জৈমিন রজনীর চিত্রনাট্য ও বিনীত অরোরা পরিচালিত ‘ইফ নট ফর ইউ’
২৮ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র। বিষয় হলেন বব ডিলান। এ প্রামাণ্যচিত্রে জীবন্ত কিংবদন্তি বব ডিলান কীভাবে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের সংগীতশিল্পীদের প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন, তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
জৈমিন ও বিনীত অরোরার মতো ডিলানের ভক্তদের দ্বারা নির্মিত এ ডকুমেন্টারি বব ডিলানের ভক্তদের উদ্দেশেই তৈরি। সহজ কথায় ‘ইফ নট ফর ইউ’
হলো ডিলানের ভক্ত দ্বারা ভক্তদের জন্য নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। শিরোনামটি নেয়া হয়েছে বব ডিলানের একটি গানের কথা থেকে।
কলকাতার অনেক প্রবীণ সংগীতশিল্পীর সাক্ষাত্কার নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটি। তাদের মধ্যে আছেন গায়িকা ঊষা উত্থুপ, চলচ্চিত্র নির্মাতা-গীতিকার অঞ্জন দত্ত, সংগীত প্রযোজক মিতি অধিকারী, গায়ক-গীতিকার সুস্মিত বোস, ক্যাসিনি’জ ডিভিশনের রাহুল গুহ রায়সহ আরো অনেকে। এমনকি প্রবীণ অভিনয়শিল্পী নন্দন বাগচি ও লোক-ফিউশন শিল্পী অর্কো মুখার্জিও আছেন এ তালিকায়।
‘ইফ নট ফর ইউ’তে আরো দেখানো হয়েছে বব ডিলানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকা পূর্ণ দাস বাউলের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনন্দ লালের কথাও শোনা যাবে, যিনি ডিলানের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার লেখাকে ২০১৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ‘ইফ নট ফর ইউ’
গত বছর কলকাতা ও শিলংজুড়ে প্রদর্শিত হয়।
ভিনিত অরোরা একজন পার্টটাইম চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং পেশাগত জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শদাতা। অন্যদিকে জৈমিন রজনী বব ডিলানের ভক্ত। তিনি বিজ্ঞাপন খাতে কাজ করেন ও সাংবাদিকতাও করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজের সংগীত নিয়ে মনোনিবেশ করছেন। এ দুই কলকাতাবাসীর জন্য অন্য শহরগুলো বাদ দিয়ে নিজেদের শহর বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল পরিকল্পিত। কলকাতা ও শিলংয়ে স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্তটিও ছিল তাদেরই। তাদের কাছে কলকাতা ও ডিলান দুটোই ভালোবাসার অংশ।
রজনী বলেন, ‘ডিলান কলকাতার স্থানীয় বাসিন্দার মতো। প্রথমত এ শহরটিতে আগে হাই এবং গ্রেট বিয়ারের মতো কয়েকটি রক অ্যান্ড রোল ব্যান্ড ছিল। ইংরেজি গান শোনার সংস্কৃতি এখানে আগে থেকেই ছিল। দ্বিতীয়ত, ডিলানের সাহিত্য ও কবিতা এখানে বেশি আলোচিত হয়।’
রজনী আরো বলেন, ডিলানের সঙ্গে ভারতের অন্য যে আরেকটি শহরের সম্পর্ক রয়েছে সেটা হলো শিলং। তার কারণ ব্লুজ রকার লৌ মাজাউ শিলংয়ের অধিবাসী। অবশ্য মাজাউ তার সংগীত জীবন কলকাতায় শুরু করেছিলেন।
রজনী এ প্রামাণ্যচিত্রের চিত্রনাট্য ডিলানের গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেছিলেন। তার মনে হয়েছিল এ গান কলকাতার চেতনার সঙ্গে মিলে যায়। ডিলানের অনেক গানের লাইনগুলো নাকি কলকাতার জীবনকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। রজনীর কথায়, ‘ডাইম স্টোর, বাস স্টেশনে মানুষ চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে, বই পড়ে, উক্তি আওড়ায়, দেয়ালে নিজের সিদ্ধান্ত লিখে দেয়। ডিলানের লাভ মাইনাস জিরো গানে আমরা দেখি একদল মানুষ সংবাদপত্র হাতে নানা বিষয়ে আলাপ করছে।’
প্রামাণ্যচিত্রটি নানাজনের সাক্ষাত্কার এবং ডিলানের আর্কাইভ ফুটেজ নিয়ে নির্মিত। প্রত্যেকটি সাক্ষাত্কারই আকর্ষণীয় গল্প দিয়ে পূর্ণ, তবে এগুলো হঠাৎ করে শুরু হয় এবং হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়।
পরিচালক ভিনিত অরোরা বলেন, তিনি দর্শকদের একঘেয়েমিতে ভোগাতে চান না বলেই ডকুমেন্টারিটি এভাবে বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কমপক্ষে আরো ১ ঘণ্টা অঞ্জন দত্তের সঙ্গে কথা হয়েছিল—কীভাবে ডিলান কলকাতার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, তা আমাদের অঞ্জন দা বলেছিলেন। আমরা যদি সেই পুরো গল্পটা যোগ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের গল্পটা আরো ভালো হতো। তবে সময় বেশি ছিল না। তাই সাক্ষাত্কারে তারা যা বলেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে গভীর বিষয়গুলো আমরা বেছে নিয়েছি।’
রজনী উল্লেখ করেন, সাক্ষাত্কারের প্রশ্নগুলো তৈরি করা হয়েছিল সাক্ষাত্কার দেয়া প্রতিটি ব্যক্তির সঙ্গে ডিলানের সম্পর্ক কেমন ছিল তার ওপর ভিত্তি করে। তাই দর্শকরা ডিলান সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা পাবেন।
ডকুমেন্টারিটিতে অঞ্জন দত্ত ডিলান ও কলকাতার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা বলেছেন। সুস্মিত বোস, যিনি কিনা ডিলানের অন্যতম অনুপ্রেরণা পিট সিগারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তিনি কথা বলেছেন ডিলানের গান ও কবিতা নিয়ে। ১৯৯০ সালে কলকাতায় পূর্ণ দাস বাউলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ডিলানের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পান যুক্তরাজ্যের বিবিসির প্রযোজক মিতি অধিকারী। তিনি তার সাক্ষাত্কারে তুলে ধরেন কীভাবে পূর্ণ দাস বাউলের চেয়ে আলাদা ছিলেন ডিলান। ডিলান ভক্তদের জন্য ডকুমেন্টারিটি এক অনন্য উপহার হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
স্ক্রলইন অবলম্বনে নাওমী নাসরিন