পুঁজিবাজারের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন

স্বচ্ছতার পাশাপাশি লেনদেন আরো নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত বাস্তবায়ন হোক

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনসমৃদ্ধ পুঁজিবাজারের প্রয়োজনীয়তা আরো একবার সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী লকডাউনের মধ্যেও পুঁজিবাজারের কার্যক্রম চালু ছিল। সময় হাতেগোনা যে কয়েকটি দেশের পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মূলত পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা না থাকার কারণেই কভিড-১৯-এর সময়ে বাংলাদেশে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার বন্ধ রাখতে হয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেশের পুঁজিবাজারকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের মতো আংশিক অটোমেটেড পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাজার চালু রাখা নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান সক্ষমতার ঘাটতি দূর করে দেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো পুরোপুরি অটোমেটেড করে তোলার গুরুদায়িত্ব নতুন কমিশনের ওপরই বর্তাবে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ১৯৯৮ সালে অটোমেটেড প্লাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন চালু হয়। কিন্তু এরপর ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি সমন্বিত একীভূত অটোমেটেড সিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যে কারণে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারের কার্যক্রম চালু থাকলেও বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পুঁজিবাজারের লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য যে অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) রয়েছে, সেটি থাকে ব্রোকারেজ হাউজের কাছে। কিন্তু দেশে ওএমএস সিস্টেম পরিচালনা করছে স্টক এক্সচেঞ্জ। এজন্য প্রতি বছর ফি বাবদ বড় অংকের অর্থ গুনতে হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জকে। দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন সম্পন্ন করতে ব্রোকারেজ হাউজের ওয়ার্ক স্টেশন পরিচালনার জন্য এখনো ব্যক্তির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আবার ব্রোকারেজ হাউজের যে কার্যালয় বা শাখার জন্য ওয়ার্ক স্টেশন নির্ধারিত রয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যায় না। শেয়ার কেনাবেচার পর ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে কিনা, সেটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিশ্চিত হতে হয়। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজ তালিকাভুক্ত কোম্পানির তথ্য আদান-প্রদান এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের পুঁজিবাজারকে পুরোপুরি অটোমেটেড করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে একটি সমন্বিত এবং একীভূত সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা, নিস্তেজ হয়ে পড়া মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয়া, ইকুইটির বাইরে বাজারে নতুন পণ্য আনা, শেয়ার বাই ব্যাক চালু করা, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি বিদ্যমান আইন বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হলেও পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন জরুরি।

পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত, সর্বোপরি লেনদেনকে আরো মসৃণ করতে অটোমেশনের বিকল্প নেই। তাছাড়া উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজারকে আরো এগিয়ে নিতে এবং নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্যও এটি প্রয়োজন। তাছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলেও এর আধুনিকায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সিএমডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে এডিবির দীর্ঘমেয়াদি সংযোগের ফলে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রূপান্তর ঘটেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে অবকাঠামো খাতের মতো অর্থবহ খাতে বিনিয়োগে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নীতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এডিবির প্রকল্পের মাধ্যমে একটি টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে সরকারও আগ্রহী। বর্তমানে বিএসইসিতে যে অটোমেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেটিও বাস্তবায়ন হয়েছে এডিবির দেয়া শর্তের কারণেই। সিএমডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে এডিবির দীর্ঘমেয়াদি সংযোগের ফলে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রূপান্তর ঘটেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে অবকাঠামো খাতের মতো অর্থবহ খাতে বিনিয়োগে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নীতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এডিবির প্রকল্পের মাধ্যমে একটি টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় অসমাপ্ত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন