করোনাকালে অন্যান্য টিকা কার্যক্রম ব্যাহত, ঝুঁকিতে লাখ লাখ শিশু

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। ভাইরাসটির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিশুদের অন্যান্য রোগের টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রমটা বিশ্বজুড়েই থমকে আছে। এতে প্রতিরোধযোগ্য রোগে বিশ্বে লাখ লাখ শিশু মারা যেতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্তত ৬৮টি দেশে শিশুদের টিকা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু দেশে তো কার্যক্রম পুরোপুরিই বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার যাতে কমানো যায় সেটি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু দেশকে শিশু টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখন কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব দেখছেন।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), দ্য সাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট এবং ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, প্রতিদিন অযথাই হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে। 

যেসব কারণে শিশুদের টিকা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে:

১. বাবা-মার ভয়, বাড়ির বাইরে গেলে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

২. স্বাস্থ্যকর্মীদের এখন মহামারী নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। 

৩. ক্লিনিকগুলোতে টিকা সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সমস্যা।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরে বলেন, ‘হাম বেড়ে চলেছে, পাশাপাশি রয়েছে ডিপথেরিয়া ও কলেরা। কাজেই এটা বিরাট এক সমস্যার কারণ হতে পারে। যখন বিশ্ব এক থাকে তখন শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য এসব রোগকে আমরা জয় করতে পেরেছি।’ তাদের ভয়, বর্তমান সংকটে আগের অর্জনগুলো বিফলে যেতে পারে। 

আফ্রিকান দেশ নাইজারের রাজধানী নাইমের ক্লিনিকগুলো সচরাচর পরিপূর্ণ থাকে, কিন্তু এখন অপেক্ষমান রুমটি খালি। এ দেশটিতে প্রায় ১ হাজার কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এ দেশেই পোলিওর মতো ভয়ংকর রোগ ফিরে আসছে, যে রোগে মানুষ পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে উঠতে পারে। নাইজারে ফেব্রুয়ারি থেকে চারজন পোলিও রোগী শনাক্ত হয়েছে।  গোলাপী স্কার্ফ আর নীল রঙা ফেস মাস্ক পরিহিত জয়নাবু তাহিরা কোলে ধরে আছেন শিশুকন্যা ফাদিলাকে। শিশুকে টিকা দিতে আসা এ নারী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এখানে আসতে আমার খুবই ভয় লাগছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাকে বলেছেন, এই টিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ থাকতে আমি অবশ্য কিছু কাজ করি-যেমন কয়েকবার হাত ধুয়ে থাকি।’

করোনাভাইরাসের কারণে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ ও আফ্রিকায় ২ কোটি ২৯ লাখ শিশুকে টিকা দেয়া যায়নি। এ কারণে নেপাল ও কম্বোডিয়ায় হাম; ইথিওপিয়ায় হাম, কলেরা ও হলুদ জ¦রের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। 

জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ জানিয়েছে, মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হওয়ার কারণে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাদান বিভাগের প্রধান কেট ও’ব্রায়েন বলেন, ‘আমরা যেটা দেখছি, এসব রোগ 

গর্জন দিয়ে ফিরে আসছে আবার। এর ফলে আমার আরো অধিক সংখ্যক শিশুর মৃতুও দেখব, যা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন।’ তিনি বলেন, যদি সরকারগুলো এখনই পদক্ষেপ নেয় তবে বিপর্যয় অনেকটাই সামাল দেয়া যাবে। 

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন