লকডাউনের নয়া বিজ্ঞান

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০২০ সালের শুরুতে সরকারগুলোর অনেকটা অজ্ঞাতেই আঘাত হানে নভেল করোনাভাইরাস। সেই সঙ্গে মহামারী ঠেকাতে দ্রুতই দেশে দেশে লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। যদিও এই অল্প সময়ের মধ্যে লকডাউন কৌশলের কার্যকারিতা বিবেচনা করা বেশ কঠিন। তবে এখন মূল দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে যখন আমরা আবার সব খুলে দিচ্ছি তখন কভিড-১৯ ফের আমাদের ওপর আঘাত হানবে কিনা সেটা বিবেচনা করা। ধরনের দ্বিতীয় ঝড়ের তীব্রতা সাধারণত বেশ ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে। অন্যদিকে এখনো বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের কভিড-১৯- আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ আছে। অন্যদিকে বর্তমান লকডাউনে এরই মধ্যে অনেক সরকার সামাজিক, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য খাতে ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে (অনেকেই দীর্ঘমেয়াদে এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে)

এখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করার সঙ্গে এই প্রশ্ন সামনে এসেছে যে ভাইরাসকে সামলাতে একই সময়ে নতুন কোনো লকডাউন কৌশল পরিকল্পনা করা হবে কিনা। যা কিনা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্যও সহায়ক হবে। এটাকে বলা হচ্ছে সায়েন্স অব লকডাউন বা লকডাউনের বিজ্ঞান এটা  এমন একটা ক্ষেত্র যা আমাদের প্রায় অপরিচিত এবং এটিকে বোঝার জন্য গবেষণা চলছে। এই লকডাউন পলিসির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কভিড-১৯ নামক রোগটিকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকা নানা ধরনের অনিশ্চয়তা। যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে, কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার পর লক্ষণ প্রকাশের, সংক্রামক হওয়ার এবং সেরে ওঠার জন্য যে সময় লাগে সেটি। এছাড়া জনগণের মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা উপসর্গবিহীন রোগীসহ আরো কিছু বিষয় এখানে যুক্ত থাকে। অনিশ্চয়তার আরো একটি উৎস হচ্ছে বিভিন্ন ভৌগোলিক স্থানের মধ্যকার অজানা সংক্রমণকে মোকাবেলার বিষয়টি। তাত্পর্যপূর্ণ গতিতে বাড়তে থাকা মহামারী এসব অনিশ্চয়তাকে আরো ত্বরান্বিত করে। অনিশ্চয়তা এবং ব্যাপক বিস্তৃতি লকডাউনের প্রত্যাশিত সময়কাল এবং তার থেকে মুক্তির সময় নির্ধারণকে কঠিন করে দেয়।

বিজ্ঞান কীভাবে লকডাউনে সাহায্য করতে পারে? এখানে একটি শাখা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাথমেটিকস। যার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ কাজ করে হস্তক্ষেপের সময়কাল, বিলম্ব অনিশ্চয়তা নিয়ে। অনেক বছরের গবেষণা আমাদের বলছে, পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা খুব কঠিন, বিশেষ করে বর্ধনশীল মহামারী সামনে রেখে এটা আরো বিপজ্জনক। কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ আগে সংক্রমণের কী অবস্থা দেখা গিয়েছিল তার একটি চিত্র দেয়া যেতে পারে। তবে মহামারীর একটি সুস্পষ্ট সাম্প্রতিক চিত্র দেয়া যাবে না। এই জাতীয় ডাটার ওপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ খুবই বিপজ্জনক। তাতে হস্তক্ষেপে অনেক দেরি হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগী উপচে পড়ে এবং মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে যায়।

যদিও কিছু বিজ্ঞানী কন্ট্রোল থিওরির সঙ্গে পরিচিত হয়েও অনিশ্চিত রিয়েল টাইম ডাটার ব্যবহারকে বিবেচনা করেছেন লকডাউনের মাধ্যমে কভিড-১৯ কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তাদের অনেকেই দ্বিতীয় ঝড় মোকাবেলার প্রস্তাব হিসেবে এটি করার কথা বলছেন। পরিবর্তে, কন্ট্রোল থিওরি যা পরামর্শ দেয় তা হলো বিলম্ব, অনিশ্চয়তা তাত্পর্যপূর্ণ বৃদ্ধি চিহ্নিত হতে পারে নিয়মিত হস্তক্ষেপের নীতির মাধ্যমে। যা পুরোপুরিভাবে রিয়েল টাইম ডাটার ওপর নির্ভরশীল নয়। এই নীতি অনুসরণ করে অনেকগুলো দল তৈরি করেছে লকডাউন কৌশল। কৌশলের উদ্দেশ্য নিয়মিত লডডাউন বিরতির মধ্য দিয়ে অদলবদল করে সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এই নীতিতে ভাইরাস দমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দিচ্ছে। যা সরকার নাগরিকদের স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে।

উদাহরণস্বরূপ এটি এমনভাবে হতে পারে যেখানে একদিন সাধারণ কার্যদিবসের বিপরীতে ছয়দিন লকডাউন চলতে পারবে। যদিও এই জাতীয় কৌশলগুলো অন্যগুলোর মতো কাজ করে না। লকডাউন সায়েন্সের কাজই হলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে মূলত ভাইরাসকে দমন করা। সে সঙ্গে অনিশ্চয়তাকে শক্তভাবে মোকাবেলা করা। বলে রাখা ভালো, এগুলো কিন্তু ভাইরাসকে নির্মূল করবে না। এটার লক্ষ্যই হলো ভ্যাকসিন অথবা কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি আসা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভাইরাসের বিস্তারকে কমিয়ে রাখা।

এই পর্যায়ে সহজলভ্য ডাটা ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটি একটি যৌক্তিক উদ্বেগ কিন্তু ডাটা ব্যবহার করা উচিত সাবধানতার সঙ্গে। ক্ষণস্থায়ী ডাটা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিপজ্জনক হতে পারে কারণ ডাটাগুলো খুবই অনিশ্চিত। যাই হোক, দীর্ঘ সময় ধরে অনিশ্চিত ডাটা গড়পড়তাভাবে দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা প্রকাশ করে, যেমন সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে বা কমছে কিনা এসব জানা যেতে পারে। তবে যদি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার হয়, সে সময় পুরনো ডাটার ব্যবহারের কোনো মানে নেই। তবে লকডাউন নীতিকে সমন্বয় করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ডাটার ব্যবহার ভালো ব্যাপার। কারণ আমাদের নীতির পরিবর্তন সবসময় ভাইরাসকে দমাতে ভূমিকা রাখে।

কিছু নীতি অবশ্যই অন্য নীতির চেয়ে ভালো। যা কিনা কর্মদিবসের নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং লকডাউনের দিন, এই সময়ের মাঝে ভাইরাসের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসব গড় ডাটা সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করে পাওয়া যেতে পারে।

এই পদ্ধতি খুবই প্রাকৃতিক। যার একটি উদাহরণ হতে পারে প্রথমবার স্পোর্টস কার চালানোর ঘটনা। যখন আমরা নতুন গাড়ি চালাই তখন আমরা বিপদের কথা মাথায় রেখে খুবই সতর্কতার সঙ্গে এটি ব্যবহার করি। এরপর যতই দিন যেতে থাকে আমরা তার আচরণ সম্পর্কে জানতে থাকি। আমরা নিজেদের কৌশলও পরিবর্তন করি এবং গতিও আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিই। বিভিন্ন মেয়াদে লকডাউন ব্যবহার করে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণেও একই কাজ করতে হবে। কিন্তু বাড়তি জটিলতাগুলোও সতর্কতার সঙ্গে নজরে রাখতে হবে।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন