অপ্রিয় হলেও সত্য যে বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষার হার জ্যামিতিক গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। আমরা প্রায়ই মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়াকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু একটি কথা ভুলে যাই, এসব দেশ বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এতটা চমকপ্রদ উন্নয়ন অর্জন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে কিন্তু এখনো জনসম্পদের দক্ষতা দুর্বল রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডির এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিল্পভেদে অদক্ষ কর্মীর হার ৭৩ দশমিক ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ। উদ্বেগের বিষয়, দেশে শিক্ষিত মানুষ বাড়লেও জ্যামিতিক হারে বাড়ছে অদক্ষ শ্রমশক্তি। প্রথাগত শিক্ষায় কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনসম্পদ তৈরি তো হচ্ছেই না, অফিশিয়াল চিঠি, ই-মেইল ও অফার লেটার আদান-প্রদানের মতো বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমশক্তিও তৈরি হচ্ছে না। এ কারণে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষিতরা যেমন চাকরি পাচ্ছেন না, তেমনি চাকরিদাতারাও দেশে যোগ্য লোক না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিদেশীদের নিয়োগ দিচ্ছেন বেশি বেতনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। কারণ ব্যক্তির অদক্ষতায় রাষ্ট্রেরই ক্ষতি বেশি। অদক্ষ কর্মীর কারণে উৎপাদনশীলতা কমছে, যার প্রভাব পড়ছে আমাদের জাতীয় উৎপাদনে। আগামীতে আমরা শিল্পায়নের যে স্বপ্ন দেখছি, তা-ও বাধাগ্রস্ত হবে অদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ জনশক্তির কারণে।
দেশের বিপুল কর্মক্ষম ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সময়োপযোগী মানবসম্পদে পরিণত করার দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের। খাতওয়ারি মানবসম্পদ প্রয়োজন। বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারলে ‘সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান বাস্তবতার মুখ দেখবে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের কার্যক্রমের আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের সব কর্মজীবীকে আনতে হবে। এ প্রয়োজন মেটাতে এবং সময়োপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়’ করা যেতে পারে। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নত দেশ গড়তে জনশক্তিকে মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী মালয়েশিয়া সৃষ্টি করেছে ‘মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়’। তাদের শ্রম মন্ত্রণালয় নেই। শ্রমিক নিয়ে নয়, তারা মাথা ঘামাচ্ছে মানবসম্পদ তৈরিতে। বহু বিদেশীর কর্মসংস্থান হয়েছে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু মালয়েশিয়া কর্মী নেয়ার আগে শর্ত দেয়, তারা খাতওয়ারি দক্ষ জনশক্তি চায়। ঢালাও শ্রমের ভিত্তিতে নয়, বরং দক্ষতার ভিত্তিতে জনশক্তিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করছে তারা। উন্নত দেশের আরেক রোল মডেল সিঙ্গাপুর। শ্রম মন্ত্রণালয় বলে কোনো মন্ত্রণালয় নেই সে দেশে। এ-জাতীয় সব কাজ করে ‘জনশক্তি মন্ত্রণালয়’। তারা কি তাদের মন্ত্রণালয়ের নাম শ্রম মন্ত্রণালয় রাখতে পারত না? এক্ষেত্রে মজ্জাগত একটি পরিবর্তন এসেছে তাদের মধ্যে। কর্মক্ষম মানুষকে তারা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে, শ্রমিক নয়। এতে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয় তা হলো, কর্মজীবীদের জন্য যে অভিধাই ব্যবহার করা হোক না কেন, সিঙ্গাপুর চায় দক্ষ মানবসম্পদ। জনশক্তিতে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ প্রজাতান্ত্রিক চীনের দিকে তাকালেও সময়োপযোগী মন্ত্রণালয়ের ধারণা পাওয়া যায়। চীনেও শ্রম মন্ত্রণালয় বলে কোনো মন্ত্রণালয় নেই। কিন্তু একই ধারণার আধুনিকোত্তর রূপ নিয়ে কাজ করে দেশটির ‘মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়’। জাতীয়
- কারখানার তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ: গবেষণার যে জ্ঞান কাজে লাগাতে অনীহা
- আমাদের যেন ঋণ এনে ঋণ পরিশোধ করতে না হয়
- বোরোর হিট স্ট্রোক মোকাবেলায় করণীয়
- তথ্যের অসংগতি সঠিক নীতি গ্রহণের পথে অন্তরায়
- পারিবারিক ব্যবসা টেকসই না হওয়ার মূলে রয়েছে কাঠামোগত সমস্যা
- ম্যালেরিয়ার বাহক নিয়ন্ত্রণে গবেষণা জোরদার করা প্রয়োজন