বেঁচে থাকতে অক্সিজেন লাগে না যে প্রাণীর

বণিক বার্তা অনলাইন

প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। অক্সিজেনশূন্য স্থানে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমন এক পরজীবীর সন্ধান পেয়েছেন যাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই। 

সম্প্রতি ইসরায়েলের তেল-আবিব বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক স্যামন মাছের শরীরে বাস করে এমন প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন। আনুবীক্ষণিক এ পরজীবী বহুকোষী প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও অক্সিজেন গ্রহণ করে না। এই আবিষ্কার ইউকেরিওটিক বা প্রকৃতকোষী প্রাণীজগৎ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা পাল্টে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গবেষকরা নতুন আবিষ্কৃত প্রাণীটির নাম দিয়েছেন হেননেগুয়া স্যালমিনিকোলা। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্যামন মাছের কোষের ভেতরে অক্সিজেনশূন্য স্থানে থেকে এরা প্রক্রিয়াজাত পুষ্টি গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। তবে এরা পোষকদেহের কোনো ক্ষতি করে না, মানুষেও সংক্রমিত হয় না।

গবেষকরা বলছেন, এটি কোরাল ও জেলিফিশ পরিবারের অন্তর্গত। এর জিন মানচিত্রটি সবে তৈরি করা হয়েছে। এই ক্ষুদ্র প্রাণী বহুকোষী হলেও ১০টি বা তার কম সংখ্যক কোষের সমম্বয়ে এদের শরীর গঠিত।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট স্টিফেন অ্যাটকিনসন বলেন, আমরা যখন একটি প্রাণীর কথা বলি ধরেই নেয়া হয় সেটি বহুকোষী এবং বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে। তবে ব্যাকটেরিয়ার মতো কিছু এককোষী জীব এর ব্যতিক্রম। আমাদের এই গবেষণায় দেখিয়েছি, অন্তত একটি বহুকোষী প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে যেটির অক্সিজেন লাগে এমন জিনগত প্রত্যঙ্গ নেই।

এর ব্যাখ্যায় গবেষকরা বলছেন, অক্সিজেন শূন্য পরিবেশে বসবাসের কারণেই পরজীবীটি অভিযোজিত হয়েছে। অভিযোজনের প্রক্রিয়ায় এটি কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া জিনোম ছেঁটে বাদ দিয়েছে। বেশিরভাগ জীবের শরীরে কোষের মধ্যে খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের যন্ত্র হচ্ছে মাইটোকন্ড্রিয়া, এ কারণে মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় পাওয়ার হাউস। এই জিনোমটি না থাকার কারণে স্যামন মাছের ওই পরজীবীটিকে ওই বিশেষ অঙ্গটির জন্য জিন করতে গিয়ে শক্তি খরচ করতে হচ্ছে না। এতে তার খুব কম শক্তি লাগছে।

অ্যাটকিনসন বলেন, হেননেগুয়া স্যালমিনিকোলাই একমাত্র প্রাণী যার অক্সিজেন লাগে না- এমনটি তারা ভাবছেন না। তাদের ধারণা পৃথিবীতে এমন আরো অনেক প্রাণী রয়েছে এবং তাদের জীবনধারনের প্রক্রিয়া আরো জটিল ও অদ্ভূত।

গত জানুয়ারি মাসে পিএএনএস বিজ্ঞান সাময়িকীতে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্র: সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন