খ্রিস্টধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উদযাপনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়াতেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। কিন্তু অ্যান্ড্রু ও’ডায়ারের ছোট্ট মেয়েটি জানে না এবারের বড়দিনে বাবা তার জন্য উপহার নিয়ে আসবে না, কোলে তুলে আদর করবে না। নবদম্পতিরা তাদের জীবনের এই দিনের বিশেষ মুহূর্তগুলো অ্যান্ড্রুর ক্যামেরায় ধরে রাখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তারা জেনে গেছেন এ অপেক্ষা পালা আর শেষ হবার নয়!
বড়দিনের মাত্র পাঁচদিন আগে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন হর্সলে পার্ক ফায়ার ব্রিগেডের ডেপুটি ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রু ও’ডায়ার ও জিওফ্রে কিটন । ভয়াবহ দাবানল থেকে শত শত মানুষকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা। কিন্তু নিজেরা আর ফেরেননি।
আগুনের লেলিহান শিখার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন এক স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী। অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের সংবাদগুলোতে এমন ছবি হয়ত সবার নজরে পড়ে থাকবে। ওই ছবির ব্যক্তিটি হলেন ডেনিয়েল কেনক্স। যখন তার ছবিটি তোলা হচ্ছিল তিনি কেবল তখন টানা ১৫ ঘণ্টা শিফট শেষ করে ফিরছিলেন। তার কাছে এই কাজ পেশা নয় নেশা।
অ্যান্ড্রু ও’ডায়ারের সাহচর্যে পাঁচ বছর আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্বেচ্ছাসেবায় যোগ দেয়া কেনক্স বলেন, ‘অ্যান্ড্রু ছিলেন আমার ভাইয়ের মতো। আমি ভুল করলে রাগারাগি না করে শুধরে দিতেন। তার ছায়ায় আমি বেড়ে উঠেছি। ফুটবল আর ফটোগ্রাফিতেও তিনি আমাকে উৎসাহ দিতেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ সবসময় আমাদের কাজ বুঝতে চায় না। আমরা যে কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি- এটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য।’
নিউ সাউথ ওয়েলস রুরাল ফায়ার সার্ভিস (এনএসডব্লিউ আরএফএস), বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবক দমকল সংগঠন’ বলে মনে করা হয়।এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ছাড়া প্রশিক্ষিত এই কর্মীবাহিনী বহুদিন ধরে বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বরের পর থেকে, এনএসডব্লিউ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার দমকল কর্মী দাবানল নিয়ন্ত্রণে নিরলস পরিশ্রম করেছে। যাদের ৯০ শতাংশই এ কাজের বিনিময়ে বেতন নেন না। সদস্যরা বেশিরভাগ নিজ নিজ এলাকার হয়ে কাজ করেন। সরকারি পৃষ্ঠেপোষকতায় চলে এ সংগঠনের কার্যক্রম।
প্রায় শত বছরের এ ঐতিহ্য চালু রয়েছে ভিক্টোরিয়া, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার এসব রাজ্যে গ্রীষ্মকালে হরহামেশাই দাবানল ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাসমানিয়া এবং আধা ঊষ্ণমণ্ডলীয় এলাকা কুইন্সল্যান্ডেও দাবানলের ঘটনা ঘটছে।
এনএসডব্লিউয়ের ২ হাজার ব্রিগেডের বেশিরভাগই মফস্বল শহর বা গ্রামীণ কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে আছে। সদস্যরা সাধাণত স্থানীয় বাসিন্দা। প্রয়োজনের সময় সব ফেলে তারা তাদের কমিউনিটির লোকদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন। এটিই এখানকার ঐতিহ্য।