জনপ্রিয় প্লেব্যাক শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী নগরীর একটি ক্লিনিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আটবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এ কণ্ঠশিল্পী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এ খবর বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন তার ঘনিষ্ঠজন মোমিন বিশ্বাস।
তিনি বলেন, দাদা আর নেই।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা গেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে লড়াই করছিলেন এ কণ্ঠশিল্পী।
রাজশাহীতে বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
গতকাল সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হতে থাকে।
তাকে অক্সিজেন দিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়।
কিন্তু সন্ধ্যার দিকে মারা যান তিনি।
দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে করোনা সংকটের মধ্যেই গত ১১ জুন রাতে একটি বিশেষ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন।
এর পর থেকে তিনি জন্মস্থান রাজশাহীতে বোনের বাসায় থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এর আগে নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের যান এন্ড্রু কিশোর।
সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে।
পরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়।
এন্ড্রু কিশোরের অসুস্থ হওয়ার পর ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিক্রি করে দেয়া হয় রাজশাহী শহরে তার কেনা ফ্ল্যাটটি।
চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
শিল্পীর পরিবারের পাশাপাশি সংগীতশিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীরা এগিয়ে এসেছেন।
এন্ড্রু কিশোরের জন্মও রাজশাহীতে।
তিনি প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয়তা রাজশাহীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৭ সালের দিকে ঢাকা থেকে সিনেমার প্লেব্যাকে গাওয়ার জন্য ডাক পড়ে।
তখনকার বিখ্যাত সুরকার আলম খানের সংগীত পরিচালনায় মেইল ট্রেন নামের একটি চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’
গান দিয়ে তার সিনেমার প্লেব্যাক গায়কের জীবন শুরু
১৯৭৯ সালে এজে মিন্টু পরিচলিত ‘প্রতীজ্ঞা’
চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’
গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
এর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮০ সালের শুরুতে এন্ড্রু গান গাওয়ার জন্য ঢাকায় স্থায়ী হন।
আর চলতে থাকে তার সংগীত সাধনা।
মৃত্যুকালে এন্ড্রু কিশোর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ দেশ-বিদেশে বিপুল সংখ্যক গানের ভক্ত রেখে গেছেন।