বরে। এই যাচাই-বাছাইয়ে আমাদের সময়ও লেগেছে। অন্য যে নামধাম (ভুয়া/অযোগ্য) আসছে তা আমরা কেটেছেঁটে ফেলে দিচ্ছি।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কডিভ-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে এর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রতিরোধ/প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং দ্রুততম সময়ে সঠিক কৌশল অনুসরণ করায় এ পর্যন্ত এ দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা ও স্বাস্থ্য খাতের সুরক্ষায় সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ভোলা-২ আসনের আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে আমরা বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। এ পর্যন্ত সারা দেশে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় ২ লাখ ১১ হাজার ১৬৭ টন চাল এবং নগদ ২৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে উপকারভোগী জনসংখ্যা ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ জন। শিশুখাদ্য বিতরণে ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপকারভোগী শিশুর সংখ্যা ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৮ জন।
বগুড়া-৫ আসনের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সরকার বহুপক্ষীয় বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশী শ্রমিক ও অভিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত ও অন্তত ছয় মাস চাকরিচ্যূত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন-সহযোগীদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশী কর্মীরা যেন করোনা-পরবর্তী সময়ে পুনরায় কর্মে নিয়োগ পেতে পারে সেজন্য সরকার কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত রেখেছে। তিনি জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে (১২ জুন পর্যন্ত) ১৪ হাজার ৯৫৭ জন প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এসেছে।
জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হন চুন্নুর একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসসাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীনসহ বঙ্গবন্ধুর লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোর তথ্য তুলে ধরেন। এ বইয়ের তথ্যগুলো কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন সেটা উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর লেখা বা তার সংশ্লিষ্ট দেশে-বিদেশের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তা প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও এ সময় তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এ প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিকথা নিয়ে নতুন বই প্রকাশের প্রসঙ্গও টানেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা একটা লেখা আছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতোই ওনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কিছু লেখা। সেই লেখাগুলো আমি প্রস্তুত করেছি। তা প্রায় তৈরি হয়ে আছে। ওটা আমরা ছাপতে দেব।