নদ-নদীর পানি বেড়ে জমি প্লাবিত

সিরাজগঞ্জে নিম্নাঞ্চলের পাকা ধান সংগ্রহে ভোগান্তি কৃষকের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার পর থেকে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের জমিতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে এসব জমি থেকে পাকা ধান সংগ্রহে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। তাদের আশঙ্কা, সময়মতো ধান সংগ্রহ করা না গেলে এসব জমির ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিরাজগঞ্জে এবার লাখ ৪১ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় লাখ টন। কৃষকরা এখন পুরোদমে ধান সংগ্রহে ব্যস্ত। এরই মধ্যে লাখ ১৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। গত মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার পর থেকে বৃষ্টিতে যমুনা নদীর পাশাপাশি করতোয়া, ফুলজোড়, গুমানী, বড়াল, ইছামতী হুরাসাগরসহ চলনবিল এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোয় পানি বেড়েছে। এতে চলনবিলের চর এবং নিম্নাঞ্চলে শত শত বিঘা জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এসব ধান সংগ্রহে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি দেয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাজীপুর, তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি সদর উপজেলায় পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে আছে। এসব ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে তাদের।

কাজীপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের কুমারিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে। যার কারণে যমুনার সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোয় পানি প্রবেশ করার ফলে আমার দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। একইভাবে আমাদের এলাকার অনেকেরই পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এখন ধান কাটার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। ডুবে যাওয়া ধান কাটতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হচ্ছে।

বেলকুচি সদর ইউনিয়নের সোহরাব হোসেন বলেন, সারা বছর আমাদের ভাতের জোগান দেয় ধান। করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই জীবিকা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। হঠাৎ করে পাকা ধান ডুবে যাওয়ায় সেই চিন্তা আরো বেড়ে গেল।

তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের আব্দুস সালাম নামের এক কৃষক জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সাড়ে চার বিঘা জমির পাকা ধান ডুবে গেছে। ঋণ করে আবাদ করেছি। চলতি বছর ফলন ভালো হয়েছিল। তাই ভেবেছিলাম, ঋণ পরিশোধ করতে পারব। কিন্তু সে আর হলো না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কি খাব সেই চিন্তায় আছি।

বেলকুচি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ প্রসাদ পাল বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে উপজেলায় হাজার ৮০০ বিঘা আবাদি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত কৃষি অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুল হক বলেন, করোনায় খাদ্যনিরাপত্তায় ধান গুরুত্বপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় আম্পান অতিবৃষ্টির কারণে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অন্যান্য নদ-নদী, খাল-বিলে পানি বেড়েছে। যার কারণে কিছু জায়গায় ধান তলিয়ে গেছে। তবে জেলার প্রায় ৮৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। -১০ দিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে।

ডুবে যাওয়া জমির ধান ঘরে তুলতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তবে সরকার

কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকের পাশে

আছেন। কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। কৃষকদের বিনা মূল্যে ধান সবজির বীজ এবং সারসহ নানা উপকরণ দেয়া হচ্ছে। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জেলার প্রায় হাজার কৃষককে পাঁচ কেজি করে আমন ধানের বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন