কভিড-১৯

সংক্রমণে রাশিয়াকে টপকে বিশ্বে তৃতীয় ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় রাশিয়াকে টপকে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২৪ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে সাত লাখের কাছাকাছি। ফলে সর্বোচ্চ সংক্রমণের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় এক ধাপ এগোনোর পর এখন ভারতের সামনে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের অবস্থান। খবর ইন্ডিয়া টুডে স্ক্রলইন।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল একদিনে দেশটিতে ২৪ হাজার ২৪৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমিত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৪২৫ জন ভারতীয়। এর মধ্য দিয়ে ভারতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ৯৭ হাজার ৪১৩। মৃত্যুর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৯ হাজার ৬৯৩। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে করোনা সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে লাখ ২৪ হাজার ৪৩৩ জন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রাশিয়ায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৭। কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ১০ হাজার ২৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই হিসাবে রাশিয়ার তুলনায় ভারতে শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে দশ হাজারের বেশি রয়েছে।

ভারতের তুলনায় বেশি সংক্রমিত রোগী রয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলে। গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে ২৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৯ জনেরশরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে লাখ ২৯ হাজার ৯৪৭ জন। সর্বোচ্চ সংক্রমণ মৃত্যুদুই তালিকায়ই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে।

অন্যদিকে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে গতকাল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের সর্বমোট সংখ্যা ১৬ লাখ হাজার ৫৫। দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৮৬৭। তবে সর্বোচ্চ সংক্রমণে ভারতের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় হলেও করোনায় মৃতের সংখ্যা দেশটিতে তুলনামূলক কম। ভারতের তুলনায় সংক্রমণে পিছিয়ে থাকলেও মৃতের সংখ্যায় এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, মেক্সিকো, স্পেনসহ কয়েকটি দেশ।

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। রাজ্যটিতে গতকাল পর্যন্ত লাখ হাজার ৬১৯ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তামিলনাড়ুতে সংখ্যা লাখ ১১ হাজার ১৫১। রাজধানী দিল্লিতে গতকাল পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৪৪৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ভারতে মোট করোনা সংক্রমণের ৬০ শতাংশই তিন রাজ্যে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে গতকাল ৮৯৫ জনের শরীরে নতুন করে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একদিনের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটিতে ২১ জন কভিড-১৯ রোগী মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ১২৬ জন। করোনায় সর্বমোট মারা গেছে ৭৫৭ জন।

জানুয়ারির শেষের দিকে ভারতে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শুরুর দিকে দেশটিতে সংক্রমণের হার তুলনামূলক শ্লথ ছিল। ২৪ মার্চ থেকে টানা লকডাউনে সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি থাকায় সংক্রমণ বাড়ছিল ধীরগতিতে। তবে মে মাসের দিকে এসে অর্থনীতির গতি ফেরানোর স্বার্থে লকডাউন শিথিল করার পর থেকে দেশটিতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এখন প্রতিদিনই প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে ভারতে।

তবে শুরুর দিকে ভারতে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল সীমিত। ধীরে ধীরে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে ভারত সরকার দেশজুড়ে এক কোটির বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় আগামী দিনগুলোয় পরীক্ষার পরিধি আরো বাড়ানো হবে।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু থেকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ তা বাস্তবায়নের জন্য ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। কার্যত সফল কেরালা মডেল সামনে এনে রাজ্যটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা রীতিমতো বৈশ্বিক রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। করোনা ঠেকাতে কেরালা সরকার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে আসছিল। বিদেশ থেকে ফিরলে, এমনকি ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে কেরালায় ফিরলেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক ছিল। গতকাল এক বিবৃতিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখন থেকে আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার দরকার হবে না। বরং অন্য রাজ্য থেকে ফেরার পর নিজ উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেই চলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন