বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম টি২০ আজ

ইতিহাস বদলানোর চ্যালেঞ্জ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অনিশ্চয়তার মেঘ সরিয়ে আজ পাকিস্তানের মাটিতে ১২ বছর পর ক্রিকেট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা ইস্যুতে টাইগারদের সফর আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা ছিল কয়েক দিন আগেও। তবে দুবাইয়ে দুই বোর্ডপ্রধানের বৈঠকের মধ্য দিয়ে দূর হয়ে যায় সব অনিশ্চয়তা। তিন দফায় সফরের সূচিও নির্ধারিত হয় সে বৈঠকে। প্রথম দফায় বাংলাদেশ খেলবে তিনটি টি২০ ম্যাচ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচটি আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায়। একই মাঠে আগামীকাল সোমবার পরের দুটি ম্যাচ খেলবে দুই দল।

এর আগে পাকিস্তানের মাটিতে একটি টি২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যাতে হারতে হয়েছিল ১০২ রানের বিশাল ব্যবধানে। পাকিস্তানের মাটিতে এখন পর্যন্ত কোনো ফরম্যাটে জয়ের মুখ দেখেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

টি২০ র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল পাকিস্তান। অন্যদিকে বাংলাদেশ নম্বরে। তবে শীর্ষে থাকলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একেবারেই ভালো নয়। সর্বশেষ সাত ম্যাচের ছয়টিতেই হেরেছে তারা। অন্যটি পরিত্যক্ত হয়েছে। শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে - ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে তারা। পাকিস্তানের এমন দুরবস্থায় এখন আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে।

তবে বাংলাদেশের অবস্থাও যে খুব ভালো তা নয়। বাংলাদেশ সর্বশেষ তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছে ভারতে। যেখানে প্রথম ম্যাচে জিতলেও পরের দুই ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সিরিজ হাতছাড়া করে টাইগাররা। এর আগে জিম্বাবুয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ফাইনালে উঠলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। তার ওপর সফরে নেই দলের সেরা তারকাদের অনেকেই। 

নিষেধাজ্ঞায় এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন সাকিব আল হাসান। ভারত সফরে বাংলাদেশের একমাত্র জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই মুশফিকও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন পাকিস্তান সফর থেকে। মূলত পাকিস্তানে খেলাকে নিরাপদ মনে করছেন না দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সাকিব-মুশফিক না থাকায় দলের অভিজ্ঞতার অভাবটা সুস্পষ্ট। দুজনই প্রমাণিত ম্যাচ উইনার। তাদের অনুপস্থিতিতে তরুণদের হাতেই থাকবে আলোর মশাল। সদ্য শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও তরুণ তুর্কিদের পারফরম্যান্স ছিল আশাজাগানিয়া। লিটন দাস, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন রানের ধারায়। বল হাতে রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান, হাসান মাহমুদরা ছিলেন উজ্জ্বল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে তরুণদের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই।

অবশ্য তারুণ্যই কেবল নয়, অভিজ্ঞদেরও দায়িত্ব নিতে হবে সামনে থেকে। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের ফেরা বাংলাদেশের টপঅর্ডারে বাড়তি শক্তি জোগাবে। ফর্মে আছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও। বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর মুস্তাফিজুর রহমানের ছন্দে ফেরা। বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। শুরুর দিকে খুব একটা ছন্দে দেখা না গেলেও ধীরে ধীরে নিজের সেরাটা খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য সাফল্যের টনিক হতে পারে ঐক্যবদ্ধ পারফরম্যান্স। দেশ ছাড়ার আগে ক্রিকেট  পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানও বলেছেন একই কথা। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভালো কিছু করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী আমাদের দল ভালো ক্রিকেট খেলবে এবং আমরা সিরিজ জিতব।

বিপরীতে পাকিস্তান এখন মরিয়া জয়ে ফিরতে। শীর্ষে থাকা দলটি দ্রুত নিজেদের দুরবস্থা ঘোচাতে চাইছে। যে কারণে তারা সিরিজে দলে ফিরিয়েছে অভিজ্ঞ দুই তারকা শোয়েব মালিক মোহাম্মদ হাফিজকে। মালিক বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দারুণ ছন্দে ছিলেন। পাশাপাশি পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তবে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে পেস আক্রমণ নিয়ে। বিশেষ করে সিরিজে সবার চোখ থাকবে পেসার হারিস রউফের দিকে। বিগ ব্যাশে ১৫০ কিমি গতির উপরে বল করে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছেন তিনি। সঙ্গে আরেক পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিও আছেন ভালো ছন্দে। লেগ স্পিনের মাঝের ওভারগুলোতে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন শাদাব খানও।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের লড়াইটা করতে হবে মানসিকভাবেও। কঠোর নিরাপত্তার কারণে সবসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। তাই মুখে বললেও নিরাপত্তা ইস্যু মন থেকে ঝেড়ে ফেলা একেবারে সহজ হবে না। তবে চাপকে জয় করে ক্রিকেটাররা যেন সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে পারেনএমনটাই প্রত্যাশা থাকবে সমর্থকদের। 

এদিকে মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানও পাকিস্তানের পক্ষে। যেখানে ১০ ম্যাচ খেলে তার আটটিতেই জিতেছে তারা। বাংলাদেশের জয় দুই ম্যাচে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন