সব শ্রেণীর মানুষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আসবে : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তার সুবিধা সব শ্রেণী-পেশার মানুষ পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, কৃষক, শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ছোটখাটো ব্যবসায়ী যে যেখানেই কাজ করেন, তারা সবাই উপকৃত হবেন। কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্পতারাও উপকৃত হবেন। বাংলার প্রত্যেকটা মানুষকে প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। এটি কতদিন থাকে আমরা জানি না। শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া এখন বিশ্বের এক প্রান্তে কিছু ঘটলে তা অপর প্রান্তের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও এটি প্রভাব ফেলবে। তবে পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেক মানুষের পাশে আছি। গত মাসেও আমাদের দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। রফতানি খাত বিশেষ করে রেমিট্যান্স থেকে আমাদের প্রবৃদ্ধির একটি বড় অংশ আসে। এবার করোনার কারণে কিছুটা কমলেও অন্যান্য দেশের থেকে আমরা ভালো অবস্থানে থাকব। আমার বিশ্বাস, দেশের মানুষ আশা হারা হবেন না। আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসব।

মন্ত্রী বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হলো, সব বিপদ কেটে যায়। বিপদও কেটে যাবে। বিপদ কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সময় বেশি না নিয়ে যাতে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি, যাতে আমরা আবার যে জায়গাতে ছিলাম সেখানে চলে যেতে পারি, সেখান থেকে কাজ শুরু করে আমাদের যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, তা অর্জনে আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি, সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী আজকের প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছেন। তার কাছে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব, কারণ তিনি দেরি করেননি। করোনা ঘটে যাওয়ার পর করেননি। আগেভাগেই সে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বিশ্বে মহামন্দা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আমাদের একার পক্ষে যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এটা মোকাবেলা করার জন্য ফিসক্যাল পলিসি মনিটরিং পলিসির সমন্বয় করে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী চারটি প্যাকেজের মধ্যে বলেছেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার একটা ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ঋণ সুবিধার আকার হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এটা রিভলব করবে। আমরা জানি যে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদান করা হয় স্বল্প সময়ের জন্য। অর্থাৎ চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঋণগ্রহণকারী তা পরিশোধ করে দেন। সে কারণে ব্যাংকগুলো যদি দক্ষতার সঙ্গে তহবিল ব্যবহার করতে পারেন ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান যদি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেন, তাহলে তহবিল থেকে এক বছরে দুই দফায় ৬০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা সম্ভব হবে। সেই হিসাবে প্রধানমন্ত্রী যে ঋণ সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন, তা যদি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে প্রস্তাবিত ঋণ সুবিধার পরিমাণ দাঁড়াবে লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যেহেতু ক্রেডিট রিস্ক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বহন করবে, তাই আমরা মনে করি মোরাল হ্যাজার্ড হবে না। বরং ঋণের কোয়ালিটি উন্নত হবে, যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত উত্তরণে সহায়তা করবে। 

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজে সব শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ সচিব বলেন, ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডিটেইল নীতিমালা প্রণয়ন করবে, তখন অর্থ বিভাগও এটির সঙ্গে কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, যাতে প্যাকেজগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন