নওগাঁয় চিকিৎসকের ভুলে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নওগাঁ

নওগাঁয় চিকিৎসকের ভুলে রাজিয়া সুলতানা (২৭) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার দুপুরে শহরের পার-নওগাঁয় বেসরকারিনওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতিহাসপাতালে ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর চিকিৎসক নার্স ওই নারীর মরদেহ অপারেশন টেবিলে রেখেই পালিয়ে যান। রাজিয়া সুলতানা শহরের চকরামপুর এলাকার মারুফ হোসেনের স্ত্রী।

প্রসূতির পরিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজিয়া সুলতানা সন্তান প্রসবের জন্য বুধবার সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় প্রসূতির সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যানেসথেসিস্ট ডা. মাসুদ আলীর সহযোগিতায় গাইনি চিকিৎসক ডা. আঞ্জুমান আরা সিজারিয়ান অপারেশন করেন। অস্ত্রোপচারে প্রসূতি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির ব্যাপক হারে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারায় প্রায় ঘণ্টা পর অপারেশন টেবিলেই প্রসূতি মারা যান। অবস্থায় অপারেশন টেবিলে মরদেহ রেখেই চিকিৎসক নার্স পালিয়ে যান।

এদিকে দীর্ঘ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে প্রসূতিকে নিয়ে না আসায় স্বজনরা দেখতে যান। অপারেশন থিয়েটারে সময় কেউ ছিলেন না এবং অপারেশন টেবিলে প্রসূতি অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে নিহতের স্বজন এলাকাবাসী হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়। বেলা ২টার দিকে পুলিশ ওই ক্লিনিকে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

নিহতের স্বামী মারুফ হোসেন বলেন, সন্তান প্রসবের জন্য বাড়ি থেকে সুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। দীর্ঘ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে আমার স্ত্রীকে বাইরে না আনায় সন্দেহ হয়। কেন দেরি হচ্ছে জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি কোনো চিকিৎসক নেই। স্ত্রীর মরদেহ অপারেশন টেবিলে পড়ে রয়েছে।

ব্যাপারে গাইনি চিকিৎসক ডা. আঞ্জুমান আরার সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তার সেলফোনে কল খুদেবার্তা দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ওই ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মাসুদ আলী দেওয়ান বলেন, আমি শুধু প্রসূতিকে অজ্ঞান করেছি। অপারেশন বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ডেপুটি সিভিল সার্জনসহ দুজনকে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগী মারা যায় বলে জানা গেছে। ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে চিকিৎসায় ভুলের কারণে প্রসূতির মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছিল। কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে রোগীর স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন