১৫ মে মার্ক লুকাস একটি ফোনকল পেয়েছিলেন, যা তাকে কিছুক্ষণের জন্য অসাড় করে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে ২১ বছর শিক্ষকতার পর তিনি নোটিস পান, আগামী শিক্ষাবছর থেকে তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমার অবসর নেয়ার আর ১০ বছর বাকি আছে। বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় এখনকার চাকরির বাজার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।’
মার্ক লুকাস অবশ্য একা নন। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাজেটের ঘাটতির কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৩ জন শিক্ষককে একই নোটিস ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে। সংক্রমণ রুখতে মহামারীর শুরুতেই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে অনলাইন ক্লাস নেয়া শুরু হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ ডলার হারিয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবে কিনা, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সহসভাপতি টেরি হার্টল বলেছেন, সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মহামারী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থপ্রবাহে মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আর্থিক চাপ মোকাবেলায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মক্ষেত্র ছোট করতে শুরু করেছে। ক্রনিকল অব হায়ার এডুকেশনের তালিকা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৯০টি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ৪৮ হাজার ৮৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী কভিড-১৯ সম্পর্কিত ছাঁটাই, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করা বা সাময়িক অবৈতনিক ছুটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওহাইওর আরবানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য স্থায়ীভাবে তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
গত এপ্রিলে ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ডুয়েন নেলিস মহামারীটির আর্থিক প্রভাবগুলো বর্ণনা করেছিলেন; শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাবার ও পার্কিংয়ের জন্য অর্থ ফেরতের প্রয়োজনীয়তার কারণে ১ কোটি ৮ লাখ ডলারের বেশি রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় তহবিলও ২০ শতাংশ হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ৮০ লাখ ডলার এবং পরের বছর এটা ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
লুকাসের মতো বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী প্রভাষক মারিয়া মেলোনও মে মাসের মাঝামাঝিতে চুক্তি সমাপ্তের নোটিস পান। যদিও তারা হঠাৎ করেই চুক্তি সমাপ্তির নোটিস পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের নতুন চাকরি সন্ধানে এক বছরও সময় দেয়া হচ্ছে না। কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা ছাড়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মেলোন বলেন, পরের সেমিস্টার থেকে হয়তো আর কলেজে যেতে পারা না। আমাকে এখন অন্য একটি কাজ খুঁজতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের ছাঁটাই বন্ধ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীরা ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ছাঁটাই না করতে ‘সেভআওয়ারপ্রফেসর’
হ্যাশট্যাগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
দ্য সায়েন্টিস্ট