মানুষ কেন কান্না করে?

ফিচার ডেস্ক

অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানুষ কান্না করে কান্নাকে বিশ্লেষণ করলে পুরো সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে শুরু করে সামাজিক অবস্থানসবকিছুই বোঝা সম্ভব এটির অধ্যয়ন নিজেদের ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে আচরণ হিসেবে কান্নাকে অনেকেই ঠাট্টা-উপহাস করেন তারা বলেন, অশ্রু হলো মেয়েলি, প্রশ্রয়পূর্ণ অতিনাটকীয় বিষয় এটা অনুমান করা কঠিন নয় যে ধারণা পুরুষতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ

শিক্ষকরা সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাঁদতে নিষেধ করেন এবং তারা এটাকে সস্তা হিসেবে উল্লেখ করেন অন্যদিকে মনোবিদরা ভালো কান্নাকাটি প্রয়োজনীয়তা আছে বলে উল্লেখ করেন তারা অশ্রুকে একটি পরিচয় মানসিক তৃপ্তি হিসেবে দেখেন, যার শারীরিক প্রভাব আছে অনেকে কান্নাকে আত্মা-পরিষ্কারের ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করে নিজেদের ঘোষণা দেন যে আমি একজন ক্রাইয়ার

তবে সব কান্নাও এক রকম নয় মানব শরীর তিন ধরনের কান্না উৎপাদন করে একটা হলো মৌলিক, যা শুষ্কতা থেকে রক্ষার জন্য চোখের বলের উপরে তৈলাক্ত স্তর তৈরি করে আরেকটি হলো প্রতিবিম্ব, যা চোখে ধূলিকণা বা কিছু পড়লে সেটা থেকে চোখকে রক্ষার জন্য হাজির হয় পেঁয়াজ কাটার সময় বা তীব্র আলোর মুখোমুখি হলেও এটা হয়ে থাকে অর্থাৎ চোখ কোনোভাবে বিরক্ত হলে প্রতিবিম্বের মাধ্যমে চোখ দিয়ে পানি বের হয় তৃতীয়টা হলো আবেগীয়, যা সংবেদনশীল কোনো কারণে ঘটে থাকে আবেগীয় বা সংবেদনশীল অশ্রুতে মৌলিক প্রতিবিম্বের চেয়ে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকে প্রোটিনের কারণে অশ্রু অনেক ঘন হওয়ায় ধীরে ধীরে সেগুলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে


অশ্রুগুলো যত বেশি গড়িয়ে পড়বে, অন্যদের জন্য তার বার্তাগুলো তত বেশি উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি হবে সংবেদনশীল অশ্রু একটি সামাজিক জৈবিক সংকেত এটা যোগাযোগেরও একটা মাধ্যম কিন্তু অনেক সময় মানুষ একা একাই কান্না করে থাকে, যেখানে কান্নার প্রেরক থাকলেও প্রাপক থাকে না বার্তা সামাজিকভাবে নিজের দিকে পরিচালিত হতে পারে অর্থাৎ বার্তাগুলো সে নিজেই নেয় এবং আত্মতৃপ্তি পায় মুহূর্তে কেউ হয়তো কবি অর্থার রিমবৌদের কথা ভাবতে পারেন—‘আমি অন্য একজন কখনো কখনো একক কোনো ব্যক্তি কান্নার প্রেরক প্রাপক হতে পারে কান্নার সামাজিক যে সংকেত রয়েছে, তা সংস্কৃতিভেদে পরিবর্তিত হয় এটা ক্রন্দনকারী সাক্ষীদের ব্যক্তিগত পরিচয়, ক্ষমতা বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে

চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট ফ্রেম রয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষের অশ্রুকে ব্যাখ্যা করা যায় এজন্য তারা অশ্রুর উৎপাদন পরিমাপের জন্য রোগীর চোখ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেন আবার যখন কোনো মনোবিদ হতাশার রোগীর চিকিৎসা করেন, তখন রোগীর কান্নার বর্ণনা শুনে থাকেন কান্নার বিভিন্ন ধরনের ওপর অনেক সম্ভাবনা নির্ভর করে এদের মধ্যেও নানা পার্থক্য দেখা যায় এমন রোগীরা বলেন, আমি আগের মতো আর কান্না করি না, শরীর চোখ শুকিয়ে অসাড় হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়ের জন্য কেঁদেছি, আমি কান্নার মতো অনুভব করি কিন্তু কাঁদতে পারি না কান্না মানুষের মধ্যে গভীর বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে আবার বিতর্কিত পৃথককরণও সৃষ্টি করতে পারে এটা নির্ভর করে মূলত তারা কারা এবং তারা কীভাবে পৃথিবীতে বসবাস করবে, এটা পরস্পর শেয়ার করার মাধ্যমে

পদ্ধতিগত নিদর্শনগুলো প্রত্যাশিত বিষয়গুলো পরিবর্তন হলে অশ্রু চলে আসে এজন্য কোনো শিশু কিছু খেতে চাইলে তাকে সেটা না দিলে সে কাঁদে সম্ভবত আপনি লক্ষ করেছেন, একই সঙ্গে কান্না করা এবং গান গাওয়া প্রায় অসম্ভব গলার পেশি একসঙ্গে কান্না গানের সংকোচন-প্রসারণ করতে পারে না এজন্য দ্য ক্রাইং বুক-এর লেখক গবেষক হিদার ক্রিস্টল বলেছেন, কান্নার বিপরীত শব্দ হাসি নয় বরং গান কান্নার সময় গলা ধরে আসে, কোনো কথা পর্যন্ত বলা যায় না

মানুষ যখন বলতে পারা এবং নিজেকে পরিচালনার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়, তখনই মানুষ কান্না করে এর অর্থ এই নয় যে শেষ সীমায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত তার কথাগুলো ভালো, সত্য বা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া উচিত বরং এটা বোঝায় যে এটা মানুষের ব্রেকিং পয়েন্ট এরপর সে আর কিছু বলতে পারে না বা নিজেকে পরিচালনা করতে আর সক্ষম হয় না এটাই তার স্বাভাবিকের সর্বোচ্চ সীমা এর মানে হলো, যে কারণে অশ্রুগুলো ঝরে পড়ছে, সে বিষয়গুলোর দিয়ে মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে

গবেষক হিদার ক্রিস্টল বলেন, আমার গবেষণার বহু বছর পর এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে শারীরিক রূপক রূপে কান্নাকে বোঝার বিস্ময়কর উপায়গুলো শিখছি এটা দেখা যাচ্ছে যে অশ্রু যখন আসন্ন, তখন আপনার গলা ধরে আসছে বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন সময় আপনি শ্বাস নেয়া বা কিছু গিলে ফেলার চেষ্টা করলে পেশিগুলো তা প্রতিরোধ করে এবং বাধা দেয়ার সংবেদন তৈরি করে তবে গবেষণায় দেখেছি ধরনের পরিস্থিতি পরিবর্তন করা সম্ভব থামার জায়গা বা সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে নয় বরং উত্তরণের পথ হিসেবে যদি কান্নার দিকে আপনি নজর দিতে পারেন, তবেই সে অশ্রু আপনি বুঝতে পারবেন আনন্দ, নিপীড়ন, শোক, সৌন্দর্য হিংস্রতা বোঝার জন্য কান্না একটা অনেক বড় অবলম্বন

 

সূত্র: গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন