মেক্সিকোতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেন ইভো মোরালেস

বণিক বার্তা অনলাইন

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ইভো মোরালেস এবার মেক্সিকোর রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

সোমবার মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো এবরার্ড গণমাধ্যমকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মোরালেসের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ছিল। যে কারণে মেক্সিকো তাকে আশ্রয় দিয়েছে।

গত রোববার ক্ষমতাসীন দলের জোট থেকে অন্য দলগুলো সরে যাওয়ার পরে মোরালেসের সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এসময় সেই দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মোরালেসকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। এর কিছু সময় পরেই টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মোরালেস পদত্যাগের কথা জানান বিশ্ববাসীকে।

বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট মোরালেস গত মাসে তার বিতর্কিত পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন। ২০ অক্টোবরের নির্বাচনে ‘সুস্পষ্ট কারচুপি’র প্রমাণ পাওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা রোববার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার আহ্বান জানায়।

নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ইভো মোরালেস পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন—এমন অভিযোগ থেকে তিন সপ্তাহ আগে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রথমে তার প্রতি অনুগত থাকলেও পরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর গত রোববার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মোরালেস পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

একটি টেলিভিশন বক্তৃতায় প্রায় ১৪ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মোরালেস জানান, তিনি দেশের কল্যাণের স্বার্থে পদত্যাগ করছেন। তবে বিরোধীদের দিকে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারী মহল আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।

মোরালেসের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেসা বলেন, ‘বলিভিয়ার মানুষ বিশ্বকে একটি শিক্ষা দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বলিভিয়া হবে নতুন এক দেশ।’ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান উইলিয়াম কালিমান সাংবাদিকদের বলেন, বিক্ষোভ প্রশমনে এবং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।

দেশে বিশৃঙ্খলা চলার মধ্যে বলিভিয়ার আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ২০ জনের একটি দল মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে আশ্রয় নেয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মেক্সিকো ঘোষণা দেয়, প্রয়োজনে মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে তারা।

টেলিভিশনে ভাষণের পর টুইটে মোরালেস বলেন, তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ‘সহিংস একটি দল’ তার বাড়িতে হামলা করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও বলিভিয়ার পুলিশপ্রধান বলেছেন, ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রথম প্রেসিডেন্ট মোরালেস ১৪ বছর ধরে একটানা বলিভিয়ার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার আমলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে এবং বলিভিয়ার দারিদ্রের হার কমে অর্ধেকে নেমে আসে। তার পরও চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকের পাশাপাশি নিজ মিত্রদের অনেকের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়। মেয়াদসীমা বৃদ্ধির পক্ষে-বিপক্ষে ২০১৬ সালে আয়োজিত গণভোটে অধিকাংশ বলিভিয়ান ‘না’ ভোট দেয়। কিন্তু মোরালেসের দল বিষয়টিকে সাংবিধানিক আদালতে নিয়ে যায় এবং মেয়াদসীমা একেবারে বাতিল করে দেয়।

সূত্র: বিবিসি

বিক্ষোভের মুখে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন